আজ সকাল থেকেই এক এর পর এক নানা ঘটনা ঘটেছে। সকালে মাশওয়ারাতে অনেক কথা হল। আব্দুল হদ চাচা বিভিন্ন বিষয়ে অনেক তারগীবী কথা বললেন যে, মূল মাশওয়ারাটাই তেমন কিছু হল না। কথাগুলা অবশ্য দরকার ছিল। শেষের দিকে ডাঃ আব্দুস সামাদ ভাই ও নানা রকম কথা বললেন। জামায়েত ইসলামী যারা করে তাদের বিভিন্ন আলতু ফালতু প্রশ্নের ব্যাপারে। ওইসব কথা বলতে বলতে ৭ টার মত বেজে গেলো। এরপর ইশরাক এর নামাজ পড়ে মাসজিদের বাইরে এসে আব্দুস সামাদ ভাই জানালেন যে উনার বাসাতেই যে sub-late থাকে তাদের ক্লাস-৭ পড়ুয়া বাচ্চার জন্য টিউশনি করাতে পারবো কিনা? আমি একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। কারণ নাইমা এইসব ব্যাপারে খুব sensitive। ওর পছন্দ না হলে আমাকে বারবার সেটা বলতে থাকবে আর আমাকে খুব strongly oppose করতে থাকবে। ওর মতামতকে উপেক্ষা করে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমি উনাকে জানালাম যে আমি বাসা থেকে কথা বলে আপনাকে জানাবো। আমার ইচ্ছা ছিল এটা করার। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত টাকা পাওয়া যাবে? উনি বললেন ৬ হাজার টাকা তো নিম্নপক্ষে। আমি পরে মতামত জানাবো বলে বাসায় চলে আসি। বাসায় দেখি আব্বু হাটতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। আমি অনেকদিন হাটি না। তাই বললাম, আমার জন্য দাঁড়াও আমিও আসতেসি। ঘরে ঢুকে নাইমাকে টিউশনিটার কথা বলতেই ও না না বলা শুরু করলো। বল্বল, ক্লাস ৭ ও কিছুতেই আমার জন্য মেনে নিতে পারছে না। আমি বললাম, অসুবিধা কি? সহজ আছে। টাকাও পাচ্ছি। সমস্যা নাই। পড়ে ভাল কোন টিউশনি পেলে এটা না হয় ছেড়ে দেওয়া যাবে। ভাল কোন টিউশনি পেলে আমার aim coaching এর ক্লাস ছেড়ে দেওয়ারও ইচ্ছা আছে। কারণ এখানে আমি আমাকে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, এর চাইতেও বেশী কোন কোন শিক্ষককে দেওয়া হয়। আমাকে কেন কম দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমি জানি না। কিন্তু ভাল একটা কিছু না পাওয়া পর্যং আমি এটাকে ছাড়াও বুদ্ধিমানের কাজ মনে করি না।
নাইমাকে অনেক কষ্টে রাজি করায়ে আব্বুর সাথে হাটতে বের হলাম। বেনারসি পল্লিতে যেতেই মিটন ভাই এর আম্মা এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। একটু পরে মিলন ভাই ও আসলেন। অনেক দিন পরে উনার সাথে দেখা। বহু বছর পরেই হবে। ১৯৯৭ সাথে উনাদের করা BUETECH coaching এ আমরা পড়তাম। মিলন ভাই ও আমাদের ক্লাস নিতেন। উনি আমাকে incepta pharma এর কথা বলে ওখানে অ্যাপ্লাই করতে বললেন। উনি ল্যাব এ যাবে রক্ত পরীক্ষা করাতে। আব্বু মিলন ভাই কে রাজী করায়ে পল্লবির প্রজেক্ট দেখাতে নিয়ে গেলেন। ওখানে গিয়ে নানা রকম কথা হল। মিলন ভাই এর এক পরিচিতা ফ্ল্যাট কিনিতে আগ্রহী ছিল। অখানে থেক হেটে হেটে আমরা মারকাজ মাসজিদের সামনে দিয়ে হেটে আসলাম। মেইন রোডে এত বেশী ভিড় ছিল যে হাটা অসম্ভব ছিল অনেকটাই। এদিকে