ইফতার পার্টির তারিখ নির্ধারণ হয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। পার্টির দিনের দুই দিন পূর্বে কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপক জনাব সিদ্দিকুর রহমান বিভাগীয় প্রধান জাবেদ আহমেদকে বলেন,
- আমি আগামী পরশু দিনের ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে পারবো না।
- আপনিতো বলেছেন থাকবেন, এখন কি এমন হলো যে থাকতে পারবেন না?
- আছে, কারণ আছে।
- আপনারা যদি এমন করেন তাহলেতো হবে না!
- কেমন করেছি, আমার কি সমস্যা থাকতে পারে না?
- যেদিন ইফতার পার্টির জন্য তারিখ নির্ধারিত হলো, সেইদিন আপনি সেই সভায় ছিলেন, এখন হুট করে বলছেন থাকতে পারবেন না! আপনার যদি কোনও সমস্যা থাকতো, তাহলে আগেই বলতে পারতেন; তারিখ পরিবর্তন করে দেয়া যেত!
- আহা! আপনি বিষয়টিকে এতো গম্ভীরভাবে নিচ্ছেন কেন?
- গম্ভীরভাবে নেবো না তো কিভাবে নেবো?
- কোনও পার্টিতে কি কেউ না কেউ কোনও অপরিহার্য প্রয়োজনে অনুপস্থিত থাকতে পারে না? এটা কি অস্বাভাবিক কিছু?
- তা ঠিকই বলেছেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই যে আপনি না গেলে দেখা যাবে আরও দুয়েকজন এসে বলবে যে তারাও যাবেন না। আবার এমনও হতে পারে যে তারা না জানিয়েই ঐ দিন অনুপস্থিত থাকবেন!
- দেখুন, সেটাতো আমার দেখার বিষয় নয়! কে যাবে না যাবে সেটা একান্তই ব্যক্তিগত। আমি ভাবলাম যে এটা আমার দায়িত্ব আপনাকে আগে থেকে বলে রাখা যে আমি ইফতার পার্টিতে যেতে পারবো না।
- আপনার যা খুশী হয় তাই করেন!
সিদ্দিক সাহেব মুখ বেজার করে চলে গেলে তার শুভাকাঙ্ক্ষী আরেকজন শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে প্রবেশ করে বলেন,
- স্যার, কিছু মনে করবেন না, আমাকে কাল ঢাকা যেতে হবে। তাই শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকতে পারবো না।
- একটু আগে সিদ্দিক সাহেব বলে গেলেন যে তিনি থাকতে পারবেন না, এখন আপনিও ঐ সুরেই কথা বলছেন! আপনি না গেলে দেখা যাবে আপনার প্রিয় দুই ম্যাডামরাও যাবেন না! তাহলে এই ইফতার পার্টির কি কোনও মানে থাকবে?
- স্যার, কিছু মনে করবেন না, আপনাকে সম্মান করি বলে আমাকে আপনি যা খুশী বলতে পারেন না!
- কি বলেছি আপনাকে?
- এই যে বললেন আমি না গেলে দুইজন ম্যাডামও নাকি যাবেন না!
- হ্যাঁ, বলেছি, তা এতে ভুলটা কোথায়?
- এটা বলে কি আপনি আমাকে অপমানিত করেননি?
- এখানে অপমানের কি হয়েছে?
- এই কথা বলে আপনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ঐ ম্যাডামদের সাথে আমার দহরমমহরম আছে! আমি না গেলে তারা যাবে না এটা আপনি একশো ভাগ নিশ্চিত হয়ে বলেন কি করে? আপনার কথায় একটা অশ্লীল ইঙ্গিত আছে এবং সেটা একটি বাচ্চাও বুঝবে।
- এখন আপনার কাছ থেকে আমাকে ব্যবহার শিখতে হবে নাকি?
- হ্যাঁ, আমারতো তাই মনে হয়! কাকে কি বলতে হয় তা অবশ্যই আপনার শেখা উচিত!
- এখনি বের হ! ব্যাটা বদের বদ!
- প্লিজ স্যার, মুখ সামলে কথা বলুন! আপনি এমন অসভ্য ভাষায় কথা বললে কিন্তু আমিও বলবো!
- চুপ! বের হয়ে যা এখান থেকে! তোদের কাউকেই ইফতার পার্টিতে যাবার দরকার নেই!
- তুই চুপ কর! অযোগ্য লোক কোথাকার!
দুজনকে এমন অপ্রত্যাশিতভাবে তর্ক করতে শুনে অন্য সহকর্মীরা বিদ্যুতের মতন গতিতে ছুটে আসেন। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে তাতে মনে হচ্ছে যে সহকর্মীরা আসতে আরেকটু দেরী করলেই হাতাহাতি হয়ে যেতো। ইমতিয়াজকে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যাবার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর আর কারো মুখেই ইফতার পার্টির কথা ভুলেও উচ্চারিত হয় না!