ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ সবাই কি অকপটে করতে পারে? আমি কি পেরেছিলাম কখনো? আমি পেরেছি কি পারিনি, সে অনেক দূরের প্রসঙ্গ। মূলত আমার কাছে ভালবাসা কি জিনিস সেটাই কখনও প্রকট হয়নি। আমি অনেককে অনেক কিছু বলতে শুনেছি। কিন্তু এমন কোন উত্তর পাইনি যেটা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে। কেতাবী অনেক কথা অনেক শুনতে পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো আমার মনোঃপুত হয় না। আমি মূলত খুঁজতে চেষ্টা করেছি, ভালবাসা একটা ছেলের কাছে আসলে কি? কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা সিনেমাতে ভালবাসা এক এক ভাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু আসলে এটি কি? একি কি এক ধরণের হাহাকার? আমি অনেককেই অকপটে জিজ্ঞাসা করেছি। যারা প্রেম করে, তারাও আমাকে ঠিকঠাক বলতে পারেনি। যখন কোনভাবেই আমাকে বোঝাতে পারে না, তখন তাদের কথা শেষ হয় এভাব, “এটা আসলে বলে বোঝানো যায় না”। কেউ কেউ আবার বলেছে না পাওয়ার বেদনার নাম হল ভালবাসা। কিছুটা কবিতার মত শোনা গেল কি? বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালবাসাকে খুজতে যাই নি কখনও। এখানে আমাকে বাগ অনুভুতির সাথে ভালবাসাকে ব্যাখ্যা করা হবে। হয়ত তাই, কিন্তু তাতে তো ভালবাসার স্বরুপ বোঝা যায় না। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের ভালবাসার স্বরুপ কি একই রকম হয়? তাদের অনুভুতি কি একই রকম হয়? এটা আমার কাছে অনেক প্রশ্নের মতই একটা অমিমাংসিত এক প্রশ্ন।
আমার পরিচিত এক ছোট ভাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষে পড়ে। সে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে একটা মেয়ের ছবি পাঠালো। আমি বুঝে নিলাম হয়ত মেয়েটিকে ওর ভাল লাগে। লাজুক স্বভাবের কারণে ছেলেটি এখনও কোন “প্রেমিকা” খুঁজে পায় নি এখনও। এজন্য মাঝে মাঝে সে কিছুটা উদাস হয়ে যায় কারণ সে চোখের সামনেই দেখতে পায় তার বয়সী ছেলে মেয়েরাই হাত ধরাধরি করে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। আমি ওকে বার বার প্রশ্ন করেছি এই ব্যাপারে। কিন্তু আমার কখনই মনে হয়নি যে ভালবাসাকে ও অপরিহার্য কিছু বলে মনে করে। কিছুদিন আগে আমাকে বলেছিল, যখন চোখের সামনে দিয়ে বন্ধুদের প্রেম করতে দেখি, তখন একটু হলেও খারাপ লাগে ভাই! আমি বলেছিলাম তাহলে তুমিও প্রেম কর না কেন? উত্তরে বলেছিল, আমার দ্বারা এসব হবে না ভাই। ওর উত্তর গুলা সবসময় এমনই হয়। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে সবসময়। এমন ঘটনা শুধু ওর ক্ষেত্রে কেন, আরো অনেকের ক্ষেত্রেই হতে পারে। হয়ত পছন্দ করে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। বাংলায় প্রবাদ আছে না, বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না! ওর অবস্থা হয়ত তেমনই কিছুটা। আজ যখন ছবিটা আমাকে দেখালো, তখন আমি বললাম, তুমি মেয়েটাকে বলে দাও না কেন? বলে দাও জয়া হবার হবে। এসপার না হয় ওসপার! কিছু একটা হবে। উত্তরে ছেলেটি আমাকে বলল, ভাই মেয়েটাকে অনেকেই পছন্দ করে। এমনকি অনেক সিনিয়ররাও ওকে পছন্দ করে। আমি না হয় দূর থেকে ভালবাসবো। কিন্তু বলতে পারবো না। এটা আসলে শুধু ওর মনের কথা নয়। এটা অনেক ছেলেরই মনের কথা। আমাকে বলল, নিজে নিজে কষ্ট পাব, এটাও এক ধরণের ভালবাসা। আমার ভাল লেগেছে ওর কথা। কিছু কিছু ছেলে তো এমনই। নিজের মনে পুড়ে পুড়ে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু আশপাশের কথা বিবেচনা করে নিজের ভেতরেই শেষ করে দেয় ইচ্ছেগুলোকে।
মাস দুয়েক আগে আমার আরো একটি ছেলের সাথে কথা হয়েছিল। মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা হয়। আমি ছেলেটিকে সোশাল নেটোয়ার্কে যেমন দেখেছি, ওর আচরনগুলা ঠিক যেন মিলছিল না। ওর ভার্সিটি কেন্দ্রিক যে আচরন দেখেছি, ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে গিয়ে কেমন যেন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছিল। ঠিকঠাক মত কথাই বলতো না। কোন খোজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি বারবার জিজ্ঞাসা করাতে আমাকে বলেছিল, মন খুব খারাপ ভাই কয়দিন ধরে। আমি আমার নিজের মত করে একটা বিষয়কে ধারণা করে নিয়েছিলাম এবং সেটা সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছিল ও যা বলেছিল তার সাথে। ওর মন খারাপ কারণ ওর একটা মেয়েকে ভাল লাগতো। যা হয় অবধারিত ভাবে, মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, তোমার সাথে এখন তো ওকে কোনভাবেই বিয়ে দিবে না, কারণ এখন তুমি মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে পড়। ও বলল, হ্যা ভাই। আমি বললাম, তুমি কি মেয়েটাকে ভালবাসো? মেয়েটা কোন ভাবে তোমার জন্য আর বছর দুই তিনেক অপেক্ষা করতে পারবে না? ও বলল, ও একতরফাই ভালবাসে। মেয়েটা হয়ত তাকে বন্ধুর মতই জানে। কাজেই যা হবার তাই হল। হল না। এসন জাতীয় ক্ষেত্রে ছেলেদের একতরফা বলির স্বীকার হতে হয়। ওর ক্ষেত্রেই তাই হল। এগুলা তো কিছু উদাহরণ মাত্র।
অনেক ছেলেই প্রেমে পড়ে ক্লাসমেটের সাথে অথবা ব্যাচমেটের সাথে। এর ফলে আমাদের দেশে যা হয়, মেয়েটা সেকেন্ড ইয়ারে উঠতে না উঠতেই বিয়ের পায়তারা শুরু হয়, এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেগুলোর ভাললাগার কথা কেউ ভাবে না। কেউ না। এমনকি মেয়েগুলাও একসময় স্বামী সংসার পেয়ে ভুলে যায় যে, কেউ হয়ত তাকে পাগলের মত ভালবাসতো। সৃষ্টিকর্তা মুখে ভাষা দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের বোবা কালা করে বানিয়েছেন। এরা নিজেদের ভালবাসার কথাও বলতে পারে না মুখ ফুঁটে ভালবাসার মানুষটাকে।