প্রিয় এমিল,
কেমন আছো, ভাল আছি, পর সমাচার... এগুলো পুরানো স্টাইল হয়ে গেছে রে! এখন তো আমরা আধুনিক অনেক। এখন আমরা আর চিঠি লিখি না। এখন আমরা ইমেইল করি। সেকেন্ডের মধ্যে যন্ত্রে লেখা কথাগুলো চলে গেল প্রাপকের হাতে। জীবনের গতি অনেক বেড়ে গেছে না রে? আলোর গতি বেশী না ইমেইল দ্রুত যায় সেই গবেষণা আমি করতে যাবো না, ওতে আমার কোন লাভ নেই রে ভাই! আমি শুধু এইটুকুই জানি, আমার বাসায় সেই কলেজের পড়ার দিনগুলোতে লাল রঙের খামে একজন বন্ধু আমাকে চিঠি দিয়েছিল। সেই লাল খামটা আমি অনেক যত্নে খুলেছিলাম। যেন একটু এদিক ওদিক হলে চিঠিটা কষ্ট পাবে। কতবার, কতবার যে সেই চিঠি আমি পড়েছি, আমার নিজেরও মনে নেই। এখনও মনে পড়ে সেই লাল রঙ খামটার কথা। সেই বন্ধুটার কথা। যেই বন্ধুর সাথে আমার এখনও সম্পর্ক আছে। মাত্র এক বছরের ছোট হয়েও যে আমাকে বরাবর বড় ভাইয়ের মত সন্মান দিয়ে এসেছে। আমার সেই ভাইটা নাম এমিল! হ্যা তুমিই ছিলা সেই চিঠি লেখক। কোন এক পত্রমিতালির ম্যাগাজিনে তোমার ঠিকানা পেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তোমার পালটা উত্তর এলো। এরপর কত নদীর স্রোত গতি পাল্টালো! কত নদী হয়ত পানির অভাবে মরেও গেল। কিন্তু মনের থেকে সেই আবেগ আমি কখনও ভুলতে পারিনি ভাই। যখন থেকে আমি ফেসবুক এ অ্যাকাউন্ট খুলেছি মোটামুটি তখন থেকেই তুমি সেখানে আছো। তোমার নাম ধরেই আমি সার্চ দিয়ে তোমাকে পেয়ে গিয়েছিলাম। ইয়াহু মেসেঞ্জারে কত চ্যাটিং করেছি একসময় মনে আছে এমিল? সেও কত কত বছর আগের কথা। যখন তোমাকে চিনেছিলাম তখন আমার বয়স মাত্র ১৯ বছর ছিল। আর এখন তো গড় আয়ুর দুই তৃতীয়াংশের বেশী শেষ করে ফেলেছি। আর কতটুকু বাকী আছে জানি না, কিন্তু যতদিন বেচে থাকবো ততদিন আমার এই ‘ভুবন ভোলানো হাসি দেয়া’ ভাই, আমার বন্ধু এমিলকে আমি ভুলবো না!
আচ্ছা এমিল, মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা? যখন হাতে চিঠি লিখতাম? কলম দিয়ে লিখতে লিখতে হাত ব্যথা করতো, তার পরেও কত কত পৃষ্ঠা চিঠি লিখতাম! এখনও আমার মনে পড়ে সেসব দিনের কথা। এখনও মনে হয়, আহারে কেউ যদি একটু হাতে চিঠি লিখতো! ইমেইলে অনেক লেখা যায় একসাথে, আমি জানি, কিন্তু চিঠির সেই মায়া কি থাকে? আগে তোমার চিঠি যখন পেতাম, প্রতিটা অক্ষরের সাথে মনে হত প্রেরকের কত মায়া, কত ভালবাসা মিশে আছে। প্রতিটা লাইনের আবেগ মনে হয় স্পর্শ করতে পারতাম। কিন্তু ইমেইলে কি সেটা হয়? এখন তো ভিটিও কলিং করেও কথা বলা যায়, দেখা যায়, কিন্তু সত্যি কতে বলতো ভাই, হাতে লেখার চিঠির মায়া কি আছে?
সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন আমি জানতে পেরেছিলাম তুমি ইতালী চলে গেছো। এখনও সেখানেই আছো আমি জানি। আমার আফসোস, আমাদের পরিচয়ের প্রায় ১৯ বছর হয়ে গেল, অথচ এখনও তোমাকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হলো না। আমি শা নিয়ে বসে ছিলাম এই বছর ফেব্রুয়ারীতে তুমি আসবে। তেমনই কথা হয়েছিল তোমার সাথে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের তাই না? সারা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেল করোনা মহামারীর কারনে। তুমি আজও আটকা পড়ে আছো। টিভিতে খবরে যতবার ইতালির কথা শুনতাম, ভাই তোমার কথা মনে পড়ে মন আনচান করে উঠতো। পরে তুমি যখন জানালে তোমার এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব কম তখন কিছুটা স্বস্তি পেলেও পুরোপুরি নয়। কারণ এখনও তুমি দেশে আসার সুযোগ টুকু পেলে না। এদিকে আমি অপেক্ষা করে বসে আছি, তুমি দেশে এসে শুধু দেখা করবো সেটাই নয় বরং তোমার বিয়েটা এবার খেয়েই যাবো। তোমাকে বুজে জড়িয়ে ধরে ঘুচিয়ে ফেলবো ১৯ বছরের তৃষিত ব্যবধান! ভাই তোমাকে কখনই ভুলিনি। শুধু একটাই অনুরোধ! কখনোও মন খারাপ করো না। তোমার হাসি মুখের সাথে মন খারাপটা যায় না। কিছুতেই যায় না। সময়ে একসময় পার হয়ে যাবে। আমরাও হয়ত আর কয়েকটা দিনের অতিথি মাত্র এই পার্থিব মোহময় মহাকালের এই অংশে। কি হবে এত ভেবে এমিল? কি হবে এত দুশ্চিন্তা করে? আমরা কি বাঁচতে শিখতে পারিনা আমাদের নিজেদের জন্য? শুধু অন্যের কথা কেন, একটু নিজের কথাও ভেবো! অনেক ভাল থেকো। ভাই বলে যখন মর্যাদা দিয়েছো, জেনে রেখো, তোমার এই ভাই তোমার সাথে আছে সবসময়।
তোমাকে দেখার অপেক্ষায় ১৯ বছর ধরে,
শাওন