রাজের চরিত্র ভাল না। যদিও তার স্ত্রী বর্ষার কাছে সে নিজেকে খুব ভালভাবেই উপস্থাপন করে। এলাকার মানুষরাও তাকে একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবেই জানে। কিন্তু সে যা, সে তা না! সে শিয়ালের মত চালাক বললেও ভুল হবেনা। পরনারীর প্রতি তার লালসা আগেও ছিল এখনও আছে। এখন আরও বেড়েছে বলা যায়। আত্মিক ভালবাসার চেয়ে শারীরিক কামনা বাসনাই তাকে বেশী টানে।
এই দিক থেকে ডি এইচ লরেন্সের “সান্স অ্যান্ড লাভারস” গ্রন্থের নায়ক পল-এর সাথে তার চরিত্রগত অনেক মিল আছে। রাজের আরেকটা বাজে দিক আছে সেটা হল খুব তাড়াতাড়ি কোন কিছু ভুলে যাওয়া। বর্ষা একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্কে কাজ করে। সে সকাল দশটার আগে বের হয়ে যায় আর রাত আটটা অথবা নয়টার মধ্যেই বাসায় ফেরে। রাজ চাকরি করে একটি প্রাইভেট কলেজে। কলেজটি বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয়। রিক্সা নিলে পাঁচ মিনিটের পথ। সে কলেজ থেকে ফিরে আসে দুপুর আড়াইটার দিকে।
বাসায় ফিরেই একটা ফোন করে বর্ষাকে। এটা তাকে প্রতিদিন করতেই হয়, কোনদিন ভুলে গেলে বর্ষা খুব রাগ করে। আজও সে তাই করল। বর্ষা তাকে বলল ঠিকমত খেতে আর বুয়া আসার পর যেন তাকে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়। রাজ বর্ষার গলার স্বর শুনে একটু চিন্তিত হল। তার মনে হল সে অসুস্থ। সে জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় কলিং বেলের শব্দ তার কানে এল। তাড়াহুড়া করে ফোন কেটে রাজ দরজা খুলতে গেল। খুলেই দেখল বুয়া দাঁড়িয়ে আছে হাতে ময়লার খালি ঝুড়ি নিয়ে।
বুয়ার নাম কমলা সুন্দরী, কিন্তু দেখতে কুচকুচে কালো। কয়লার চেয়েও কালো। কিন্তু নিজেকে সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। বয়স পঁচিশ কি ছাব্বিশ হবে। তালাকপ্রাপ্তা। তার স্বামী নাকি আগের বউয়ের কথা লুকিয়েছে তাই তালাক দিয়ে দিয়েছে। কমলার একটা বাচ্চা ছেলে আছে যার বয়স আড়াই বছর। মাঝে মাঝে সাথে করে নিয়ে আসে। আরেকটা বিষয় উল্লেখ করার মত। কমলার হাসিটা চমৎকার। ওর হাসি দেখলেই বুঝা যায় মনটা খুব নরম। যেমনটি প্রায়ই ঘটে তাই ঘটেছে। রাজ বুয়াকে ফোনে কথা বলিয়ে দেবার কথা ভুলে গেছে।
মানুষের মন কখন কোন দিকে ধাবিত হয় তা বুঝা বড় দায়। ঘরে এত সুন্দর বউ থাকতেও রাজের কুনজর পড়েছে কমলার উপর। সে যখন কলেজ থেকে ফিরে আসে তখন তার মনে কুচিন্তা উঁকি দেয়। সে বুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা বলতে চায়। কাছে ঘেঁষতে চায়। বুয়া রাজের কুমতলব বুঝতে পেরে নিজেকে তার কাছ থেকে একটু দূরে দূরে রাখে। রাজ ফন্দি আঁটতে থাকে কিভাবে কমলাকে আপন করে পাওয়া যায়। তার চেষ্টা চলতে থাকে। কিন্তু কমলা এত সহজে ধরা দেবার পাত্র নয়।
