আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী। অনাগত দিনের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি বেঁচে থাকি তবে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। আমার মরুচারী জীবনের মধ্যে এক নতুন অন্য এক দেদীপ্যমান কাব্যিক জীবনের শুরু। কথাটা একটু ধোঁয়াশা করে বললেও এটাই সঠিক। অলীক কিছু পিছুটান আর মরীচিকার পেছনে এতদিন ছুটে ছুটে বড় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন মনে হয় সেই সময় এসেছে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার। শূন্যের পর শূন্যের বসতি গড়ে তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম শূন্যগুলোর সর্ববামে মনে হয় একটা ‘এক’ আছে। কিন্তু আমার ভুল ছিল। শূন্য গুলো ছিল কলম দিয়ে লেখা আর সর্ববামের ‘এক’টা লেখা ছিল পেন্সিল দিয়ে। ক’বছরে সেই পেন্সিলের দাগ এমনিতেও হালকা হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি সেই ‘এক’টা মুছে ফেলা হয়েছে। এখন আমার সামনে শুধু একরাশ শূন্য। সেই শূন্যের বুদ্বুদ ঠেলে আমি উপরে উঠে নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টা করছি। বেঁচে থাকার আশা এখনও স্তিমিত হয়ে যায়নি। প্রাণের স্পন্দন এখনও কিছুটা বাকী আছে।
কম্পিউটারে একটা Re-start বাটন থাকে। যখন কম্পিউটারটা বেমক্কা হ্যাং হয়ে যায়, কিছুতেই যখন কিছু করা যায় না, তখন আমরা বাধ্য হয়ে রিস্টার্ট বাটনটা চেপে দেই। সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হয়ে যায়। ঠিক তেমনি করে আমিও আমার জীবনের একটা রিস্টার্ট বাটন চেপে দিয়েছি। এখন সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। সব কিছু আবার নতুন করে গোছাতে হবে এবং সেটা সেই শূন্য থেকে। করবো করবো করতে করতে অনেক দেরী হয়ে গেল। তবুও তো শুরু। ইংলিশে একটা প্রবাদ আছে Better late than never! আমার অবস্থাও অনেকটা তাই। হোক না দেরীতে। তবুও তো শুরু। পুরনোকে ভুলে গিয়ে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হোক।
নাই নাই করেও আমার জীবনে যুক্ত হয়েছে অনেকগুলো বই, আর সেই বই গুলো রাখার জন্য তিনটা বানানো বুক-শেলফ বা বই রাখার আলমারি! নিজেকে বইয়ের ভেতর হারাতে আমার সবসময়ই ভালও লাগে। কেউ যখন পাশে থাকে না তখন নিজে নিশ্চুপ হয়েও যে ক্রমাগত কথা বলে সঙ্গ দিয়ে যেতে পারে সেটা হল বই। শেলফ থেকে বইগুলো নামিয়ে যখন কার্টনে ভরছিলাম, তখন আমার মনে হচ্ছিল ওরা যেন কিছুটা বিস্মিত হয়ে আমাকে বলছিল, আবার কোথায়? আমি ওদের উত্তর দেই নি। ওরাই দেখে নিক অনাগত গন্তব্যকে। সব বই কার্টনে ভরে ফেলেছিলাম। শুধু দুইটা বই বাকী রেখে দিলাম। ঐ দু’টা বই আমি আমি হাতে করে নিয়ে এলাম আমার আপাত অস্থায়ী নিবাসে। গাড়িতে যখন উঠি তখন আমার একহাতে আমার সেই স্কুল জীবন থেকে পাঠ করে আসা কোরাণ-শরীফের কপিটা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত ‘গীতাঞ্জলী’ গ্রন্থটি। আর অন্য হাতে একটা ছোট্ট কাছের গ্লাসে পানি দিয়ে রাখা একগোছা মানিপ্ল্যান্ট! আমার হাতের দোলায় দুলছিল ওর সতেজ পাতাগুলো! একটুকরো জীবনের স্পন্দন! এক হাতে তুলে নিলাম আমার ইহলৌকিক-পারলৌকিক মঙ্গল বাণী আর সেই সাথে কিছু অমূল্য কাব্যমাল্য যা আমার শুষ্ক হৃদয়ে জলসেচ করে। আর অন্যহাতে সৃষ্টিকর্তার এক মূক-সৃষ্টি! যে কিছু না বলেও আমাকে অনেক কিছু বলে! আমাকে বলে, বেঁচে থাক আরো কিছু দিন!