মুখে লবঙ্গ নিয়ে রিপোর্ট লিখতে বসলাম। গত একমাস ধরে আমার খুব সর্দি-কাশি চলছে। অসুখ বলতে আমার সামান্য জ্বর আর সর্দি-কাশিটাই হয়। কিন্তু এতদিন ধরে এবার কাশিটা চলছে যে কাশির syrup খেতে বাধ্য হচ্ছি। ফজরের নামাজের পরে বায়তুল এহতেরাম মাসজিদে গেলাম হালকা’র মাশয়ারাতে। এস্তেমাতে যাওয়ার প্রস্তুতির উপরে আলোচনা হল। এরপরে আমাদের দাওয়াতের সাথী ডাঃ আব্দুস সামাদ এর সাথে উনার ফার্মেসীতে গিয়ে কাশির ওষুধ আর নাইমা’র জন্য calcium tablet নিয়ে নিলাম। উনি আমাকে চা না খাইয়ে ছাড়বেন না। এখানেই শেষ নয়। উনি মোবাইল ফোনে উনার স্ত্রী’র সাথে কথা বলে জানালেন উনার বাশায় আমাকে সকালের নাস্তা খেতেই হবে। টাকি মাছের ভর্তা করেছেন। সাথে আরও কিছু ভর্তা। অনেক লোভনীয় প্রস্তাব। ফেলে দেয়া গেলো না। গেলাম উনার সাথে উনার বাসায়। ভরপেট খেলাম গরম ভাত দিয়ে টাকি মাছের ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ডিম ভাজি দিয়ে ভাত। এককথায় অপূর্ব। ডাঃ আব্দুস সামাদ ভাইদের আন্তরিকতার তুলনা হয় না। সাধারণ ঘর, কিন্তু উনাদের মন মানসিকতা অসাধারণ। এমন মানুষের সানিধ্য কার না ভালো লাগে?
আমি আগামীকাল মুহিতদের সঙ্গে রাতে টঙ্গী এস্তেমার ময়দানে যাবার নিয়ত করেছি। এইদিকে প্রচন্ড কাশিতে নাজেহাল অবস্থা। Renata Pharma এর রিপোর্ট এর কাজটাও আজকের মধ্যে মোটামুটি শেষ করে ফেলতে হবে। নাহলে নাইমা আমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে। এখন নাইমা’র pregnancy প্রায় সাড়ে ৫ মাস চলছে। অপেক্ষায় আছি কখন প্রথম বাচ্চাটার মুখ প্রথমবার এর মত দেখব বলে। সময় মনে হয় কাটছেই না। এখনো আমরা জানি না ছেলে হবে না মেয়ে হবে। আল্লহপাক আমাদের যা দিবেন আমরা সেটার উপরেই সন্তুষ্ট মনে অপেক্ষা করছি। আগেভাগে জানতে চাইও না যে ছেলে হবে না মেয়ে হবে। নাইমা’র গর্ভাবস্থার শুরুতে অনেক সমস্যা হয়। বাচ্চাটার পৃথিবীতে আসা নিয়ে চিকিৎসকগণ সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহপাক অকে ভাল রেখেছেন। নাইমা এখন পেটের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া টের পায়। আমাকে বলে। আমি এখনো টের পাই নি, পেটে হাত দিয়েও। খুব আনন্দ লাগে বাচ্চার নড়াচড়ার কথা শুনতে পেলে। নিজের বেকার জীবনের গ্লানি কিছুটা কমাতে চেষ্টা করি বাচ্চাটার কথা চিন্তা করে। আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি কবে আমার জীবিকার একটা উপায় হবে সেটা ভেবে। নাইমা খুব মন খারাপ করে মাঝে মাঝে। ওর দোষ দেই না। কিন্তু আমি নিরুপায়। অপেক্ষা করতেই হবে।
সন্ধ্যার পরে বাসায় এসে দেখি চটপটি বানানোর আয়োজন চলছে। নাইমা মহা উৎসাহে চটপটি রেডী করছে। খেতে বেশ ভালই হয়েছে। ঠিক তখনই বাইশটেকি থেকে আসিফ ভাই এর জরুরী তলব। উনাদের মাসজিদে আরব (লেবানন) জামাত আসছে। তাদের সাথে ইশা’র নামাজের পর মুজাকারা করতে হবে। আমি কাজের অযুহাত দিতে চাইলাম কিন্তু আসিফ ভাই খুব তাগাদা দিলেন। দীনের কাজ দেখে পিছপা হলাম না। তড়িঘড়ি করে আমার certificate গুলার photocopy এর দায়িত্ব দিলাম সা’দ এর উপরে। অকে কাজ বুঝায়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে রওনা দিলাম বাইশটেকি। আসিফ ভাই ব্ললেন যে, রাতে জামাতের মেহমানদারী করছে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে। কাজেই খাবারের লোভ যে একেবারে ছিল না সেটা বলাই বাহুল্য! উনাদের মাসজিদে যাওয়ার পরই শুরু হল নামাজ। নামাজের পরে আরব জামাতের সাথে মুজাকারা করলাম। আল্লহপাকের অশেষ দয়ায় মুজাকারা ভালই হল। আমি বললাম ইংলিশ এ আর উনাদের এক সাথী যার নাম- শেখ সালাহ-উদ্দীন আমার সাথে আরবীতে তর্জমা করলেন। আরাবরা খুশি হল। এরপর রাতের খাবার পালা। ভাল আয়োজন ছিল। বড় বড় তেলাপিয়া মাছের ভাজি, নান রুটি, সবজি রান্না, মুরগির ঝোল তরকারী, পোলাও, সফট ড্রিংক্স! খেলাম সবই। এদিকে নাইমার demand হল, খাবার পরে যদি খাবার থাকে তাহলে তার জন্য নিয়ে আসতে হবে। আমার সাথে আরব জামাদের এক সাথী, যে আমিরাত থেকে এসেছে, নাম- শেখ মনসুর, আমাকে বলল, আজকে যে মুজাকারা হল, সেটা সে আগে কখনও শুনে নাই। আলহামদুলিল্লাহ। সব কিছুই আল্লহপাকের দয়া।
এরপর শ্বশুরবাড়ী গিয়ে দেখা করলাম। সামি একটা মুখশ কিনছে। সেটা পরে আমাকে দেখালো। আমি ওর একটা ছবি তুলে নিয়ে, নাইমার জন্য খাবার নিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম বাসার দিকে। বাসায় আসার পরপরই ডঃ নাজিম স্যার ফোন দিলেন। উনার কাছ থেকে আমার certificates গুলার photocopy সত্যায়িত করার দরকার ছিল। উনার বাসায় গিয়ে কাজগুলা শেষ করে, ডাঃ আব্দুস সামাদ ভাই এর সাথে দেখা করে বাসায় ফিরলাম। আব্দুস সামাদ ভাই আমাকে ৪ তা কফ-লজেন্স দিলেন। সেটা মুখে দিয়ে এখন লিখছি। বাসায় আসার পরে নাইমার দেয়া চা খেলাম গরম গরম এক কাপ। প্রচুর মশা কামড়াচ্ছে। বসে থাকাই বেশ মুশকিল। শুয়ে পড়তে হবে। নাইমা এখন ঘরে গিয়ে চুপি চুপি ডায়রী লিখছে আর আমি টেবিল এ বসে টাইপ করছি।