একদিন বর্ষা তার মায়ের বাসায় দুইদিন থাকার জন্য রাজকে বলেছে। রাজ বলেছে সে যেতে পারবেনা কারন তার কাজ আছে। আসলে তার কোন ব্যস্ততা ছিলনা। এটা তার চালাকি। সে মুখে খুব মলিন ভাব এনে বর্ষাকে বলল যে সে এবার যেতে পারবেনা তবে পরেরবার অবশ্যই যাবে। কিন্তু বর্ষা রাজকে ছাড়া যেতে নারাজ। অনেক বুঝানোর পর বর্ষা রাজি হল।
ওই রাতে খুশিতে রাজের ঘুমই আসেনি। পরেরদিন বর্ষা রাজকে নিজের খেয়াল রাখতে আর খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করতে বলল। রাজ বর্ষাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে এল। তার বাসায় পৌঁছতে একটু দেরী হয়ে গেল। এসে দরজার বাইরে ময়লার খালি ঝুড়ি রাখা দেখল। তার বুঝতে আর বাকি রইলনা যে বুয়া এসে দরজা বন্ধ দেখে চলে গেছে। রাজের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
কমলার চিন্তা তার মনেপ্রাণে এমনভাবে দানা বেদেছে যে সে ফোনে বর্ষার খোঁজখবর নিতেই ভুলে গেছে। এর মধ্যে সে চিন্তা করছে কিভাবে কমলাকে বাসায় আনা যায়। সমস্যা হচ্ছে কমলার কাছে ফোন নেই। হঠাৎ মনে হল তার ভাইয়ের কাছে ফোন করবে কমলাকে পাঠানোর জন্য। যেই চিন্তা সেই কাজ। কমলার ভাইকে ফোনে কথাটা বলার পর উনি বললেন যে তিনি এখন অনেক দূরে আছেন তবে বাসায় পৌঁছেই কমলাকে পাঠাবেন। এ কথা শুনার পর রাজের মনে প্রশান্তির বাতাস বইতে শুরু করল। তার মানে কমলা আনুমানিক সন্ধ্যার দিকে আসবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
রাজ তার ফোনটা হাতে নিল। ফোনের পর্দায় চোখ রেখেই তার চোখ কপালে ওঠার মত অবস্থা। পনেরটা মিসড কল বর্ষার ফোন থেকে! সর্বনাশ! রাজ সাথেসাথে বর্ষাকে ফোন দিল। বর্ষা রাগ করে ফোন ধরলনা। রাজ অনেকবার চেষ্টা করল কিন্তু কোন কাজ হলনা। সে “sorry” লিখে একটা বার্তাও পাঠিয়েছে কিন্তু বর্ষার রাগ কমার কোন লক্ষণ দেখা গেলনা।
যাইহোক, রাজ এখন বুয়াকে নিয়ে চিন্তা করা শুরু করল। কমলা আসতে আর বেশি সময় বাকি নেই। রাজ ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা শুরু করল। Facebook-এ বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ চ্যাট করার পর সে পর্ণফিল্ম দেখা শুরু করল। এই অভ্যাস তার সেই কলেজ থেকেই। বর্ষাকে কখনও এটা জানতে দেয়নি।
কম্পিউটারের পর্দায় নগ্ন শরীর দেখে তার কমলার কথা মনে পড়ল। সেই মুহূর্তে একটা বিকৃতও ফন্দি তার মনে উঁকি দিল। সে চিন্তা করল যেভাবেই হোক সে কমলাকে এই অশ্লীল ছবি দেখাবে। তার বিশ্বাস যে এতে কমলার মনেও কামনাবাসনা জাগ্রত হবে। রাজ মনেমনে ভাবল- চেষ্টা করতে দোষ কি?
