[একটি বিশাল বিপনি বিতানের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট মেয়ে জবু তার মা রিতা আক্তারকে বলছে।]
জবুঃ মা, মা, দেহো, দেহো! কত্ত বড় মার্কেট!
রিতাঃ [মার্কেটের দিকে তাকিয়ে] হ, মেলা বড় মার্কেট!
জবুঃ [মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে টানতে টানতে] মা, মা, চলো না তুমি আমারে এই মার্কেট থাইক্কা ড্রেস কিন্না দেও না! পয়লা বৈশাখের দিন আমি হেই ড্রেস পরুম! দেও না!
রিতাঃ না! চল তোরে ঐ রাস্তার লগের হকার্স মার্কেট থাইক্কা একটা সুন্দর রং চইঙ্গা ড্রেস কিন্না দিমু, চল!
জবুঃ [কান্নাজড়িত কণ্ঠে] না, না, না, হেইবারও তুমি ঐ হকার্স মার্কেট থাইক্কা ড্রেস কিন্না দিছিলা, দুইদিন যাইতে না যাইতেই ড্রেস ছিঁড়রা বিড়রা তেনা হইয়া গেছে!
রিতাঃ বড় মার্কেট থাইক্কা ড্রেস কিন্না দেওনের মতন এতো টেকা কি আর আমরার আছে ক? তুইতো ভালা কইরাই জানস যে তোর বাপে রিক্সা চালায়। হারাদিন রিক্সা চালাইয়া কতো টেকা রোজগার অয় ক? তোর এক ড্রেসের পিছে যদি এতো টেকা খরচা হইয়া যায়, তাইলে মাসের খরচা কেমনে হইবো একটু চিন্তা কইরা দেখ?
জবুঃ [কাঁদতে কাঁদতে] না, না, না, আমি কিচ্ছু জানি না! আমারে ঐ মার্কেট থাইক্কাই ড্রেস কিন্না দিতে হইবো কইয়া দিলাম। নাইলে কিন্তু আমি ড্রেস পরুম না!
রিতাঃ [কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিরক্ত হয়ে] উফ! বাপ রে বাপ! এই পাগলী মাইয়াডারে লইয়াতো মেলা ঝামেলায় পড়লাম দেহি! এমনেই মেলা দেরী হইয়া গেছে! চল, জলদি হকার্স মার্কেট যাইতে হইবো, চল।
জবুঃ [রিতা হাত ধরে জোরে টানতে থাকে কিন্তু জবু কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পড়ে গিয়ে বলে] আমি হকার্স মার্কেট যামু না! আমি এই বড় মার্কেটে যাইতে চাই।
রিতাঃ হায়রে আল্লাহ্! আমারে তুমি রক্ষা করো! এই মাইয়াডারে যে আমি কেমনে বুঝাই?
[এমন সময় মার্কেটের সামনে একটি বিলাসবহুল গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে মা লুবনা জেফরিন তার ছোট ছেলে আয়মানকে নিয়ে নামেন।]
লুবনাঃ [রিতাকে লক্ষ্য করে বলেন] এই মেয়ে, কি হয়েছে? ছোট মেয়েটি কে? ও এভাবে কাঁদছে কেন?
রিতাঃ এইডা আমার মাইয়া, জবু। হে জিদ ধরছে যে এই মার্কেট থাইক্কা ড্রেস কিন্না না দিলে নাকি হে পয়লা বৈশাখের দিন অন্য সস্তা কুনো ড্রেস পড়তো না! আমি তারে মেলা বুঝাইয়া কইছি যে এতো আমার কাছে এতো টেকা নাই। এতো দাম দিয়া এই মার্কেট থাইক্কা ড্রেস কিন্না দিবার ক্ষেমতা আমার নাই। কিন্তু মাইয়াডা লড়েও না, চড়েও না! রাস্তাত পইড়া পাগলীর লাহান কান্তাছে আর কান্তাছে!
[লুবনা আর কোনও কথা না বলে কান্নারত জবুর দিকে তাকিয়ে ছেলে আয়মানকে নিয়ে মার্কেটের ভিতরে প্রবেশ করেন। অর্থাৎ মঞ্চ ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর লুবনা ও আয়মান কয়েকটি ব্যাগ হাতে মঞ্চে প্রবেশ করে। তখনও রিতা ও জবু একই স্থানে বিদ্যমান। জবুর শখ পূরণ করতে না পারার দুঃখে রিতাও কাঁদছে।]
লুবনাঃ কি ব্যাপার? তোমরা এখনও এখানে আছো? ঘরে যাবে না?
রিতাঃ [কাঁদতে কাঁদতে বলে] ঘরে কেমনে যামু কন? মাইয়াডা এই জাগা থেইক্কা এক ইঞ্চিও লড়তাছে না!
লুবনাঃ [একটি ব্যাগ রিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন] এই নাও, এই ব্যাগে একটা সুন্দর ড্রেস আছে। এটা তোমার মেয়েকে দিও।
[এ কথা শুনে জবু কান্না থামিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ঐ ব্যাগের দিকে তাকায়।]
আয়মানঃ কিন্তু মা তুমিতো এই ড্রেসটা আমার ছোট বোন ইরার জন্য কিনেছো।
লুবনাঃ [মায়াভরে কণ্ঠে আয়মানকে বুঝিয়ে বলেন] হ্যাঁ, আয়মান, তুমি ঠিকই বলেছো। সমস্যা কি বাবা? আমি না হয় তোমার বোনকে আরেকটা সুন্দর ড্রেস কিনে দেবো।
রিতাঃ [কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে বলে] না ম্যাডাম, না, আমরা গরীব হইতে পারি, তয় ভিক্ষা করি না। এই ড্রেস আমি নিতে পারুম না।
লুবনাঃ আরে বাবা নাও না, এটাকে ভিক্ষা মনে করছো কেন? মনে করো তোমার জবুকে আমি একটা উপহার দিয়েছি। উপহার হিসেবে নাও অন্তত, ধরো!
রিতাঃ [ইতস্তত বোধ করে ড্রেসটা হাতে নেয়] আফনের এই ঋণ যে আমি কেমনে শোধ করুম আমি জানি না!
লুবনাঃ কিসের ঋণ? কোনও কিছু শোধ করতে হবে না! [জবুর হাত ধরে মাটি থেকে উঠিয়ে বলেন] কি, জবু, এবার খুশীতো? [রিতাকে বলেন] যাও এবার তোমার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও।
রিতাঃ আল্লাহ্ আফনারে আর আফনার পরিবারের বেবাকরে সুখে শান্তিতে রাখক আমি মন থাইক্কা এই দুয়া করি।
[লুবনা ও আয়মান মুচকি হাসতে হাসতে মঞ্চ ত্যাগ করে।]
রিতাঃ [জবুর মাথায় হাত বুলিয়ে হাসতে হাসতে খুশীতে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে] চল মা জবু, বাড়িত চল। এই ল তোর সুন্দর ড্রেস। এইবার খুশী হইছসতো? চল!
[রিতা ধীরে ধীরে মঞ্চ ত্যাগ করতে থাকে।]
জবুঃ [খুশীতে লাফিয়ে লাফিয়ে মায়ের পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলে] হে, হে, হে, কি মজা রে! পয়লা বৈশাখে আমি নতুন ড্রেস পরুম রে! কি মজা রে!
[রিতা ও জবু মঞ্চ ত্যাগ করে।]
সমাপ্ত