মাঝে মাঝে আমি নিজের ব্যাপারে নিজেই অনেক কনফিউজড থাকি। অনেকটাই সন্দিহান বলা যেতে নিজের ব্যাপারে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি আসলেই বিজ্ঞান মনষ্ক? আমি কি আসলেই বিজ্ঞানের কিছু বুঝি? বিজ্ঞানের বোঝাবুঝি বলতে আমি বুঝালাম, আমার পরিচিতি গন্ডিতে যেটুকুতে আমি লেখাপড়া করেছি। আমি কি আসলেই এর যোগ্য ছিলাম? বিজ্ঞানের ছাত্র হবার জন্য? নাকি অসীম দয়ালু সত্ত্বা আমার মত এক অকৃতী অধমকে অগাধ দয়া করে বিজ্ঞানের ছাত্র বানিয়েছেন? আমার সাথে বিজ্ঞানের তো তেমন কোন সম্পর্কই খুজে পাই না। আমার আশেপাশের মানুষগুলো মনে হয় ঠিকই টের পায়, যে আমি আসলে মনে হয় বিজ্ঞান মনষ্ক নই। কিছুতেই নই। সেই ছোট বেলা থেকেই পাঠ্য বই কতটুকু পড়তাম জানি না, তার চেয়ে অনেক বেশী পড়তাম গল্পের বই। এই গল্পের বই পড়া নিয়ে কত স্মৃতি আছে। কত বকা ঝকা শুনেছি একসময়। এখন আমাকে অবশ্য কেউ বকাঝকা করে না। এখনও আমাকে যদি কিছু পড়তে দেখেন তো হাতে কখনই বিজ্ঞানের কোন বই দেখবেন না। আমার হাতে হয় দেখবেন কোন একটা ঢাউস সাইজের উপন্যাস, না হয় কবিতার বই। আর যদি আমাকে কিছু লিখতে দেখেন, তাহলে দেখবেন হয় আমি কবিতা লিখছি, না হয় কোন চিঠি লিখছি। চিঠি কাকে লিখি এই প্রশ্ন করবেন তো? আমি আমার নিজের কাছেই লিখি। আমার কথা আমার চেয়ে বেশী ভাল আর কে বোঝে? তাই আমার কথা আমি নিজেকেই বলি।
আমার না মনেই থাকে না যে কোন এক কালে আমি ‘এঞ্জিনিয়ারিং’ এর একটা মহার্ঘ্য ডিগ্রি নিয়েছিলাম। মনের ভুলেও আমার সেটা মনে থাকে না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম দুই বর্ষ আমাদের পিওর সায়েন্স তো কতগুলোই করতে হয়েছে। কত কত ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথেমেটিক্স করলাম। পাস টাস করে যেতাম আর কি। সবগুলা যে ভাল হত না নয়, তবে এইটুকু বলতে পারি উতরে গেছি। এমতাবস্থায় আমার গ্রেড শিট দেখতে চেয়ে কেউ লজ্জা দিবেন না। সাধারণ মানের ছাত্র ছিলাম। সেই যুগে আমার পড়া সায়েন্সের কিছুই মনে হয় এখন আর পারি না। সব ভুলে ভুলে গেছি। যুগ এগিয়ে গেছে আর আমি সমানুপাতিক হাতে পিছিয়ে গেছি। সায়েন্সের সাথে মনে হয় আমার দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এখন মনে হচ্ছে যোজন যোজন দূর। কয়েকদিন পরে সেটা হয়ে যাবে কয়েক আলোকবর্ষ। নিজের ভিত্তি আর শেকড় থেকে সরে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি আসলেই সায়েন্স এর যোগ্যই ছিলাম না কোনকালে। কিন্তু এটা কেমন উপলব্ধি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। একসময় সায়েন্স পড়ার জন্য আমিই পাগল ছিলাম। কেউ আমাকে সায়েন্স পড়তে বাধ্য করেনি। লেখাপড়ার ব্যাপারে অনেকটা একরোখা হয়ে আমিই সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতি ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন কেন মনে হয় আমি সায়েন্স এর লোক নেই। সবকিছু ভুলে বসে আছি। আমি কতটা ভুলেছি আমার চাইতেও আমার আসেপাশের মানুষগুলো, আমার প্রিয় মানুষগুলো ঠিকই বুঝে নেয়। আমার ঘরের মানুষগুলই বলে, তোমাকে তো সায়েন্সের কিছু পড়তে দেখি না। সারাদিন কি সব ‘হাবাজাবা’ লেখো। আসলেই তাই, আমি সারাদিন হাবাজাবা নিয়েই আছি।
অবাস্তব কিছু কথা বলি। যদি আবার পেছনে যেতে পারতাম, আমি মনে হয় আর সায়েন্সে পড়া পছন্দই করতাম না। যে একরোখা সিদ্ধান্ত গুলো এককালে নিয়েছি সেগুলো অন্যভাবে ভেবে দেখতাম। সময় অনেক পার হয়ে গেছে। যা হয়ে গেছে শোধরানো যাবে না। তাই প্রায়শ্চিত্য করবো বলে ভাবছি। কিন্তু এর কি কোন প্রায়শ্চিত্য হয়? যদি পারতাম আমি হয়তো সরেই যেতাম। যদি পারতাম মনে হয় আমি আমার গন্ডি থেকে সরে যাই অন্য কোথাও। যদি পারতাম তাহলে হয়ত মানুষ হয়েই আর জন্মাতে চাইতাম না। এক মানুষ জন্মে আমার অনেক কিছু দেখা হয়ে গেছে।