মাগরিবের আজানের কিছুক্ষণ পরেই কমলা আসল। আজ সে কমলা রঙের একটা ড্রেস পরে এসেছে। ইতোমধ্যে রাজ আরও দুএকবার ফোন দিয়েছে বর্ষাকে কিন্তু সে ফোন ধরেনি। বুয়া তার কাজ শুরু করেছে।
এক ফাঁকে রাজকে জিজ্ঞেস করেছে বর্ষা আপা কখন আসবে। রাজ বলেছে যে দুই তিনদিনের মধ্যেই চলে আসবে। আজ কমলার কাজ বেশি না। বাসনগুলো ধোঁয়া আর রুমগুলো ঝাড়ু দেওয়া। বাসন ধোঁয়ার কাজ শেষ করে সে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করেছে। রাজের রুমে আসার আগেই রাজ কমলাকে বলল যে সে বাইরে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে। তার রুমে কম্পিউটারে অশ্লীল ছবি তখনও চলছে। সে জানে যে কমলা ওই রুমে ঝাড়ু দিতে গেলে কম্পিউটারে চোখ পড়বে আর রাজের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল হবে। সে বুদ্ধি করে আরেকটা কাজ করেছে- সেটা হল এই যে সে তার ফোনের ভিডিও ক্যামেরা চালু করে ঘরের এমন জাইগায় রেখেছে যাতে সেটাতে কমলার কাজকর্ম রেকর্ড হয়। রাজ বাইরে চলে গেল। বুয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে রাজের রুমে এসেই কম্পিউটারের পর্দায় চোখ পরতেই হাতের ঝাড়ু মাটিতে পরে গেল। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। জীবনে কখনও তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো নগ্ন শরীর দেখেনি। রাস্তাঘাটে জামাকাপড়হীন পাগলও দেখেছে বলে মনে পরেনা। তার বুক কাঁপছে। সে সাথেসাথেই রুম থেকে বের হয়ে গেল।
এদিকে রাজ নীচে পায়চারি করছে আর মনেমনে আশা করছে কমলা যেন অশ্লীল ভিডিও দেখে। রাজের হাত পাও কাঁপছে। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে খুব। আর দেরী না করে সিঁড়ি বেয়ে বাসার সামনে এসে কলিং বেল চাপতেই বুয়া দরজা খুলে দিল। রাজ ভেতরে ঢুকেই কমলার চোখের দিকে তাকাল। সে তার মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করল। কমলা তার কাজ শেষ বলেই বাসা থেকে চলে গেল। রাজ দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি তার রুমে এসে দেখল তখনও ভিডিও চলছে। সে ওটা বন্ধ না করেই তার ফোনটা হাতে নিল।
যতটুকু রেকর্ড হল সেটুকু সে প্রথম থেকে দেখা শুরু করল। সে দেখল যে কমলা শুরুতে চলে গেছে কিন্তু পরে আবার ফিরে এসে ভিডিওর কিছু অংশ দেখেছে তারপর আবার চলে গেছে। রাজ ভেবেছে যে কমলা তার প্রথম টোপ গিলেছে। এই পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে সে খুব খুশি। সে মনেমনে আশা করছে যেন কোনো ঝামেলা না হয়।
বর্ষাকে ফোন দিল আরেকবার। তার মা ফোন ধরেছে। শাশুড়িকে সালাম দিয়ে বর্ষাকে ফোনটা দিতে বলল। তিনি বললেন বর্ষা এখন কথা বলবেনা। পরে সে নিজেই ফোন করবে। রাজ আর কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিল।
তার চিন্তার রাজ্য আবার দখল করে নিল কমলা। সে ঠিক করল পরের দিন কমলাকে জাপটে ধরবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস কমলা তাকে মানা করবেনা। পরেরদিন কমলা সময়মত এসেছে। তাকে আজ একটু আলাদা মনে হচ্ছে। কমলা তার কাজ করা শুরু করেছে। রাজ কম্পিউটার চালু করে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছে। গানটি হচ্ছে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী ও দলছুট বান্দ-এর গায়ক সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া- “তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও করি প্রেমের তর্জমা”।
কেন জানি তার এ গানটা খুব ভাল লাগে। হোয়ত গানটাতে এক ধরনের মাদকতা আছে। কমলা ঘর মুছার জন্য রাজের রুমে আসতেই সে তাকে জড়িয়ে ধরতে তার দিকে ছুটে গেল। কমলা একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,
-প্লিজ, এটা করবেননা।
রাজের অবস্থা তখন ক্ষুদার্ত বাঘের মত। সে বলল,
-সমস্যা কি?।
কমলা আর কথা না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রাজের উপর বিষণ্ণতা ভর করল প্রবলভাবে। সে বুঝতে পারল কমলাকে বাগে আনা এত সহজ নয়। সে ঠিক করল তাকে বাদ দিয়ে আরেকটা বুয়া রাখবে। হয়ত নতুন বুয়া তার লালসার কাছে হার মানবে এই আশায়। মানব স্বভাব বড়ই বিচিত্রময়!