কণ্টকিত ভালোবাসা! [অণু গল্প: Bangla Flash Fiction]

তরুণ গল্পকার একটি অণু গল্প লিখবে বলে স্থির করেছে। কিন্তু গল্পের যুতসই নাম খুঁজতে গিয়েই ঘটছে যত বিড়ম্বনা! কোন নাম ছেড়ে কোন নাম বেছে নেবে, তাই ভাবতে ভাবতে বেশ অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। অতঃপর মনেমনে একটি নাম নির্ধারণ করেছে- “কণ্টকিত ভালোবাসা!


কিন্তু একটি বিষয়ে গল্পকারের মনে সংশয় রয়ে যায়- ‘কণ্টকিত’ বলে কোনও শব্দ কি বাংলা ভাষায় আদৌ আছে? ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন দুটোই হাতের নাগালে। সামান্য একটু কষ্ট করলেই গুগলে গিয়ে খুঁজলেই এই সংশয়ের অবসান হতে বাধ্য। কিন্তু কেন জানি গল্পকারের ইচ্ছে হয় না এই ‘কণ্টকিত’ শব্দটি খোঁজার। সে আলতো হাসে। মনেমনে ভাবে, “থাক না এভাবেই। যদি বাংলা অভিধানে এমন শব্দ সত্যিই থাকে, তবে এমনিতেই ঝামেলা চুকে যাবে; আর যদি এমন শব্দ না থাকে, তবে পাঠক ও পণ্ডিতগণ নিশ্চয়ই তার এই সৃষ্টিশীলতায় যারপরনাই মুগ্ধ হবে!


গল্পের কুশীলব কারা, প্রেমিক কে, কে প্রেমিকা, জটিলতা কোথায় ইত্যাদি সব এই তরুণ গল্পকারের মানসপটে ভ্যান গগের ছবির মতন আঁকা আছে। প্রকৃতপক্ষে, গল্পটিতে গল্পকারের জীবনের বেশ অনেকটা ছায়া থাকবে।


গল্পকার তার এই গল্পটিকে তার মনের মত গোছাতে থাকুক, ততক্ষণে আমরা এই গল্পটির মূল বিষয়বস্তুতে খানিক দৃষ্টিপাত করি!


গল্পকার যে বাসায় থাকে, সেই বাসার পাশেই একটি এক কক্ষবিশিষ্ট ঘর বিদ্যমান। অর্থাৎ গল্পকারের প্রতিবেশীর কথাই বলা হচ্ছে এখানে। মূলত এটি কোনও ঘরের সংজ্ঞায় পড়ে না। একটি এক কক্ষবিশিষ্ট দোকানকে ঘরে পরিণত করলে যা দাঁড়ায়, এখানে তাই ঘটেছে। যাইহোক, এই ঘরে অত্যন্ত দরিদ্র একটি পরিবার বাস করে। স্বামী-স্ত্রী, তিন কন্যা ও এক ছেলে নিয়েই পরিবার।


সন্তানদের মধ্যে কন্যাই সবচেয়ে বড়- তার নাম নাসমিন। মেয়েটি অসম্ভব সুন্দর! একেবারে নিখুঁত যাকে বলে। রাতের চেয়েও কালো তার চুল, হরিণীর মতন চোখ, শিশুর মতন নরম, কোমল গাল, ঠোঁট যেন শিল্পীর আঁকা, মায়াবী হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে, দেহের গড়ন অত্যন্ত শৈল্পিক, যখন সে হেঁটে যায়, মনে হয় যেন একটি যুবতি হরিণী হেঁটে যাচ্ছে, তার উচ্চতাও অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় অনেক, ভিড়ের মধ্যে খুব সহজেই চোখে পড়ে তাকে।


গল্পকার বহুদিন পরে বাড়িতে ফিরে এসে তার বাড়ির ঠিক পাশেই এতো সুন্দর একটি মেয়েকে দেখতে পাবে, সেটা তার কল্পনারও অতীত ছিল! ‘প্রথম দৃষ্টিতেই প্রেম’ সম্বন্ধে গল্পকার এতদিন সাহিত্যে পড়েছে, কিন্তু আজ, এভাবে তার নিজের জীবনেও এমনটা ঘটবে, সেটা তার কাছে কোনও জাদুর চেয়ে কম নয়!


নাসমিনের জাদুময় চোখে গল্পকারের চোখ পড়তেই কি যে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে তার মনে, গল্পকার অবশ্য সেই নাটকীয় পরিবর্তন ও স্বর্গীয় অনুভূতিকে বেশ ভালোমতোই অনুভব ও উপভোগ করছে।


একজন বিজ্ঞানীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “প্রেম কাকে বলে?” তখন তিনি সহাস্যে উত্তর দিবেন, “প্রেম বলে কিছু নেই! এসবই মানবদেহে হরমোনের খেলা!” হরমোন হোক আর যাই হোক, গল্পকারের তাতে কিছুই যায় আসে না! তার মনপ্রাণ জুড়ে শুধুই একটি নাম, নাসমিন, শুধুই একটি মুখশ্রী, শুধুই একটি সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর! সে মনেমনে ভাবে, “মেয়েটিকে যদি জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পারতাম! মেয়েটি যদি আমার, শুধুই আমার হতো!”


কিন্তু মানুষ যা চায়, সবসময় তা হয় না। অনেক জটিলতা আছে- প্রথমত, নাসমিনের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, দ্বিতীয়ত, গল্পকারের বয়স ৩৬ বয়স, আর মেয়েটির ১৭। এসব বাঁধা যে গল্পকারের মনের আকাশে কালো মেঘের উড়ছে না তা নয়, তবে যখনই সে নাসমিনের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দর্শন করে, তখনই সকল বিপত্তি বালির প্রাসাদের মতোই ভেঙে পড়ে!


একদিন রাতে চকলেট দেয়ার ছলে গল্পকার নাসমিনকে একা পেয়ে পরম আদরে, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে তার মধুর মতন মিষ্টি ঠোঁটে চুমু খায়। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশতেই কেঁপে উঠে দুটো দেহ, ঠিক যেন ঝড়ে কেঁপে ওঠা পাতার মতন!


আলতো করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নাসমিন প্রশ্ন করে,


- এটা আপনি কেন করেছেন?


- কি করেছি?


- কি করেছেন আপনি জানেন না?


- না, আমি জানি না। তুমিই বলো কি করেছি?


- কেন করেছেন বলেন?


- তুমি জানো না কেন করেছি?


- না!


- করেছি কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই!


- এখন যদি আমি আপনার ব্যাপারে সবাইকে জানিয়ে দেই?


- আমি জানি যে তুমি কাউকে কিছুই জানাবা না।


- যদি বলি?


- বললে তোমার ইচ্ছা!


- আপনার অনেক সাহস, তাই না?


- হয়তো।


- এতো সাহস থাকা ভালো না।


- তাই?


- হ্যাঁ। আচ্ছা, যাই এখন।


হায়, হায়! কথায় কথায় গল্পকারের লিখতে যাওয়া গল্পটাকে আমি নিজেই লিখে ফেলতে শুরু করেছি! যাইহোক, গল্পকার নিজেই তার গল্পটি বেশ সুন্দরভাবে লিখে সম্মানিত পাঠকগণের সমুখে উপস্থিত করবে, হৃদয়ে সেই আশা পোষণ করে এখানেই ইতি টানছি। সবাই ভালো থাকবেন।

View kingofwords's Full Portfolio