২ মার্চ ২০২০

আবার পরিবর্তন! আজ অফিসে এসে শুনলাম আমাদের রুম পরিবর্তন করতে হবে। শুনে একটু অবাক হলাম। গতকাল এসেছে ইমেইলটা। আমি জানতাম না কারণ বাসা পরিবর্তনের কারণে আমি গতকাল ছুটি নিয়েছিলাম। আজ এসে সহকর্মীর মুখে শুনে একটু অবাক হলাম। দেড় বছরের অধিক সময় একটা রুমে কাটিয়ে এসে এখন শুনছি তা পরিবর্তন করতে হবে। এতদিন ছিলাম একা, এখন আমি আর অন্য একজন সহকর্মী। কি আর করা। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বলে কথা। যদিও ভালই ছিলাম। আশাকরি নতুন জায়গাতেও ভালই থাকবো। কারণ আমাদের ভাল থাকা মন্দ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের উপরে। আমি যদি অন্যদের সাথে ভাল হই, তাহলে আমার সাথে খুব সহজে মন্দ হবে কি? তার অবশ্য অনেকটাই নির্ভর করে কাদের সাথে থাকছি বা কাদের সাথে চলছি তার উপরে। তবে জীবনে একটা জিনিসের মনে হয় কোন বিকল্প নেই। একটা নির্দিষ্ট ছকে যতদূর পারা যায়, যে যত বেশী সহ্য করতে পারে, আমার মনে হয় সে ততটা সুখী। আর বেশী সুখী মনে হয় তারাই যারা যত বেশী চুপ থাকতে পারে। মুখের কথাতেই তো কত কিছু হয়ে যায়। এক মুখের কথায় পেছনের সব কিছু ধূলিসাৎ করে দিতেও আমরা অনেকেই এক মুহুর্ত দেরী করি না। অথচ, একটু চিন্তা করে যদি দেখতাম, তাহলে ঘটনা অন্যকিছু হলেও হতে পারতো। সেই সহনশীলতা আমাদের মধ্যে কোথায়।

 

আমি সবসময় আমার নিজস্ব একটা পরিমন্ডলে থাকতে পছন্দ করি আর আমি কখনই চাইবো না, আমার কারণে কারো সামান্যতম কষ্ট হোক, বা কেউ অসুবিধার মধ্যে পড়ুক। আমরা, যারা নিজেদের একটু মিশুক বলে মনে করি, বা আমরা যারা খুব সহজেই নানা রকমের মানুষের সাথে মিশে যেতে পারি, খুব সহজেই আমরা নানা রকম সম্পর্কের উপাখ্যানে জড়িয়ে পড়ি। যত বেশী ভাবাবেগের গভীরতা হয়, ঠিক তত বেশীই সেই সম্পর্কের উপরে আঘাত আসতে থাকে। সম্পর্ক যত বেশী হয় তত আঘাতের মাত্রাও বেশী। এজন্য যদি পারতাম, আসলেই যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ এই নীতিতে চলতে পারতাম তাহলে মনে হয় জীবন অন্যরকম হতেও পারতো। জানি না, এসবই আমার মনের কল্পনা কিনা! হয়ত আমার ধারণা আপনাদের থেকে আলাদা হতেই পারে। আমাদের বাহ্যিক আচরণের মত আমাদের আভ্যন্তরীণ ধ্যান ধারণাগুলোও অনেক বেশী বৈচিত্র্যময়। মূলত এই বৈচিত্র্যময়তাই মনে হয় জীবনের নানা রঙ।

 

একসাথে দুই পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমি খুবই ক্ষীণদর্শী। অনেক কিছুই সামান্যতমও আগ বাড়িয়ে আঁচ করতে পারি না। অথচ মনে হয় পারা উচিত ছিল। এত যে উপন্যাস পড়ছি, তাতে কত রকম মানুষের আচার আচরনের কথা লিখে রেখেছেন সনামধন্য লেখকরা, মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ি যাদের লেখা, অথচ নিজের ধারণার বেলায় তথৈবচ হয়ে যাই। সেখানে কেন একটু আগ বাড়িয়ে চিন্তা করতে পারি না? সরল বিশ্বাসে অনেক কথাই অকপটে বলে ফেলি, আর আমার সামনের শ্রোতা যে সেটা নিয়ে কি চিন্তা করছেন বা করতে পারেন সেটা ভেবে দেখি না। আসলে ভাবতেই পারি না অনেক সময়। আর সেটাই কাল হয়ে যায়। হয়ত মনে মনে অধিকার নিয়ে কাউকে কিছু বলে বসলাম, সেটাই বুমেরাং হয়ে গেল আমার দিকে। সেই কথাগুলোই তীরের তীক্ষ্ণ ফলার মত এসে আমাকেই বিদ্ধ করে। এতে আমি যেমন ক্ষত বিক্ষত হই, ঠিক তেমনি নষ্ট হয়ে যায় সম্পর্ক আর সেই সম্পর্কের আড়ালে লুকানো বিশ্বাস। ঝিনুকের ভেতর লুকানো মুক্তাগুলো আসলে মুক্তা বলেই ভুল করেছিলাম। ওগুলো যে মুক্তা নয়, বরং বিষবটিকা, সেটা আমার ক্ষীণদৃষ্টিতে কেন ধরা পড়বে? আমি যে অদূরদর্শী।

 

‘এখন থেকে দূরদর্শী হব’! বললাম আর কি! ধরে নিতে পারেন কথার কথা অথবা নিজেকে ক্ষণিকের জন্য একটু সান্ত্বনা দিলাম। আবার হয়ত নতুন করে কিছু বিশ্বাস নিয়ে সামনের দিনগুলো, অথবা যদি  পারি সামনের পরিবর্তনের দিকে তাকাবো। দেখি কি অপেক্ষা করে আছে। তবে আজ কয়টা দিন ধরে কেমন যেন একটা মিশ্র অনুভুতি হচ্ছে। কোন চরম সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মনের ভেতর যেমন উথাল পাথাল একটা অনুভুতি হয়ে অনেকটা তেমন। জীবনের প্রথম Dive দেয়ার মত কিছু। আমি Dive দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোথায় Dive দিচ্ছি সেটা এখনও ভেবে দেখিনি। কি হবে এত ভেবে? ভাববো একরকম, আর পরে যদি দেখি অন্যরকম কিছু, আবার নিজেকে দোষারোপ করা শুরু করবো। আর কিছু না পেলে বলে দিব, আমার ভাগ্যটাই না এমন! সবকিছু ভাগ্যদোষের উপরে ছেড়ে দিয়ে আমরা হাত পা ঝাড়া হয়ে বসে থাকতে চাই। কিন্তু ভাগ্য যে আমাদের কর্মফলের উপরেও কতটা নির্ভরশীল, সেটা ভেবে দেখার অবকাশ কোথায়? এখন ভাবতে হচ্ছে। নানা রকম পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছুই ভাবতে হচ্ছে। সম্পর্কগুলো নতুন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। ডালপালা ছেটে দেয়ার মত করে, নিতান্ত অবহেলায় বেড়ে ওঠা পুরনো সম্পর্কগুলো কোনটা নতুন রূপ পাচ্ছে আর কোনটা প্রাণসঞ্জীবনী শক্তি আর নির্যাসের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। আমি মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছু অবধারিত ফলাফলের অপেক্ষা করছি।   

View shawon1982's Full Portfolio