৭ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রিয় সুদীপ্ত,


ভাই, তোমার সাথে প্রায় রোজ কথা হয়, তারপরেও প্রতিবারই মনে হয় কত কথা আরো বলার ছিল। এই লেখার পরেও আমার সেটাই মনে হতে থাকবে। কারণ কি জানো? মানুষ কি এক জীবনে পারে তার নিজের সাথে কথা বলে শেষ করে ফেলতে? কেউ কোনদিন পারেনি। কাজেই আমিও পারবো না। তোমার সাথে আমার হয়ত বয়সের বেশ কিছুটা তফাৎ আছে ভাই, কিন্তু তোমার সাথে কথা বলে আমি এটাই বুঝেছি, চিন্তা ভাবনা আমাদের একই রকম। আমার নিজের চিন্তাগুলো কি অবলীলায় তোমার সাথে যেন মিলে যায়। ধর্ম-মত নির্বিশেষে আমি সবাইকে যেমন শ্রদ্ধার চোখে দেখেছি, তুমি তো ঠিক তেমনই! ‘সবসময় তুমি এমনই থাকবে’- এই উপদেশটা আমি তোমাকে দেবার কোন দরকার মনে করিনা, কারণ আমি জানি তুমি সব সময় এমনই।

 

তোমার সাথে প্রথম যখন দেখা হল সেমিনারে, আমি হল থেকে বের হয়ে আসছিলাম। তুমি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে সামান্য দু’একটা কথা বলার সুযোগ পেলে আমার সাথে। আমারও তেমন সময় ছিল না। কিছু সৌজন্য কথা আর আমার কার্ডটা তোমাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা কি জান, জীবনে বেশ কয়েকবার মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম তো, তাই এখন মোটামুটি ধরতে পারি কে আসলে কেমন। তোমার সাথে সামান্য দুই কথাতেই বুঝেছিলাম আমার সামনে দাঁড়ানো এই ছেলেটি আমারই একটা প্রতিবিম্ব, কিন্তু একটি ভিন্ন অবয়বে। এরপরে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম যখন দেখেছি তুমি আমাকে ফেসবুকে যুক্ত করেছ বন্ধুর তালিকায়। এরপরে কতবার কত বিষয়ে তোমার সাথে কথা হল।

 

তোমার ফটোগ্রাফির কিছু নমুনা তুমি আমাকে দেখিয়েছো। তাঁর মধ্যে লাল কাঁকড়ার ছবিটা দেখা মাত্রই আমার মোবাইল আর ডেস্কটপের ওয়ালপেপার হয়ে বসে আছে! আমার মনে হয়, আমি যদি কখনও একক কোন বই প্রকাশ করি, তাহলে তোমার এই ছবিটা দিয়েই প্রচ্ছদ করবো। তুমি এরপরে ঢাকা যখন আসবে তখন আরো কিছু ছবি তুলে নিয়ে যেও। আমি দেখতে চাই কিভাবে ছবি তোল। কারণ আমি যে একেবারেই আনাড়ী। তোমার ভাবী আমাকে সারাক্ষণ ওয়ার্নিং দিতে থাকে, খবরদার তুমি ছবি তুলবা না, কারণ তুমি ছবি তুলতে পারো না! তোমার ভাবীর এই ওয়ার্নিং শুনে আমার একটা নারীবাদী কথা মনে হয়। সম্ভবত তসলিমা নাসরিনের লেখা। আমি ঠিক নিশ্চিত না তবে পড়েছিলাম কিছুটা এমন। ‘তুই মাইয়া, তুই কথা কইস না!’

 

মাঝে মাঝে তোমার সুন্দর সুন্দর হাসি দেয়া ছবিগুলো দেখি। আগেরগুলো তো ঠিকই আছে। কিন্তু এখন যেসব ছবি দিচ্ছ, তাতে তোমার হাসির দিয়ে ঢেকে রাখা বিষাদের চিহ্ন আমি বুঝতে পারি। আমি জানি, তোমার এই বিষাদ খুব সাময়িক। অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে সব। আমার যখন মন খারাপ হয় তখন আমি কি করি জান? নিজেকে আমাদের এই পার্থিব পৃথিবী থেকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে নেই। আমার নিজের বানানো আরেকটা পৃথিবী আছে। আমি আমার সেই পৃথিবীটা একদম নিজের মত করে সাজিয়েছি। এমন একটা পৃথিবী যেটা একান্তই আমার। আমার চেনা গন্ডির সবগুলো দরজা একসাথে বন্ধ করে দিয়ে আমি আমার জগতে চলে যাই। আমার জগতে অনেকগুলো খোলা জানালা আছে। সেই জানালা দিয়ে আমি আমার নিজস্ব আকাশটাকে দেখি। যখন আকাশ থেকে বৃষ্টি নামে আমি সেই বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখি। পার্থিব বৃষ্টিতে মনের দুঃখ ধোওয়া যায় না কিন্তু আমার কল্পনার সেই অপার্থিব জগতে এটা হয়। সেখানে আমার আশপাশে বাজতে থাকে আমার ভীষণ প্রিয় কিছু সুরের মূর্ছনা। আমি হারিয়ে যেতে থাকি নিজের অতল থেকে অতলান্তিকে। আমার এলোমেলো ভাবনা ঠিক হয়ে যায়। আমি ফিরে আমি এক নতুন শক্তি নিয়ে আমার ফেলে আসা সেই পার্থিব ভুবনে। তখন মনে হয়, আমি পারবো আবার এগিয়ে যেতে। আমি নতুন উদ্দমে ফিরে আসি সামনে ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকা বিকৃত বিঘ্ন-সংকাশ প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে। এরপরে আমি যখন সময় পাই, আমি লিখতে থাকি। একেবারেই নিজের মত করে লিখতে থাকি। এখানে আমি স্বাধীন। আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমার স্বাধীনতা, আমার স্বকীয়ত্‌ আমার নিজস্বতা, একান্তই আমার তৈরী।

 

তুমিও পারবে সুদীপ্ত। তোমার নিজের নামের দিকে তাকাও। নিজের মনের ভেতর সেই প্রদীপ জ্বেলে দাও, যেই আলোর প্লাবনে মনের সব দুঃখ চিরতরে ভেসে চলে যাক। মহাকালের স্রোতে আমরা একসময় হারিয়ে যাব। কেমন মজা হবে বলতো, কেউ জানবে না যে আমাদের একটা নিজেদের বানানো একটা পৃথিবী ছিল।

ইতি,

তোমার ভাই।  

View shawon1982's Full Portfolio