আজ নতুন মাস শুরু হল। নতুন মাসে নতুন বাসায় বসে বসে লিখছি। এটা আমাদের জীবনের প্রথম ভাড়া বাসা। আমরা নিজেরাই পছন্দ করে নিয়েছি। এখন থেকে চেষ্টা করবো যা সাধ্য আছে তাই দিয়েই নিজের জগতটাকে গুছিয়ে নিতে। বলতে গেলে একরকম শূন্য থেকেই শুরু করলাম। কত কিছু কিনতে হচ্ছে। আজকে মাসের এক তারিখ। আমাদের খাট এখনও আসে নাই। খাট হয়ত আজকে বিকালের মধ্যে পেয়ে যাব। ঘর এখনও গুছানো হয় নাই। আমি আর আমার মেয়ে এসে ঘরে ঢুকেই প্রথমে আমার কম্পিউটারের কানেকশন দিলাম। আর দিয়েই শুরু করলাম কম্পিউটারে সেভ করা রবীন্দ্র সঙ্গীতের মূর্ছনা। প্রথমেই স্পীকারের ভেসে আসলো ইন্দ্রানী সেনের কন্ঠে গাওয়া আমার প্রিয় গান, ‘ভালবাসি ভালবাসি...এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি... ভালবাসি ভালবাসি...’। আমি আসলেই ভালবাসি। ভালবাসি আমার নিজের জীবনকে আর আমার জীবনের সাথে জড়িত মানুষগুলোকে। আমার যা সাধ্য তার মধ্যে যা আছে, বৈধ ভাবে যা উপার্জন করতে পারি আমি তাই নিয়েই খুশি আছি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অবারিত দিয়েছেন। আমি অনেক সুখী একজন মানুষ বলেই মনে করি।
মানুষের জীবন নিরবিচ্ছিন্ন সুখ হয়ত থাকে না। থাকে নানা রকমের টানা পোড়েন। এখানে সম্পর্কগুলোও ঠিক থাকে না সবসময়। যা ভেবে রাখি তা হয় না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর মাঝে যখন অমূলক সন্দেহ আর মিথ্যে ঢুকে পড়ে, তখন সবার আগে যে জিনিসটা নষ্ট হয়ে যায় সেটা হল বিশ্বাস। আর এটা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার আশাগুলোও কেমন যেন নিরর্থক মনে হয়। তবে মানুষ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতে শিখে। ভঙ্গদশা থেকে উঠে তো দাড়াতেই হয়। জীবন যে থেমে থাকে না। নিজের নিয়মে চলতে থাকে। তাই আমাদের সবকিছু মানিয়ে নেয়া শিখতে হয়। হয়ত দেরীতে তবুও শিখে নিচ্ছি।
মনে মনে একটাই ভাবনা। এভাবে আর কয়বার বাসা বদলাতে হবে? জীবনে কি থিতু হয়ে বসার সুযোগ হবে না? গড় আয়ু সমান যদি বেঁচে থাকার আশাও রাখি তাহলেও বলতে হবে অর্ধেকের বেশী অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখান থেকে ওখানে, আবার সেখানে এভাবে চলছে। কিন্তু কতদিন? যতদিন একটা নিজের ঠিকানা না হয়? কিন্তু নিজের ঠিকানা আসলে কোনটা? আমার নিজের যদি কোন ঠিকানাই থাকলো, তবে সেখান থেকে আমাকে কেন বহিঃস্কৃত হতে হবে? অন্য কিছু ভাববেন না যেন। আমি পৃথিবী থেকে বহিস্কারের কথা বলছি। আমাদের আয়ু তো শেষ হবেই। পৃথিবীর যদি কোন অবস্থান আমার ঠিকানা হয় তবে মৃত্যুর পরবর্তী পথ কি কবে? সেখানে আমার অবস্থান কোথায়? পৃথিবীই কি শেষ? পৃথিবীরও সবকিছুর শেষ আছে। বস্তু, মানুষ, সখ্যতা, ভালবাসা... একসময় মনে হয় সবকিছুই নিঃশেষিত হয়।
বাসা বদলের কাজ কম নয়। নেই নেই করেও কত কিছু জমে যায়। খুঁজতে খুঁজতে এমন জিনিসও পাওয়া যায় যার কথা হয়ত মনেই ছিল না। আবার অনেক কিছুই হারায়েও যায় চিরতরে। পুরানোর সাথে অনেক কিছুই হারিয়ে যায় চিরতরে অথবা গেছেও। আফসোস করেই বা আর কি লাভ? আমার আজকের সব লেখাই খাপছাড়া। কি বলতে গিয়ে কি বলেছি নিজেই জানি না। চেষ্টা করবো এরপর থেকে গুছিয়ে গুছিয়ে লেখার জন্য। আজকের আগোছালো লেখার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।