আজ থেকে ভাবছি, রোজ রোজ আর ডায়রী লিখবো না। সম্ভব হয়ে ওঠে না। চাইলেও পারা যায় না। কাজেই কয়েক দিন পর পর লিখলেও ক্ষতি নেই। আজ আবার লিখতে বসলাম ৩ দিন পরে। গত দিকগুলোর ঘটনা টুকরো টুকরো করে না হয় কিছু লেখা থাক। ২০ তারিখে বৃহস্পতিবার ছিল। সকাল বিকাল দুই বেলাই কোচিং ছিল। মেহেদীকে পড়ালাম ভোরবেলা একদম ফজরের নামাজের পরে। বিকালে কোচিং এর পরে গেলাম মার্কাজ মাসজিদে। শবগুজারীতে গিয়ে মন খারাপ লাগছিল কারণ আমি অনেকটা একা হয়ে গিয়েছিলাম। মুহিতরা গিয়েছিল টঙ্গী ময়দানে পাহারার জামাতে। পুরা মার্কাজে লোক অনেক কম ছিল। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। মাগরিবের পরে বয়ান করলেন মাওলানা জমিরুদ্দিন সাহেব। রাতে দেখা হয়ে গেলো আমার ২১ বছর আগের বন্ধুর সাথে। ওর নাম নুরুল্লাহ মিন্টু। pre-cadet child care homes এ আমরা পড়তাম। ওর চেহারা চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু ঠিক চিনতে পারছিলাম না। ঐ আমাকে চিনে নিল। আমার পুরা নাম সহ আমাকে বলে দিল। খুব খুশি লাগলো এতদিনের পুরানো বন্ধুর দেখা পেয়ে। রাতে বাইরে বের হয়ে কিছু mango bar কিনে নিয়ে চা আর ছোলা মুড়ি খেলাম সুমন ভাই এর দোকানে। এরপরে মাসজিদে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ফজরের নামাজের বয়ান চলাকালীন সময় আমার কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল। আমার সামনে এক ভাই এসে বসলো কিন্তু আমি তার আচরনে একটু ভিন্নতা খেয়াল করলাম। তার নাম আমার মনে আছে কিন্তু আমি লিখবো না। আমি তার আচরন ভালো করে খেয়াল করলাম। আচরণের মধ্যে যে একটু ভিন্নতা আছে সন্দেহ নাই। মনে মনে ভীষণ খারাপ লাগলো এই মানুষটার জন্য। না জানি সারাজীবন কত কটু কথা শুনতে হয়েছে তাকে মানুষের কাছে। বয়ানের পরে মাশোয়ারার জন্য বসলাম। আবার সেই লোকটা আমার কাছে এসে বসলো। সে আমাকে দেখে খুশী হল। আমার মনে তার জন্য ভীষণ করুনা হল। অন্য লোক হলে হয়ত ঘৃণা করত কিন্তু আমার মনে সত্যি তেমন কোন বোধ হয় নাই। লোকটা আমাকে তার বন্ধু হিসাবে খুব পছন্দ করে নিল। মাশওয়ারার ফাকে ফাকে সে তার জীবনের অনেক কথাই আমাকে বলল। এটাও জানিয়ে দিল যে আমাকে তার খুব ভাল বন্ধু মনে হয়েছে। সে এক চিল্লাও দিয়েছে। আমার মনে আরো বেশী করুণা হল তার জন্য। হায়রে না জানি তার সাথীরা তাকে নিয়ে কি কি ভেবেছে! আল্লকপাক তার ভাল করুক। সে আমার ফোন নাম্বার নিয়ে নিল আর বারবার করে জানিয়ে দিল আমি যেন তাদের এলাকায় যাই। আমাকে কফি খাবারও দাওয়াত দিল। এক মুরুব্বীকে দেখিয়ে বলল, উনি আমাদের মহল্লার। উনি আমাকে মাঝে মাঝে বলেন ‘এই