দিনের শেষ হয়ে সঙ্গোপনে আসে রাত!
নিস্তব্ধ নিঝুম;
থেমে যাচ্ছে কোলাহল!
রাস্তার আলোয় চকচক করে রাজপথের কালো পিচ।
একাকী নির্ঘুম;
ক্ষয়ে যায় মনোবল!
পেটে ক্ষুধার তীব্র জ্বালা
ঘরের শেকলে তুলে দিয়ে তালা-
রঙচঙ দেয়া উগ্র প্রসাধনী মেখে
মেয়েটি বেরিয়ে এলো রাস্তায়!
মনের ভেতর ডুকরে ডুকরে কাঁদে;
পড়ে গিয়েছে কোন মরণ ফাঁদে?
ছোট বাচ্চাটা তার ঘরে; ঘুমন্ত অসহায়।
আমরা এই মেয়েটিকে বলি ‘বেশ্যা’
সভ্য সমাজের কলঙ্কিত সমস্যা!
তার বাচ্চাটার নেই পিতৃপরিচয়
যদিও তার জন্মদাতা সমাজেরই সুনিশ্চয়!
মেয়েটি খদ্দেরের খোঁজে রাস্তায়,
ক্ষুধার নিমিত্তে নিতান্ত অসহায়!
খদ্দেরকে করতে মনোরঞ্জন
নিজের সম্ভ্রমকে করতে হয় প্রতিনিয়ত বিসর্জন!
তবুও আমরা তাকে পতিতা বা বেশ্যাই বলব!
সব শক্তি দিয়ে মেয়েটিকে ছিবড়ে ফেলব!
আমরা তো সভ্য সমাজের মানুষ।
ভালো মানুষীর মুখোশ পরে-
আধুনিক সমাজের বুলি আউড়িয়ে
আকাশে ওড়াবো মানবতার ফানুশ!
ক্ষুধার জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে বানিয়েছি বেশ্যা;
শতজনে কাম মিটিয়ে নিয়েছে; ওকে করেছে অস্পর্শা।
অসহায় নারীর বিদীর্ণ যোণিতে যারা ঢালছে বীর্য-রতি,
তারাই হয় সমাজের মাথা! তারাই সমাজপতি!
এই লজ্জা কই রাখি?
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমরা
ঘৃণায় মুদি আঁখি!
পেটের জ্বালা আমাদের যেমন, তারও ঠিক তেমন!
সেই জ্বালা মিটাতে গিয়ে করতে হয়েছে রমন!
অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে যারা
তাকে নিয়ে করে ছেলেখেলা-
তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে;
মেঘে মেঘে তখন অনেক হয়ে গিয়েছে বেলা।
জন্ম দিয়েছে নাম গোত্রহীন
দুর্বল এক শিশু;
ক্ষুধার তাড়নে যদি মরেও যায়-
আমাদের আসবে যাবেনা কিছু।
মায়ের মন একই রকম, হোক সে বেশ্যা নয় কারো স্ত্রী!
যুগ পালটেছে অনেক কিন্তু বদলায়নি কুৎসিত মুখশ্রী!
অনেক প্রতীক্ষার পরে অবশেষে খদ্দের পায় মেয়েটি!
ঘরে ফিরে দেখে ক্ষুধার তাড়নে কাঁদছে তার বাচ্চাটি!
শত অনুনয় করেও
মন গলেনা খদ্দেরের!
সামান্য দুধ খাওয়ানোর সময়ও
হাতে নেই মহাশয়ের।
অশ্রুসিক্ত নয়নে নগ্ন দেহে বিলিয়ে দেয় নিজেকে!
মেয়েটি চোখ বুজে ভাবে-
‘মানুষরুপী নরপশুদের কাছে কামলীলা এক স্বর্গীয় সুধা;
মিটিয়ে নেয় জান্তব তৃষ্ণায়!
এর কাছে প্রতিনিয়ত আমাকে বলি হতে হয় অসহায়!
তাতে কি? আমিতো বেশ্যা!
বেশ্যা আবার মানুষ নাকি? তার আবার কিসের ক্ষুধা?’