মানবতার ঋণ [Bangla Story]

        হানিফ ঋণের ভারে আকণ্ঠ জর্জরিত। সবসময় তার মনে হয় কেউ যেন তার পিঠে পুরো হিমালয় বেঁধে দিয়েছে! তার ঋণের বোঝার কাছে গ্রীক পুরাণের সিসিফাসের সেই পাথরের ভার যেন নস্যি!

 

        গত বছর ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে নিজে চালানোর জন্য একটি সেকেন্ড হ্যান্ড সি এন জি ট্যাক্সি কিনেছে এবং বাকি টাকা তার একমাত্র ছোট বোন ডুমুরের বিয়েটা সম্পন্ন করেছে। এতো দুশ্চিন্তার মাঝখানেও স্বস্তির জায়গা এই যে ভালমতোই তার বোনটিকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া গেছে।

 

        যে ট্যাক্সি সে নিজে চালায়, সেটি থেকে প্রতিদিন গড়ে বেশ ভালো টাকাই উপার্জন হয়। কিন্তু তার জন্য যে দুর্ভাগ্য উপস্থিত হতে যাচ্ছে, তার সম্পর্কে হানিফের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, থাকার কথাও নয়। দুর্ভাগ্য অনেকটা ভূমিকম্পের মতই, সেটি যে কখন কার দরজায় ঠকঠক করে উপস্থিত হয় তার কোনও ঠিকঠিকানা নেই!

 

        একদিন যথারীতি আম্বরখানা থেকে ট্যাক্সি চালিয়ে গোলাপগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। মেঘের রং এতো কালো যে দেখে মনে হয় কেউ টায়ার পোড়াচ্ছে! বৃষ্টির ভারী ভারী ফোঁটায় ট্যাক্সির গ্লাস ভিজতেই থাকে। যদিও হানিফ বেশ সাবধানতার সাথে চালাচ্ছে তবুও পেছনে বসা একজন যাত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

 

- ভাই, বৃষ্টির ঝাঁপটায় আপনার ট্যাক্সির কাঁচতো একেবারে অস্পষ্ট হয়ে গেছে। সামনে থেকে কোনও গাড়ি আসলে সেটি ঠিকমত দেখতে পাবেনতো?


- জি, জি, আমি সব স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আল্লাহ্‌র রহমতে কোনও সমস্যা হবে না।


- ভাই, একটু দেখেশুনে সাবধানে চালান।


- জি অবশ্যই!

 

        বৃষ্টি বাড়ে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে উদ্দাম বাতাস! ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের মতন যেন বৃষ্টি আর বাতাসের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে; কে আজ কাকে হারাবে?

 

        হানিফ দুই সেকেন্ডের জন্য রাস্তার বাম পাশে ফুটে থাকা সহস্র শাপলা ফুলের বিলে তাকাতেই সামনে থেকে আসা একটি ট্রাক ট্যাক্সিটিকে দুমড়ে মুচড়ে চলে যায়। যেন একটি পাগলা বুনো হাতি তার সামনে এসে পড়া কৃষকটিকে তার প্রকাণ্ড ভারী পায়ের চাপে পিষ্ট করে ঝোপের আড়ালে অশরীরীর মতন মিলিয়ে গেছে! সেই ট্রাক চালকেরতো উচিত ছিল যে গাড়িটি থামিয়ে ট্যাক্সিটির কাছে এসে দেখা যে কেউ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, যদি কারো দেহে তখনও প্রাণ থাকে তবে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।   

 

        শাপলা ফুলগুলো ঠিকই সেই আগের মতই আছে; সেগুলো যথারীতি সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। এইমাত্র ঘটে যাওয়া ভয়ানক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সৌন্দর্যকে একটুও ম্লান করেনি ঠিকই তবে মানবতার সৌন্দর্যে আরেকটি কলঙ্কের দাগ পড়েছে এ কথা হলফ করেই বলা যায়!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: