বৃষ্টির শব্দ কতদিন শুনি না! আমার খুব ভাললাগা কাজ করে বৃষ্টির শব্দ শুনতে। ছোটবেলার সেই স্কুল দিনগুলোতে আমাদের টিনশেডের বাসার ছাদে ঝম ঝম করে যখন বৃষ্টি পড়তো, সেই বৃষ্টির শব্দ অনেকদিন শুনি না। কি এক অদ্ভুত ছন্দে বেজে যায় পুনঃ পুনঃ বৃষ্টির শব্দ। শহরের দালানকোঠায় থেকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বেশীর বেশী বৃষ্টি দেখা যায় কিন্তু পাকা জলছাদের উপরে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কোন শব্দ ঝঙ্কার যে তুলতে পারে না। শহরের দালানকোঠাগুলোর মতই শহুরে বৃষ্টিও বড় নিষ্প্রাণ! ওতে শব্দ নেই, ওতে প্রাণ নেই! অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে থেকেও প্রানের স্পন্দন পাই না তাতে! এ কেমন বৃষ্টি?
আমার কাছে খুব স্বপ্নের মত লাগে একটা দৃশ্য! একতলা বাসা, টিনের ছাদ, সামনে খোলা উঠোন! উঠোনের চারপাশে নানা রকমের গাছ গাছালি। ঝুম ঝুম শব্দে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, গাছের পাতাগুলো দুলছে বৃষ্টির ফোঁটার দোলায়, আর আমি দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করে সারা গায়ে মেখে নিচ্ছি বৃষ্টির মুক্তো-ক্ষরা ফোঁটাগুলো। কেউ থাকবে না আমাকে বাঁধা দেয়ার। শুধু আমি আর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। গাছগুলো যেন অবাক হয়ে বলবে, ‘এ এমন করে ভিজছে কেন? বৃষ্টিতে ভেজার কি আছে? আমরা তো নিয়মিতই ভিজি! কই আমাদের তো এমন আনন্দ হয় না!’ তখন আমি ওদের বলবো, যত খুশি ইর্ষায় মেতে থাকো তোমরা, আজকে আমাকে বৃষ্টিতে ভেজা থেকে কেউ নিবৃত করতে পারবে না। আজকের এই অঝোর-ধারা শুধুই আমার জন্য। এই চিন্তা করতে করতেই আমি স্বপ্নের জগতে চলে যাই, আজকের বৃষ্টি শুধুই আমার। কেউ আমার সাথে থাকুক আর না থাকুক, আজকের বৃষ্টি শুধুই আমার! এই ঝম-ঝম শব্দ এই সুর-লহরী সব কিছুই আমার। নশ্বর ঐশ্বর্য থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায়, কিন্তু আমার মনের ভেতরে যে ঐশ্বর্য আমি লালন করেছি, কে আছে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়?
আমার মাঝে মাঝে কি হয় জানেন? একটা রাস্তা ধরে আমি হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাব। রাস্তার দুপাশে থাকবে কিছু পুরনো আমলের প্রাচীন ঘরবাড়ি। অনেক অনেক আগের স্থাপনা। এখন আর কেউ থাকেনা। পোড়োবাড়ি যাকে বলে। অনেক অনেক দিনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেসব বাড়ি। বৃষ্টি ঝরে পড়ছে মুষলধারে। আমি দুপাশের স্থাপনা দেখতে দেখতে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে একা একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি কোন এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। বাড়িগুলোতে যেমন কেউ নেই, আমার সামনেও তেমনি কেউ নেই। শুধু আমি একাকী চলেছি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। আশপাশে কেউ নেই। কিছু নেই।