ইদানিং মাঝে মাঝে মনে হয় কেমন যেন ভুলে যাচ্ছি। অনেক কিছুই মনে থাকছে না। সেদিনই তো, একটা পেনড্রাইভ না পেয়ে সারা বাসা তুলকালাম কান্ড করে ফেললাম। খুঁজেই পেলাম না কই রেখেছি। একটা ড্রয়ার এর চাবি ছিল না। চাবির মিস্ত্রি ডেকে ড্রয়ার খোলালাম, সেখানেও নেই। অথছ এর কয়েকদিন পরে বাসের মধ্যে টিস্যু পেপার খুঁজতে গিয়ে টিস্যুর প্যাকেটের মধ্যে দেখলাম ওটা ওখানেই আছে। একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই পেনড্রাইভটাকে বাঁচাতে গিয়ে অতি সতর্কতায় সেখানে রেখে আমার এই সপ্তাহ খানেকের বিড়ম্বনা পোহাতে হল। আমি খুব সামান্য সামান্য জিনিস খুঁজে না পেলেই একেবারে কাতর হয়ে যাই। আর তখনই আমাকে শুনতে হয়, আমার স্মৃতিশক্তি নাকি আর আগের মত নেই। বেশ! মেনে নিলাম। বয়স ও তো হয়ে যাচ্ছে। আর কত! কোন জিনিস আর আগের মত থাকে? সবকিছুই তো পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রিয় মানুষ, প্রিয় মুখ, প্রিয় সম্পর্ক সবকিছুই পরিবর্তন হয়। কিছু সময়ের সাথে হয়, কিছু আমরা বানিয়ে নেই। নেয়া ছাড়া উপায় থাকেও না অনেক সময়। শুধু পরিবর্তন যা হয় না তা হল আমাদের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো। ওগুলো পরিবর্তন হবার উপায় নেই যে। মাঝে মাঝে মনের ভেতর উঁকি দিয়ে যায় কিছু কিছু। সেগুলোই ভাবায়, ওদের নিয়ে ভাবতে ভালও লাগে। কিছুটা সময় পার হয়ে যায়। ইংরেজীতে যাকে বলে নস্টালজিক করে দেয়। তেমন কিছু কিছু স্মৃতি আমার আছে। ভুলি না। ভুলতে দেইও না। নিজেকে নিজের নির্দোশ এই আনন্দ দেয়া থেকে কেন বিরত রাখবো? সামান্য স্মৃতিই তো! কারো তো কোন ক্ষতি করছি না সেগুলো রোমন্থন করে।
আজ আমার মনে পড়ছে সেই আশির দশকের একটা স্মৃতি। তখন আমি, আম্মু আর ছোটখালা খালু একই বাসায় থাকতাম। আমার বড় খালার বাসায়। তখন আমার বয়স এই পাঁচ কি ছয় হবে। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সালের ভেতর সময়কাল। ছোটখালার একটা স্টীলের আলমারি ছিল। চাবি দিয়ে যখন খুলতো তখন খট খটাং করে একটা বিশেষ ধরনের শব্দ হত। যখন এই লেখা লিখছি, তখনও মাথার ভেতর বেজে চলেছে ছোটখালার সেই আলমারি খোলার শব্দ। শব্দটা পেলেই আমি একদৌড়ে খালার কাছে হাজির হয়ে হাত পেতে দাঁড়িয়ে যেতাম। উদ্দেশ্য একটাই। জানতাম খালা আমার হাতের তালুর উপরে অতি ছোট সাদা রঙের একটা টাবলেট দেবেন। হাতের তালুর উপর যা অতি নগন্য। ওটার নাম ছিল ‘সুইটেক্স’। আসলে ওটা ছিল আর্টফিসিয়াল সুইটেনার। বানিজ্যিক নাম ‘স্যাকারিন’ আর রাসায়নিক নাম Sodium saccharin। মুখে দিলে প্রথমে তিতা লাগতো। এরপর সারা মুখ মিস্টি হয়ে যেত। ২০০৭ এ একবার আমি দোকানে সুইটেক্স দেখে কিনেছিলাম। বাচ্চাদের মতই হাতের তালুতে নিয়ে খেয়েছি। মুখ তিতা হয়ে এরপর মিস্টি হয়ে গেছে। মুখ কতটা মিস্টি হয়েছিল তার হিসাব করে লাভ কি? আমার মনের বাল্যস্মৃতিটুকু অন্তত আমার মনটাকে মিষ্টি করে দিয়েছিল নিঃসন্দেহে। ছোটখালা আমাকে দেখলেই আমার ছোটবেলার নানা কথা মনে করে হাসাহাসি করেন। আমারও ভাল লাগে। আমার ছোটবেলা আমার কাছে উনাদের মুখে জীবন্ত হয়ে ওঠে। সুইটেক্সের কথা উনার মনে আছে কিনা জানি না। জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।