নাইমা sms করে জানিয়েছে, baby adoption এর ব্যাপারে আমাদের রাতে যেই কথাগুলা হয়েছে সেটা আব্বুকে জানাতে। আমি হাটার মধ্যে এই জাতীয় কথা বলা অনুচিত মনে করে কিছুই বললাম না। বাসায় ফিরলাম প্রায় ১০:৩৫ এর দিকে। অনেক ক্লান্ত লাগছিল। কিছুটা রাগও লাগছিল। হাটতে বের হয়ে ৩-৪ ঘন্টা কাটানো আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগছিল। ক্ষুধাও লেগে গেছিল। আমি ঘরে ঢুকেই গরম গরম রুটি খেয়ে নিলাম কয়েকটা। কিছুক্ষণ পরে আব্বু আসল। আমি কথা বলার সুযোগ খুজছিলাম। নাইমা তখনও বিছানায়। আমি বললাম, আমি আব্বুকে এখনই কথটা বলতে চাই। ও বলল, অফিসে গিয়ে বলতে। আমি রাজি হলাম না। এরপরে আমি computer এর কাজ করছিলাম। কিছুক্ষণ পর নাইমা এলো। আব্বু টেবিলে বসা ছিল। আমি এটাকেই সু্যোগ মনে করলাম। আস্তে আস্তে বলা শুরু করলাম।
বললাম, baby adoption এর ব্যাপারে আমি নাইমা আর শেফা আলাপ করেছি আর আমাদের সিদ্ধান্ত হল এটা কিছুতেই আমরা মেনে নিতে পারবো না। আব্বু জানতে চাইলো কেন? কি সমস্যা আছে? আমি বললাম, আছে অনেকগুলা সমস্যাই আছে। আমি এক এক করে বলা শুরু করলাম-
১। এটা আমাদের প্রথম বাচ্চা। এই বাচ্চার সাথে অন্য কোন বাচ্চাকে মিলায়ে আমাদের পক্ষে দেখাশোনা করা বা foster parents হওয়া সম্ভব না।
২। আমাদের বাসায় শেফা’র জন্মের পরে দুই যুগ পরে একটা বাচ্চা আসছে, সেখানে বাইরে থেকে আর একটা বাচ্চা আনার কোন যৌক্তিকতা আমরা খুজে পাচ্ছি না।
৩। বিষয়গুলোকে আমরা আবেগ দিয়ে দেখেছি, কিঙ্গু আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। আমাকদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না।
৪। এটা আমাদের প্রথম বাচ্চা, এর সাথে অন্য কোন বাচ্চার take care করা নাইমার পক্ষে সম্ভব না।
৫। আমাদের নিজেদের যখন বাচ্চা আসছে তখন আব্বু কি এটাতে খুশি না? এখানে কেন এর সাথে অন্য বাচ্চাকে আনতে হবে?
৬। আব্বুর আগের দিনের কথার সূত্র ধরে বললাম, যে একসাথে দুইটা walker কেনা, বা ডজন ধরে feeder কিনে দুই বাচ্চার মধ্যে share করা, আমি এটা মেনে নিতে পারবোনা কিছুতেই। আমি মার বাচ্চার আদরের সাথে অন্য কোন বাচ্চাকে কিছুতেই শরিক করতে পারি না। তোমাদের যদি কোন বাচ্চা পালতেই হয়, তাহলে আমাদের অবর্তমানে। আমাদের সামনে আমরা কিছুতেই একটা baby adoption মেনে নিতে পারবো না।
৭। নাইমাদের বাসা থেকেও এই জাতীয় ব্যাপার নাইমার ক্ষেত্রে কখনও মেনে নিবে না।
এইগুলাই ছিল আমার যুক্তি। আমি শক্ত করে জানিয়ে দিলাম। কোন ভাবেই আমার পক্ষে এই অতিরিক্ত বাচ্চাকে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। আম্মু আর নাইমাও টেবিলে ছিল। স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম, আমাদের কোন কথাইউ আব্বুর ভাল লাগে নাই। উনি উনার যুক্তিকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাইলেন কিন্তু আমি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারবো না আমি সাফ সাফ জানিয়ে দিলাম। আব্বু অনেক মনোক্ষুণ্ন হলেন কিন্তু আমার কিছুই করার নাই। বরং গতদিন কেন আমার এই জাতীয় কথা সেদিন মনে হয় নাই, সেটা চিন্তা করে বারবার নিজেকে ধিক্কার দিলাম। গতরাতে নাইমা বলেছে, আমি নাকি গাধা কিসিমের! আমার কোন বাস্তব জ্ঞান নাই। কথাটা ঠিক। কথাগুলা আমি বুঝেছি ঠিকি কিন্তু পরে গিয়ে। আমার আরো আগেই বোঝা দরকার ছিল।
