আজকে অনেক্ষণ ধরে ভেবেও কূল পাচ্ছিলাম না যে আসলে ঠিক কি লিখবো। অনেক কিছুই মাথায় আছে কিন্তু কোনটাতেই ঠিক মনোনিবেশ করতে পারছি না। রুমে বসে বসে ঝর্ণার শব্দ আর পাখির কূজন শুনছি ইউটিউবে। বাস্তবে যখন শুনতে পারছি না তখন এই কৃত্রিমতাটুকু না করেও পারছি না। ভাল লাগে যে! প্রবাহমান পানির শব্দ সেটা নদী, সমুদ্র বা ঝর্ণা যেটাই হোক না কেন, শুনতে ভাল লাগে আমার। কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমানোর তো সুযোগ নেই। একবার টেবিলে মাথা দিচ্ছি তো আরেকবার চেয়ারে হেলান দিচ্ছি। শরীর ভালও লাগছে না। ধুর! সবকিছুতেই কেমন যেন একটা অবসাদ অবসাদ ভাব।
মনে হচ্ছে ‘গাছ ধরে নাড়া দেয়া’র মত করে, নিজেকে ধরে তেমন একটা নাড়া দিই। ধুৎ! খালি ঘুম পাচ্ছে। খিদা লাগছে কিন্তু খেতেও ইচ্ছা করছে না। শেলফ ভরা বই। কোনটা রেখে কোনটা পড়ি পড়ি করেও কিছুই পড়া হলো না। দুই একটা সিনেমা দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। মন লাগছে না কিছুতেই। মনে হচ্ছে আজকের দিনটা যদি ফাঁকি দিতে পারতাম কোন রকমে! কিন্তু দায়িত্ব কি অবহেলা করা যায়? পারি না যে! আরো প্রায় চার ঘন্টা বাকী আজকের দায়িত্ব শেষ হতে।
যদিও আজকের সাথে সম্পৃক্ত না, তবুও তিন বছর আগে দেখা একটা স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল। ২০১৬ সালের ৩১সে ডিসেম্বর অর্থাৎ থার্টিফার্স্ট নাইটে দেখেছিলাম এই স্বপ্নটা। পরের দিন অর্থাৎ নতুন বছরের, ২০১৭ এর জানুয়ারীর ১ তারিখে ভীষণ এক ভাললাগা নিয়ে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। মনেই হচ্ছিলো না এটা স্বপ্ন ছিল। এতটাই বাস্তব। অদ্ভুত, ভীষণ অদ্ভুত! সে রাতে আমি কিংবদন্তী শিল্পী মান্না দে কে স্বপ্নে দেখেছিলাম। দেখলাম, আমি কোন একটা মিউজিক স্টোরে গিয়েছি। সেখানে ডেস্কের পাশে এই মহান শিল্পী বসে আছেন। মাথায় উনার পরা সেই টুপি! আমি উনাকে দেখে এগিয়ে গেলাম। শিম্পী আমাকে খালি গলায় একটা গান শুনিয়ে দিলেন। আমার প্রিয় একটা গান। সাধারণত আমার স্বপ্নের কথা খুব একটা মনে থাকে না, কিন্তু এই স্বপ্নটা এতটাই জীবন্ত ছিল যে এটাকে ভোলা যায়নি। মান্না দে উদাত্ত গলায় গেয়ে উঠলেন, ‘এই বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে, চল চলে যাই তুমি আমি...’। গানটা যদিও দ্বৈত সঙ্গীত কিন্তু শিল্পী এই গানের কয়েকটি কলি আমাকে একক ভাবেই গেয়ে শোনালেন। গানটি ‘মাদার’ (১৯৭৯) ছবির গান। ছবিতে মান্না দে গানটি গেয়েছেন আরেক কিংবদন্তী লতা মঙ্গেশকরের সাথে। কিভাবে ভুলি এটার কথা? দু’জনেই আমার প্রিয়।
স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায় অনেক সময় কিন্তু তার রেশ থেকে যায়। কিংবদন্তী মান্না দে কে চাইলেও আর কখনোই বাস্তবে দেখা সম্ভব নয়। তাই আমার কাছে এই স্বপ্নটার গুরুত্বও একেবারে কম তো নয়। স্বপ্নে উনাকে দেখা, আর উনার কন্ঠে গান শুনতে পেলাম, এই বা কম কি আমার জন্য?