ইংরেজি নয়, নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা চাই!

হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই পড়ছেন- “ইংরেজি নয়, নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা চাই!” এটাই আমার এই প্রবন্ধের শিরোনাম! এখনই সময় একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের ভাষা সৃষ্টি করে সেটাকে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া!

 

ভাষা কোনো জাতি বা দেশের উপর চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয় ভাষা হচ্ছে মন থেকে মেনে নেবার বিষয় ১৯৫২ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু সাহসী বাঙালিরা এই অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন করার নিমিত্তে সাহসিকতার সাথে রাজপথে নেমেছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো অনেকে পাক-হানাদার বাহিনীর বুলেটকে উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার তরে, বাংলা ভাষার মায়ায়, বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসায় অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন   

 

২১শে ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রসঙ্গক্রমে এখানে টেনে এনেছি কারণ বাংলাকে হটিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়টি তৎকালীন বাঙালিরা ন্যায্য যথার্থভাবেই মেনে নেননি কোনো জাতিই এমন অন্যায় মেনে নিতে পারে না! ১৭ নভেম্বার ১৯৯৯ [৩০সি/৬২], UNESCO [United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization] ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস [International Mother Language Day] হিসেবে ঘোষণা করলো এবং জাতিসংঘের সাধারণ সভা দাপ্তরিকভাবে একটি ঘোষণায় এটাকে স্বীকৃতি দিলো ২০০৮ সালকে আন্তর্জাতিক ভাষার দিবস [International Year of Languages] হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে।  দিনটি ২১শে ফেব্রুয়ারিতে উদযাপন করা হয় ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেবার জন্য। অন্যভাবে বলা যায় যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হচ্ছে একটি বাৎসরিক উদযাপন যেটি ২১শে ফেব্রুয়ারিতে হয় যেন ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতার প্রতি সচেতনতা তুলে ধরা এবং বহুভাষাবাদকে সমর্থন করা যায়।   

 

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে ব্রিটিশরা অন্যায়ভাবে ভারতবর্ষসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশকে অন্যায়ভাবে শাসন শোষণ করার পরও সেইসব শাসিত শোষিত দেশগুলো ব্রিটিশ ঐপনিবেশিকদের নিজেদের ভাষা অর্থাৎ ‘ইংরেজিকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে মেনে নিলো! এটা পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়! ব্রিটিশরা অন্যায়ভাবে শাসন চাপিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাদের নিজস্ব ভাষাকেও চাপিয়ে দিয়ে সেটাকেআন্তর্জাতিক ভাষা’ বলে স্বীকৃতি দেবার চেষ্টা করলো এবং সফলও হলো বলা যায় ভাষাকে ব্যবহার করে জগতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও এক ধরণের উপনিবেশিকতা বলেই আমি মনে করি    

 

কিন্তু, আমার মতে আন্তর্জাতিক ভাষা হবে এমন একটি নতুন ধরণের ভাষা যেটি সৃষ্টি করা হবে পৃথিবীর সকল দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি সম্মতির মাধ্যমে এই নতুন ভাষায় থাকবে সম্পূর্ণ নতুন বর্ণমালা, ব্যাকরণরীতি, নতুন বা বিদ্যমান সকল ভাষা হতে নির্বাচিত শব্দভাণ্ডার ইত্যাদি উল্লেখ্য, আমি এই মর্মে ১১ অগাস্ট ২০১৬ তারিখে একটি কুড়িন [Kurine] বা বিশপদী কবিতা প্রকাশ করেছিলাম যেটির নাম ছিল- “Let’s Create a New International Language!!!” [“চলো একটি নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা সৃষ্টি করি!!!”] কবিতাটির বঙ্গানুবাদ নিম্নরূপ-   

 

স্বপনে আমার,

 

বলে ‘সে’ দিয়ে গগনবিদারী চিৎকার,

 

একটি নতুন ভাষা তার দাবী,

 

আনবে বয়ে যা সুফল অবশ্যম্ভাবী!

 

 

কিন্তু আমাদের একটি আন্তর্জাতিক ভাষা আছে,

 

সম্পূর্ণ অবাক হয়ে শুধাই আমি তার কাছে!

 

আমাদের একটি নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা দরকার, সে বলে,

 

বিচক্ষণ হবে ঠিকই সেটি হলে!

 

 

বর্তমান আন্তর্জাতিক ভাষায় সমস্যা কি?

 

ইংরেজি সবাই মেনে নিয়েছে বৈকি!

 

মানবো না আমি এটা,

 

নতুন একটি ভাষা সৃষ্টি করা নয় কঠিন ততোটা!

 

 

কেন তুমি দৃঢ়ভাবে আগ্রহী করতে সৃজন নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা?

 

তুমি কি অনুগ্রহ করে তা করবে পুরোপুরি খোলাসা?

 

কারণ একটি আন্তর্জাতিক ভাষায় আমি কথা বলতে চাই,

 

জন্ম হবে যার, সম্মতি বিশ্বাসের দ্বারাই!

 

 

পৃথিবীর সকল দেশের প্রতিনিধিগণ,

 

সম্মিলিতভাবে পারেন করতে সৃজন,

 

নব্য বৈশ্বিক ভাষা তার নিয়মের,

 

অতঃপর তিনি বলেন আরও, চলো করি ব্যবস্থা এর!!!

 

উপসংহারে শুধু এটুকুই বলতে চাই, ইংরেজি ভাষার প্রতি আমার কোনও ঘৃণা বা বিদ্বেষ কোনোটাই নেই এবং এই বিষয়টির প্রমাণ হচ্ছে এই যে আমি ছাত্রছাত্রীদেরকে ইংরেজি বিষয় পাঠদান করি এবং এই প্রবন্ধটি মূলত আমি ইংরেজিতে [যেহেতু এটাকে এখন আন্তর্জাতিক ভাষা বলা হয়] লিখেছি এবং পরবর্তীতে বাংলায় অনুবাদ করেছি যাতে অনেক মানুষের কাছে তথ্যটি পোঁছে দেওয়া যায় এবং তাদেরকে একটি নতুন আন্তর্জাতিক ভাষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা যায়। তবে আমার মনে হচ্ছে যে একটি নতুন আন্তর্জাতিক ভাষা সৃষ্টি করার ধারণাটি একেবারে অমূলক বা অযৌক্তিক নয়! ব্রিটিশরা ২০০ বছর এই উপমহাদেশ শাসন করার পর নিজ দেশে ফিরে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া ইংরেজি’ ভাষা এখনও আমাদেরকে একপ্রকার পরোক্ষ শাসন করেই চলেছে, যেটির অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়! উপরোল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্মানিত পাঠকগণ আমার সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করবেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস!

View kingofwords's Full Portfolio