মুসলমানদের নাকি ‘করোনা’ ধরবে না? এই ভাইরাস নাকি ‘বিধর্মী’(!)দের জন্য এসেছে?... যারা যারা এসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন, বা গলাবাজি করে বলে বেড়িয়েছেন, দয়া করে নিজেদের ‘মুসলমান’ পরিচয় আর দিয়েন না। আমার এসব কথা লিখতেও ঘৃণা হয়। একটা মহামারী যখন বিস্তার লাভ করে, সেটা কি মানুষের ধর্ম দেখে আসে? পরকালে কার কি হবে সেটা পরকালের হিসাব, কিন্তু পৃথিবীতে? এই সব আপাদমস্তক ‘মুসলমান’ ছদ্মবেশী মানুষগুলাকে বলতে চাই, আসলে আপনি নিজে নিজেকে কি মনে করেন? আপনি কি কোরান হাদিস পড়েন না? নাকি ওয়াজ করেন শুধু মানুষের মন ভোলানো আজেবাজে কথা বলে টাকা কামানোর জন্য? যে যত রংঢঙ্গের কথা বলতে পারেন, তার তত কাটতি, তার তত টাকা? চশমখোর এই মানুষগুলার কি লজ্জা হয় না?
কোরানের সূরা রুমের ৪১ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ আছে,
“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে।”
এই আয়াতে কি বলা হয়েছে, মুসলমানদের কর্মকান্ড বাদ? নাকি এখানে আপামর মানুষের কথা বলা হয়েছে? সেই সব ‘সো কল্ড’ ধর্মগুরুরা কি মহানবীর সাহাবীদের জীবনী পর্যালোচনা করেন না? মহান সাহাবী হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) এর জীবনী একটু দেখুন। রাসুলের এই মহাত্মা সাহাবী ইয়েমেনে থাকাকালীন ‘প্লেগ’ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে সপরিবারে মারা গিয়েছিলেন। খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর শত অনুরোধেও তিনি ইয়েমেন থেকে মদীনা ফেরত আসেন নি। কারণ, এলাকায় যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, রাসুল সেই এলাকা ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন।
এখন এই করোনার সময়, পুরা পৃথিবী যখন বিপদের সম্মুখীন সেখানে আমরা নিজেদের মুসলমান দাবী করা সত্ত্বেও রাসুলের অমোঘ বানী ভুলে যাচ্ছি? সরকার থেকে শুরু করে আপামর সমস্ত মানুষের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও আমরা ছুটে চলে যাচ্ছি এদিক থেকে ওদিক, যেদিকে আমাদের মন চায়? সারা বিশ্ব যেখানে পেরেশান, সেখানে আমরা বাংলাদেশীরা মনে হচ্ছে কি এক আনন্দ উৎসবে মেতে আছি! বাহ! জাতি বাহ!
নিজেকে মুসলমান ভাবেন? আপনি কি ইসলাম ধর্মের অনুসারী? আখিরাতের হিসাব নিকাশে, আল্লাহর বিচারের কাঠ-গড়ায় দাঁড়ানোতে বিশ্বাস করেন? তাহলে একবার ভাবুন! সেই মহান সত্ত্বা আল্লাহকে ভয় করুণ। আপনার আমার খামখেয়ালী আচরনের কারণে যদি একজন মানুষও ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাহলে, আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কি উত্তর দিবেন? যদি আমার খামখেয়ালীপনার জন্য একজন মানুষের মৃত্যুও হয় তাহলে সেই খুনের হিসাব কার উপরে বর্তাবে? চিন্তা করে দেখুন একবার! রাসূলের এক অমোঘ বাণী স্মরণ করিয়ে দেই, ‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহলে তোমার যা খুশি তাই করতে পারো’। বলতে লজ্জা লাগে, তবুও বলতে হয়, জাতি হিসেবে আমরা মনে হয় লজ্জার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি। কোন ভাল কথাই কেন যেন আমাদের কানে যায় না।