নর্তকী! এইদিকে আয়’। আমার দুই হাতের রুপার আংটি দেখে আমার রুচির খুব প্রসংশা করল। বলল, আমার আংটির মধ্যে antique একটা ব্যাপার আছে। সে জানালো, সে interior design করতে খুব ভাল বাসে। আমার পাঞ্জাবীর খুব প্রসংশা করলো। বলল সে মার্কাজে আমাকে আগেও খেয়াল করেছে। এবার কথা বলতে পেরে খুশী হল। লোকটা জন্য আমি মনে মনে দোয়া করি, আল্লহ তুমি এই মানুষটা কে ঠিক করে দাও।
শুক্রবার ফুয়াদ তাকিয়া আর আয়েশা পড়তে আসল ১১:৩০ এর দিকে। জুম্মার নামাজের আগ পর্যন্ত পড়ালাম। পরে জানতে পারলাম মাহমুদ ভাই এর বিয়ের ওলিমার দাওয়াত আছে। মিজানুর আঙ্কেলের ছেলে। বিয়ে হল হাসানুর আঙ্কেলের মেয়ের সাথে। বিয়ে খেতে গেলাম। জুম্মার নামাজ পড়ে এসে দেখি নাইমাও এসে হাজির। আব্বু আসতে বলেছে বিয়ের জন্য। নাইমার একটা মাক্সি আমাদের বাথ্রুমে পড়ে ছিল দেখে নাইমা আমার উপরে ভীষণ খেপে গেল। খেপে গিয়ে আমাকে অনেক গালমন্দ করলো। আমি কেন ওর ম্যাক্সিটা নিয়ে আসলাম না বা ধুতে দিলাম না। আসলে আমি যে বাসায় খুব কম সময় থেকেছি সেটা নাইমাকে বয়াল গেলো না। আমি আসলে খেয়াল করে দেখিই নাই যে ওটা নাইমার ম্যাক্সি বা ওটাকে যে ঘরে নিয়ে যেতে হবে আমার সেটাও মনে হয় নি। ভুলটা আমারই ছিল। যাই হোক, আমরা গাড়ীতে করে মাহমুদ ভাই এর ওলিমা খেতে গেলাম। গিয়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। পুরা সুন্নাত তরীকায় ওলিমার আয়োজন করেছে। মাটিতে বসে দস্তরখান বিছিয়ে সুন্নাত তরীকায় খাওয়া। আমরা যা করতে পারি নাই, মাহমুদ ভাইরা সেটা করেছেন। মাহমুদ চাই কোরবাণীর ঈদের ৩ দিন আগে আল্লহ’র রাস্তায় ১ সাল দিয়ে এসেছেন। আল্লহ পাক তাদের নতুন জীবনকে বরকতময় করে দিন।
বিয়ে খেয়ে গেলাম গেলাম আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এ নঈম আঙ্কেল কে দেখতে । নঈম আঙ্কেলের partial nefractomy operation হয়েছে ৩/৪ দিন আগে। উনার ডান কিডনিতে পাথর ও ছিল আবার টিউমার ও ছিল। উনার সাথে দেখা করলাম। মুমিতও ছিল। ওর সাথে পুরানো বন্ধুদের নিয়ে, ওর ক্যামেরা নিয়ে, কাজ নিয়ে নানা রকম কথা হল। মাগরিবের সময় বাসায় চলে এলাম। নাইমা বায়না ধরলো, বাইশটেকী চলে যাবে। আমি যেতে দিলাম না। নাইমাকে আটকানোর জন্য আমি আমার সেই বিখ্যাত short-cut formula তে চলে গেলাম। নাইমা গেলো না। রাত্রে থেকে গেলো। বেচারী তার পায়ের ব্যথায় অস্থির হয়ে থাকে শোবার সময়। রাতে ডাঃ আব্দুস সামাদ ভাই ফোন করে জানালো, পরদিন অর্থাৎ শনিবার মেহেদী পড়তে পারবে না কারণ সে অসুস্থ। আমি বললাম, অসুবিধা নাই। সেই হিসাবে শনিবারে আমার তেমন কোন একটা কাজ থাকে না। ঘুমিয়ে পড়লাম।