কষ্টের পাঁচালী [অণু গল্প: Bangla Flash Fiction]

এমনিতেই তিন সন্তানের সংসারে অভাব অনটনের কোনও শেষ নেই, তার উপর ১১ মাস বয়সী শিশু আলেয়া এডিস মশাবাহিত ও ভাইরাসজনিত সংক্রামক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা!


জরিনার স্বামী আখলুস মিয়া রিক্সা চালায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভীষণ বিপদে পড়েছে। দুবেলা খাবার জো নেই, তার উপর আলেয়ার চিকিৎসার খরচ সামলাতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক রাতে শুধু আলুভর্তা আর সাদা ভাত মুখে দিতে দিতে আখলুস জরিনাকে বলে,


- তুই যেই ঘরে কাম করস, হেই ঘরের মালিক বেডির কাছ থাইক্কা কিছু টেহা ধার লসনা।


- বেডির মেজাজ যে খিটখিট্টা! কয়েকদিন আগে ৫০০ টেহা ধার চাইছিলাম, বেডি একদম ভাঁজা কাডির লাহান গরম হইয়া আমার মুহের উপর কইয়া দিলো, “আমি এক টাকাও ধার দিতে পারবো না!” এমুন বদমেজাজি বেডির কাছে আমি আর কুন সাহসে টেহা ধার চামু? পরে বেডি আরও রাইজ্ঞা গেলে আমারে ফুটবলের লাহান বাসা থাইক্কা বাইর কইরা দিবো। হেষে আমার চাকরিডাও যাইবো!


- কি যে করুম, মাথায় কিছুই ধরতাছে না! সংসারে এতো খরচ! আগুনের লাহান জ্বরে ছুডো মাইয়াডার গা এক্কেরে পুইড়া যাইতাছে। সময় মতন চিকিৎসা করতে না পারলে মাইয়াডারে আর বাঁচাইতে পারুম নারে জরিনা, বাঁচাইতে পারুম না! না, ঘরে বইয়া থাকলে হইবো না, বাইরে গিয়া দেহি কুনো সমাধান করতে পারি কিনা।


- এই আলেয়ার বাপ, করো কি! ভাতডা খাইয়া যাও!


- না, মাথায় এত্ত চিন্তা লইয়া ভাত খাওন যায় না। আমি গেলাম।


জরিনা সারারাত আখলুসের অপেক্ষায় কাটিয়ে দেয়। এদিকে সাদা রোদে ছেয়ে গেছে চারপাশ। আলেয়ার শরীর আরও বেশী খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তারগণ তাদের চেষ্টার কোনও ত্রুটি করেননি; নিষ্পাপ শিশু আলেয়া শুক্রবার দুপুরের আজানের সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।


এদিকে এক মাস গত হয়েছে। এখনো আখলুসের কোনও খবর নেই। পাড়া-প্রতিবেশীরা এই কানাকানি করছে যে আখলুস হয়তো পরকীয়ায় জড়িয়ে অন্য কোথাও নতুন সংসার শুরু করেছে। কেউ বলছে যে হয়তো তার মৃত্যু হয়েছে ইত্যাদি। জরিনার কানে এসবই আসে, তবে এসবের কোনওটাই তার বিশ্বাস হয় না। সে এখনো উঠোনে বসে গ্রামের কাঁচা রাস্তার দিকে বকের মতন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে এই আশায় যে একদিন না একদিন তার আখলুস হাসি মুখে রিক্সা চালাতে চালাতে ঘরে ফিরে আসবে!

View kingofwords's Full Portfolio