শীতের দাপটে দেখি সবাই কেমন কাবু হয়ে পড়েছে। গোসল নিয়ে সবার সে কি থ্রিল! ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে গোসল নিয়ে সবার কেমন মাতামাতি! শীত বেশী হলেও সবার হাহাকার আবার গরম বেশী হলে তো কথাই নেই। আমার কোনটাতেই তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। মানিয়ে নিতে হয় আরকি। শিখে গেছি। কারণ আমার হাজার লাফালাফি দাপাদাপিতেও শীত গরম কোনটাই কমবে না। তবে শীত আমার সবসময়ই ভাল লাগে। শীত আমাকে কাবু করতে পারেনা খুব একটা। আগে তো সোয়েটার পরতাম, এখন শুধু একটা চাদরই যথেষ্ট আমার জন্য। চাদর আমার প্রিয় শীতের পোষাক। জ্যাকেট কবে শেষ পরেছি মনে পড়ে না। আমার অনেক শখ একটা ভাল দেখে লেদার জ্যাকেট পরি, কিন্তু বাংলাদেশে সেটা পরার সু্যোগ কই? আমার আর কেনা হয়ে ওঠে না লেদার জ্যাকেট। শাল বা চাদর দিয়েই কাজ চলে যাচ্ছে। শীত যতই আসুক না কেন, আমি নিয়মিতই ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করি। আমি কখনই গরম পানি দিয়ে গোসল করি না। কারণ গরম পানিতে গোসল করলে পরে ঠান্ডা আরো বেশী লাগে কিন্তু ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শীতের প্রকোপ অনেকটাই কমে যায়। কথায় বলে না, ওস্তাদের মাইর শেষ বেলা!
বাংলাদেশের সর্বনিম্ন শীত পড়েছিল আমার যতদূর মনে পড়ে ২০০৩ কি ২০০৪ এ এবং তাপমাত্রা মনে হয় প্রায় ৪ কি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। সংখ্যার মানে আমার একটু ভুল হলেও হতে পারে। তখন ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমার মনে আছে, ওইদিন কুয়াশায় ক্যাম্পাসে ভালমত কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। আমি বিন্দাস একটা কালো রঙের হাওয়াই শার্ট আর গ্যাবাডিনের একটা ফুল প্যান্ট পরে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। এখন পারি না। এখন একটু শীত শীত লেগে বসে। ক্যাম্পাসে সবাই দেখি আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকায়! কেউ কেউ আমাকে পালোয়ান খেতাব দিয়ে বসলো! কি মুশকিল! শীত কম লাগে বলে আমি পালোয়ান হতে যাব কেন? নানুবাড়িতে একবার শীতের সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি গেঞ্জি প্যান্ট পরে? নানু আতঙ্কিত হয়ে বললো, তুমি শীতের কাপড় পর নাই কেন? আমি বললাম, পরা লাগে নাতো, এটা কি এমন শীত। উনি বললেন, পরো পরো! লোকে তোমাকে দেখলে বলবে এই ছেলেটার বুঝি সোয়েটার নাই! অগত্যা কি আর করা, শীতের জন্য না রবং অন্য লোকের সামনে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে আমাকে সোয়েটার পরে নানুকে দেখাতে হল। উনি দেখে বললেন, এইবার ঠিক আছে। দেখতো কেমন সুন্দর দেখা যাচ্ছে!
২০০৩ এর শেষের দিকে। তখন আমাদের PL চলছে। মানে হল প্রপারেটরি লিভ। ভার্সিটিতে পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহের PL দেয়ার নিয়ম ছিল। আমরা অবশ্য বলতাম, ‘পাছায় লাত্থি’। তখন আমি আর আমার বন্ধু আরিফ একসাথে আমাদের বাসায় গ্রুপ স্টাডি করছি। বেজায় ঠান্ডা। হাট পা জমে যাওয়ার মত অবস্থা। Thermodynamics পড়তে পড়তে জীবন যখন প্রায় ‘পেয়াজের বেরেস্তা’ টাইপ হয়ে গেছে, তখন আরিফ বললো, চল Dynamic কিছু করতে হবে। আমি বললাম কি করবি? ও বললো, চল আইসক্রিম খাই বাইরে গিয়ে। আমি এক কথায় রাজি। শীতকালে আইসক্রিম খাবো এ আর এমন কি। যে কথা সেই কাজ, দুই বন্ধু বের হয়ে আসলাম। বাসার কাছে ঈদগাহ ছিল। ওখানের একটা দোকান থেকে দুইজন দুইটা কোন আইসক্রিম কিনে বেশ আয়েশ করে চেটে চেটে খেতে লাগলাম! শীতের মধ্যে আইসক্রিম, সত্যি বলছি, খেয়ে দেখবেন ভাল লাগবে। সহজে গলে যাবে না। লম্বা সময় নিয়ে খাওয়া যায়। মজাই আলাদা। আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটি আর বেশ বীরত্বের সাথে আইসক্রিম খাচ্ছি। রাস্তায় যারা ছিল তারা সবাই আমাদের দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকাচ্ছিল। আমরা আইসক্রিম শেষ করে আবার ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিওন। অর্থাৎ আবার সেই বিখ্যাত Thermodynamics নিয়ে পড়তে বসলাম। ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা খেয়ে আসা সত্ত্বেও মাথা যথেষ্ট গরম হয়ে যাচ্ছিল।