দুপুরে তাকিয়া ফুয়াদ আর আয়শা পড়তে এলো আমাদের বাসায়। মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত ছিল। এরপরে আমি মুহিতের সাথে যোগাযোগ করলাম। আজকে ওর সাথে আমার চা খাওয়ার কথা। Orange-tea! এশার নামাজের পরে, তালিম করে আমি মুহিত আর শোয়েব গেলাম ১০ নাম্বারে ম্যাগ্নোলিয়া’র কাছে। ওখানে প্রচুর street-vendor নানা ধরনের খাবার বিক্রি করে। প্রচুর লোকজন খাওয়া দাওয়া করছে। ওখানে প্রথমে orange tea খেলাম। ১০ টাকা করে কাপ। আমি রীতিমত মুগ্ধ কমলা লেবুর চা খেয়ে! পরে লেবু আর বীট লবনের চা খেলাম। এটাও খুব মজার ছিল। এই জাতীয় চা বানানো যায় আমার কোন ধারণা ছিল না। চা বানানো ছেলেটার নাম, সাদ্দাম হোসেন। আমার মনে পড়ে গেল সেন্ট-মার্টিন এর ছেড়া দ্বীপের সাদ্দামের কথা। সাদ্দামের একটা বোন ছিল, তার নাম ছিল মৌসুমী- কারণ একবার নায়িকা মৌসুমী সিনেমার শ্যুটিং করার জন্য ছেড়া দ্বীপ গিয়েছিলেন। তখন সাদ্দামের বোন হওয়ায় তার নাম রাখা হয় মৌসুমী! এটা ২০০৩ এর কথা।
মুহিত আর শোয়ের একেবারে মানিকজোড় বন্ধু। সবসময় দুইজনকে একইসাথে দেখি। ওদের সাথে নানা বিষয়ে আলাপ হয়। আমি কথা বলতে বলতে ৩ কাপ চা খেয়ে ফেললাম। orange tea, malta tea আর lime-rock salt tea! চা গুলার স্বাদ পরখ করে আমি টাশকি খেয়ে গেলাম। নিঃসন্দেহে ভাল বলতে হবে। বাসায় বানাবো বলে ঠিক করলাম। ওদের কাছে খুলনায় খাওয়া Day-night tea এর গল্প করলাম। ঐ চায়ের কথা আমি ভুলতে পারি নাই। আমার একটা ব্লগ ও লেখা আছে এটা নিয়ে। বাসায় ফিরতে ফিরতে বাচ্চাদের নাম বিষয়ক নানা কথা হল ওদের সাথে। মুহিতের শরীর ভাল ছিল না খুব একটা। গলা ব্যথা আর সেই সাথে জ্বর জ্বর ভাব। চায়ের বিল কিছুতেই আমাকে দিতে দেবে না। এটা ওরাই দিল। আমি অনেক জোর করে টা-এর বিল টা দিলাম। ‘বট’ ভাজা খাওয়া হল। বেশ ভালই!
ওদের সাথে বিদায় নিয়ে বাসায় পৌছেই দেখি আমাকে হারিকেন ধরায়ে খোজা হচ্ছে। ফুয়াদ তার home-work করতে বসে যেখানে আটকে যাচ্ছে সেখানে তার মাথা খারাপের মত হয়ে যাচ্ছে। দুই দফা ফোন করে আমার সাথে কথা বলে সমাধান নিয়ে নিল। এই দিক দিয়ে তাকিয়া আর আয়েশাকে বেশ নিশ্চিন্ত মনে হচ্ছে! দেখা যাক ওরা কি করে। কাল সকালে আসবে বললেও পরে বিকাল ৪ টায় আসবে বলে দিল। আমি আব্দুস সামাদ ভাই এর সাথে কথা বলে নিশ্চিত করলাম যে, আমি উনার বাসার ক্লাস ৭ পড়ুয়া ছেলেটাকে পড়াব। আমি ফজরের পরে পড়াব বলে দিলাম। রাতে শুতে শুরে বেশ রাত হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত লাগছে বেশ!