২৮ জানুয়ারী ২০২০

পাবলিক বাস এ প্রতিদিন চড়ে অফিসে আসি। এর মজাই আলাদা। প্রতিদিন নতুন নতুন সহযাত্রীর সাথে দেখা। তাদের নানান ধরণের কর্মকান্ড দেখেতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়। সেই ছোটবেলা থেকেই পাবলিক বাসে চড়ে আমি অভ্যস্ত। ক্লাস সিক্সের মাঝের দিক থেকে একা একাই পাবলিক বাসে চলাচল করি। নতুন চাকরী যখন পেলাম, তখন আমাকে কেউ কেউ বলেছিল, এবার একটা গাড়ি কিনে ফেল! আমি বলেছিলাম, গাড়ি কিনবো কি করে? আমার সেটা কেনার সামর্থ্য নেই। প্রতিদিন Uber এ চড়া বা গাড়ি হাকিয়ে চলাফেরা করার কোন সামর্থ্য আমার নেই। আয় উপার্জন যেটা করি সেটা অনেক ভেবেচিন্তে আমাকে খরচ করতে হয়। মধ্যবিত্তের জীবন বলে কথা। উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা অনেক কিছু চাইলেই করে ফেলতে পারে। কিন্তু যারা প্রতি পদে পদে বাধা পেয়ে বসে থাকে আর কষ্ট পেতে থাকে তারা হল মধ্যবিত্ত। আর যদি কোন ভাবে একটা গাড়ি কিনেও ফেলি, সেটা মেইনটেইন করবো কিভাবে? আমি তো গাড়ি চালাতে জানি না। কোনদিন শেখার চেষ্টাও করিনি। আমার ভাল লাগে না।

 

কোন ধরনের যন্ত্রপাতি বা ইলেক্ট্রনিক জিনিসের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই। ছিলও না কোনকালে। কোন লেটেস্ট মোবাইল এল গেল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাজ চলছে এমন কিছু একটা ব্যবহারযোগ্য জিনিস আমার হাতে থাকলেই হল। এসব জিনিসের জন্য ব্যয় করা আমার কাছে অপচয়ের শামিল। করি না। যে জিনিসের জন্য আমি অকুন্ঠ চিত্তে খরচ করতে দ্বিধা করি না, সেটা হল বই। নতুন নতুন বই পড়তে না পারলে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে সবচেয়ে ভাল দেয়া সময় আমি সেটাই মনে করি যেটুকু সময় আমি বই পড়ি। ছিলাম পাবলিক বাসে চলে এলাম বইতে! আমি এমনই।

 

গাড়িতে উঠলেই আমার কেমন যেন ঘুম আসে। ড্রাইভিং এর প্রতি আমার আগ্রহ না জন্মানোর অন্যতম কারণ এটাও। আমার জার্নি করতেও যেমন ভালও লাগে তেমন গাড়িতে উঠে ঘুম দিতেও ভালও লাগে। গাড়িতে ঘুম যে খুব বেশী আনন্দদায়ক হয় সেটা কিন্তু না, তবুও ঘুম তো! ছাড়া ছাড়া টুকরো টুকরো ঘুম! মানুষের কথা শুনি আবার ঘুমাই। একটু তাকিয়ে দেখি কই এলাম, আবার ঘুমাই! পাবলিক বাসে উঠে ঘুমের কারণে আমার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে কয়েক দফা। যেখানে নামার কথা সেখানে নামতে পারিনি। কয়েক স্টেশন পার হয়ে গেছে। সেখান থেকে আবার আমাকে ফেরত আসতে হয়েছে। এজন্য এখন পাবলিক বাসে উঠে বসলে আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হয়।

 

পাবলিক বাসে প্রতিদিন আমাকে যে জিনিসটা নিয়মিত দেখতে হয় বা শুনতে হয় সেটা হল বাস ড্রাইভার সাহেবের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেয়া কিছু অশ্রাব্য বাংলা শব্দ। শুনি প্রতিদিন কারণ নির্বিকার ভাবে শুনতেই হয়। আমি বলছি না ড্রাইভাররা ধোয়া তুলসি পাতা! কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে যারা গালিগুলো ছুঁড়ে দেন, তারা আমাদের মতই আমাদের আশেপাশের মানুষ! আমাদের সহনশীলতা দিন দিন কেমন যেন কমে যাচ্ছে। যেহেতু ট্র্যাফিক-জ্যাম আমাদের শহরের মোটামুটি নিত্যদিনের সঙ্গী তাই আমি এমন ভাবে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হই যেন আমার তেমন কোন সমস্য না হয়। এই আগে বের হওয়া কে আমি সময়ের অপচয় মনে করি না কারণ বাসে বসে থাকার সময়টাতেও আমি মাঝে মাঝে পড়তে চেষ্টা করি আর না হলেও কমপক্ষে আমার আসেপাশের সহযাত্রীদের কর্মকান্ড দেখতে থাকি! প্রতিটা মানুষ কত আলাদা!

 

একবার বাসে উঠে দেখি ড্রাইভার সাহেবের ঠিক পিছে বসা এক মহিলা, এক এর পর এক গান গেয়ে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিঞ্চিত মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মহিলা। যা হোক আমি তার পিছে বসেই গান উপভোগ করছি। মহাখালীতে যেই একটা সিগনালে দাঁড়ালো বাসটা, মহিলা মনে করেছে বাসওয়ালা গাড়িটা ইচ্ছে করে থামিয়ে যাত্রী নিচ্ছে। এই ভেবে গানের কলির মাঝখানে এমন ভাবে অশ্রাব্য একটা গালি বর্ষণ করলো ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে যে মুহুর্তেই আমি চমকে উঠে হাতের উপর রাখা একটা ফাইল ফেলে দিলাম! গালি একটা দিয়ে মহিলা আবার নির্বিকার ভাবে গান গাইতে শুরু করলো। এক বরই ওয়ালা উঠলো, তার কাছ থেকে এক প্যাকেট বরই নিয়ে নির্বিকার ভাবে খেতে লাগলো। মহিলার অবস্থা থেকে বরইওয়ালা টাকা চাওয়ার সাহস ও পেল না।

 

এমন অনেক অনেক কিছুই আছে। কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। আবার মনে হয়... আজ আর থাক!  

View shawon1982's Full Portfolio