ওয়ালি মুহাম্মাদ ওয়ালি (১৬৬৭-১৭০৭)
ওয়ালি মুহাম্মাদ ওয়ালি দক্ষিণ এশিয়ার একজন প্রাচীন এবং শাস্ত্রীয় উর্দু কবি ছিলেন। তাকে উর্দু কবিতার জনক হিসাবে ধরা হয়। উর্দু সাহিত্যে গজলের প্রচলন উনার মাধ্যমে শুরু হয়। ইতিপূর্বে কাব্যের এই ধারা আরবী সাহিত্যে পাওয়া যেত ইসলাম ধর্ম প্রচারের অনেক আগে থেকেই। ইতিপূর্বে এরূপ কবিতার ধারা ফার্সিতে পাওয়া যেত এবং ওয়ালি মুহাম্মাদ ওয়ালি কবিতার এই ধারাকে উর্দুতে এনে কাব্যধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হন। উনি উনার কবিতায় এই উপমহাদেশীয় দৃশ্যপট, উপমা এবং প্রবাদ প্রবচনের সার্থক প্রয়োগ করে দেখিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
ওয়ালি মুহাম্মাদ ওয়ালি (১৬৬৭-১৭০৭)
একগুচ্ছ উর্দু কবিতা’র ভাবানুবাদ
অনুবাদঃ ডঃ জায়েদ বিন জাকির শাওন
(১)
যার বুকে আঘাত হেনেছে প্রেমের তির
বোঝা স্বরূপ হয়ে গেছে তার জীবন তীর
অন্তিম শয়নেও ছাড়ব না এ প্রেমের বাঁধন
যাকে দেখলে মনে হয়, আমার কত যে আপন
সেই জগতে কভু মিশিয়ে ফেলো না নিজেকে
যার কাছে প্রেম মর্যাদা পায়নি অস্থির ক্ষণিকে
তোমার প্রতিটা কথায় আমি মজে যাই প্রেমে
প্রেমময়, তোমার সব কথাই লাগে বড় মিঠে
যদিও তুমি বলেছিলে একটি মাত্র কথা
অস্থির চিত্তে সেটাই দিয়েছিল বড় ব্যথা
(২)
এই মন যদি কভু হয়ে যায় এক স্বচ্ছ আরশি
তখন তুমি দেখতে তাতে খোদার কৃপা দৃষ্টি
হে জবান, আমাকে বলতে দাও প্রেমের তরে
অপেক্ষায় আছে সে, শুনবে গাঁথা উৎসর্গ তারে
আলিকে কি জিজ্ঞাসা করেছো তুমি প্রেমের সংজ্ঞা
যে নিজেই জানে না, যাকে সে করে এসেছে অবজ্ঞা
সেই দর্পন! রয়েছে তোমার সাথে ছায়া হয়ে
আর আবির্ভুত হয়েছে স্বস্তির বিরুদ্ধাচরণ করে
প্রেমাস্পদের তো জাগরণেই শান্তি তোমার তরে
স্বর্বস্ব যে খুইয়েছে, তার কিসে ভয় ডাকাত চোরে?
ওগো! শুধু একটি বার তাকাও তার মুখপানে
তৃষিত প্রতীক্ষায় ভোর হতে যদি সে দৃষ্টি হানে
(৩)
সব বসন্ত হার মানে দারিদ্র্যের সামনে
পুরুষের প্রতি ভরসাও যেথা হার মানে
আমি কিভাবে নিজেকে মিলাবো জনসমুদ্রে
তবে যে তোমার কেশের বাঁধন যাবে টুটে
প্রেমাচ্ছন্ন চোখের উন্মাতাল সেই দৃষ্টির মাদকতা
আমার চোখেও ধরায় নেশা, অদ্ভুত এক উচ্ছন্নতা
তাকে দেখার তৃষ্ণা আমি কিভাবে ভুলে যাবো-
আমার হৃদয়ের ভারসাম্য, কোথা খুঁজে পাবো?
এ ওয়ালী! সেই সুন্দর মুখের একটি মাত্র ঝলক
আমার এ বুক হারায় তার এই ধুলির দ্যুলোক