চিরুনি

অনেকদিন তো হয়ে গেল। সেই ২০০৫ এর কথা। তখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। ভার্সিটিতে ক্লাস বন্ধ ছিল। তৃতীয় বর্ষে পড়ি তখন। এক বিকেল বেলা পরীক্ষার রুটিন দেখতে গেলাম ভার্সিটিতে। তখন বিলে গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিলো। করিডোর ধরে এগিয়ে যাচ্ছি বের হয়ে যাব বলে। তখ নজরে এলো ছোট্ট একটা ছেলের উপরে। এক লোকের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। গায়ে স্কুলের পোশাক। পিঠে ঝোলানো একটা ব্যাগ। অপূর্ব বাচ্চাটার মুখশ্রী। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম বাচ্চাটার হাতে একটা চিরুনি ধরা। সন্ধ্যাবেলা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাটার হাতে একটা চিরুনি এলো কথা থেকে ভেবে কূল কিনারা করতে পারলাম না। যাই হোক, বলে নেয়া ভাল, আমার নিজের ছোটবেলা থেকেই ছোট বাচ্চাদের সাথে অনেক ভাব। বড়দের চাইতেও ছোটদের সঙ্গ আমার অনেক ভাল লাগে। এখন এতো বড় হয়ে হাতি ঘোড়া হবার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু মনের ভেতরে শিশুদের জন্য ভালবাসা রয়েই গেছে। কেন জানি আমার মনে হয়, বাচ্চাদের নিষ্পাপ স্পর্শে আমার নিজের পাপ কিছু হলেও মনে হয় ধুয়ে মুছে যায়। আমি এখনও ওদের সাথে খেলতে পছন্দ করি। সবাই হাসে; বলে, এতো বড় হয়ে গেছে কিন্তু এখনও কেমন ছেলেমানুষ রয়ে গেছে। ওতে আমার কিছু অবশ্য যায় আসে না। যাই হোক এবার মূল কথায় ফেরত আসি। সুযোগ পেলেই আমি মূল কথা বাদ দিয়ে অন্য প্যাচাল পাড়া শুরু করে দেই।

বাচ্চাটার হাতে চিরুনি দেখে অবাক হলাম। আমার মুখোমুখি যখন এলো, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বাবু তুমি চিরুনি দিয়ে কি কর? বাচ্চাটা আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালো, ‘তুমি আমার কাছে আস, আমি তোমার চুল আঁচড়ে দেই’। কত হয়স হবে ছেলেটার? মাত্র ৪ কি ৫ হবে। আমি অবেক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। হেসে ওর সামেনি হাঁটু গেঁড়ে বসে গেলাম। বাচ্চাটা ওর শিশুসুলভ হাতে আমার চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে লাগলো।

মনে পড়ে গেল নিজের শৈশবের কথা। যখন স্কুলে যাবার আগে আমার মা আমাকে এইভাবে চুল আঁচড়ে দিত। বাম দিক থেকে ডান দিকে একটা সিঁথি করে দিত। বাচ্চাটা কিছুক্ষণ আমার চুলে আগোছালো করে নাড়াচাড়া করে বলে, নাও তোমার চুল আঁচড়ানো শেষ। আমি মুগ্ধ চোখে বাচ্চাটার কান্ড দেখছিলাম। নিষ্পাপ হাতের ছোঁয়া নিলাম আমার মাথায় আশীর্বাদের মত করে। ছোখ ছল ছল করে উঠলো কেন নিজেই জানি না। বাচ্চাটা লোকটার সাথে চলে গেল করিডোর ধরে। আমি বাচ্চাটার নাম জিজ্ঞাসাও করতে ভুলে গেলাম। বাচ্চাটার নাম মনে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি এখনো মনে তাজা হয়ে আছে। অনেক দিন পর্যন্ত দিনটাও মনে ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের কোন এক তারিখ। এখন তারিখটাও আর মনে করতে পারছি না। খুব সহজেই আমরা ভুলে যাই সবকিছু।

Author's Notes/Comments: 

28th February 2012

View shawon1982's Full Portfolio