দৃশ্য ১
[রাত। ছাদ।]
ইমনঃ [চাঁদের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খেতে খেতে বিষণ্ণ মনে ভাবছেন] “আমি চাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ডিরেক্টর হতে! আমার স্বপ্ন হচ্ছে একদিন অস্কার হাতে হাসতে হাসতে ছবি তোলা। আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে আরও একটিবার গৌরবের সাথে তুলে ধরাটাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কয়েকটি Short Film বানালেও সিনেমা বানানোর যে স্বপ্ন সেটি আজও অধরাই রয়ে গেছে। সিনেমা বানাতে যে পরিমাণ টাকা লগ্নি করার দরকার, সে পরিমাণ টাকাতো আমার নেই। এর কাছে ওর কাছে টাকার জন্য ধরনা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কি যে করি?”
[স্ত্রী নায়লা পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই ইমন আঁতকে উঠে। অসতর্কতায় তার হাত থেকে সিগারেটটি পড়ে যায়।]
নায়লাঃ [মুচকি হেসে] কি? ভয় পেলে নাকি?
ইমনঃ না। তেমন কিছু না! তুমি হঠাৎ এলে তাই।
নায়লাঃ এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলে বলোতো?
ইমনঃ কিছু না।
নায়লাঃ উ হু! কিছু না বললেতো হবে না। তুমি নিশ্চয়ই কিছু একটা ভাবছিলে। আমার কাছে কি লুকাচ্ছ বলো?
ইমনঃ আরে বাবা! বললামতো, কিছুই না।
নায়লাঃ [আদর করে ইমনের নাকে চাপ দিয়ে বলেন] ঠিক আছে মশাই! বলতে না চাইলে থাক।
নায়লাঃ আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে তাই না?
ইমনঃ হুম!
নায়লাঃ আচ্ছা, কয়টা বাজে খবর আছে? এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখলেই কি পেট ভরবে? টেবিলে খাবার রাখা হয়েছে। খাবে এসো!
ইমনঃ তুমি যাও, আমি আসছি!
নায়লাঃ না, আমার সঙ্গেই যেতে হবে। লক্ষ্মী ছেলের মতন চলো!
ইমনঃ উফ! তুমি সেই নাছোড়বান্দাই রয়ে গেলে! ঠিক আছে চলো!
দৃশ্য ২
[পরদিন। বিকেল। নিজের ঘরে কম্পিউটারের সামনে।]
ইমনঃ নায়লা! নায়লা!
নায়লাঃ আসছি বাবা!
ইমনঃ তাড়াতাড়ি এসো!
নায়লাঃ [কাছে এসে বলেন] উফ! অস্থির বানিয়ে ফেলো! কি হয়েছে বলো? তোমার জন্য ঠিকমত রান্নাঘরে কাজও করা যাবে না দেখছি! যখন তখন “নায়লা” “নায়লা” করে ডাকতে থাকো! কি হয়েছে বলো?
ইমনঃ [উত্তেজিত হয়ে নায়লাকে কম্পিউটারের পর্দায় দেখিয়ে বলেন] এই দেখো!
নায়লাঃ কি দেখবো?
ইমনঃ আহা! একটু শান্ত হয়ে ভালো করে মনোযোগ দিয়ে দেখোই না!
নায়লাঃ [কম্পিউটারের পর্দায় তাকিয়ে বলেন] ইউ টিউব দেখা যাচ্ছে!
ইমনঃ আর কিছু কি দেখতে পাচ্ছ না তুমি?
নায়লাঃ [একটু বিরক্ত হয়ে বলেন] আর কিছু বলতে কি রে বাবা! এতো রহস্য করছো কেন? একটু পরিস্কার করে বললে কি হয় বলোতো?
ইমনঃ এই ভিডিওটা দেখো! আমার নাম দেখতে পাচ্ছ না?
নায়লাঃ [ভালো করে দেখে বলেন] হ্যাঁ, তোমার নামতো দেখা যাচ্ছে!
ইমনঃ এখন কত জন ভিডিওটি দেখেছে সেই সংখ্যার দিকে একটু চোখ বুলাওতো।
নায়লাঃ [নায়লা দেখতে পায় যে ভিডিওটি এক কোটিরও বেশি লোক দেখেছে। তিনি আনন্দে হাসতে হাসতে বলেন] তার মানে এই ভিডিওটি তুমি তৈরি করেছো এবং এটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছে, তাইতো?
ইমনঃ ঠিক তাই আমার জান!
নায়লাঃ [খুশিতে ইমনকে জড়িয়ে ধরে কান্নাভরা কণ্ঠে বলেন] I am so proud of you! আমি জানি একদিন তুমি অনেক অনেক বড় ডিরেক্টর হবে!
ইমনঃ আমার সাথে সবসময় থেকো। তুমি থাকলে আমি সারা বিশ্ব জয় করতে পারবো। আমার এ হাত কখনো ছেড়ো না!
নায়লাঃ [আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বলেন] আমি তোমার সাথে ছিলাম, আছি, থাকবো! তুমি তোমার স্বপ্নকে কখনো মরতে দিও না। Protect your dream. একদিন না একদিন তুমি সফল হবেই দেখো!
দৃশ্য ৩
[ঐদিন রাত ১ টা। ইমন কম্পিউটারে বসে কাজ করছেন।]
নায়লাঃ [ইমনকে পেছন থেকে আদরে জড়িয়ে ধরে বলেন] কি সোনা, ঘুমাবে না?
ইমনঃ আরেকটু পরেই আসছি জান। কম্পিউটারে একটু কাজটা সেরেই আসছি। তুমি শুয়ে পড়ো।
নায়লাঃ তোমার ‘একটু পর’ মানে যে কয়েক ঘণ্টা সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে বুঝলেন মশাই!
ইমনঃ বিশ্বাস করো ময়না, এই কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। তুমি যাও আমি আসছি।
নায়লাঃ ঠিক আছে যাচ্ছি, তবে একটি শর্তে।
ইমনঃ উফ! এর মধ্যে আবার শর্ত কেন?
নায়লাঃ তেমন কঠিন কোনও শর্ত নয় জনাব! সামান্য শর্ত! আপনার ভয় পাবার কিছুই নেই!
ইমনঃ আচ্ছা বলো শুনি মহারানির কি শর্ত?
নায়লাঃ শর্তটি হচ্ছে এই যে আপনি কাজ শেষ করে না আসা পর্যন্ত আমি ঘুমাবো না!
ইমনঃ এসব শর্তের কোনও মানে আছে বলো?
নায়লাঃ মানে আছে, তোমাকে শর্ত না দিলে কোনও কাজ হবে না সেটা আমি বেশ ভালো করেই জানি।
ইমনঃ [নায়লার সামনে হাঁটু গেঁড়ে কুর্নিশ করে বলেন] তথাস্তু! মহারানির শর্ত শিরোধার্য! ঠিক আছে? এখন খুশিতো?
নায়লাঃ [হাসতে হাসতে] হুম! খুশি! খুশি! খুশি!
ইমনঃ আমি না হয় কাজে ব্যস্ত থাকবো, এই সময়টায় তুমি না ঘুমালে কি করবে শুনি?
নায়লাঃ তোমার লেখা “আমি স্বপ্ন আঁকি, আমি স্বপ্ন ধরি!” উপন্যাসটি পড়বো।
ইমনঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও গিয়ে বই পড়ো। আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসছি।
নায়লাঃ [ইমনের গালে চুমু খেয়ে বলেন] ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু।
ইমনঃ আচ্ছা।
[কিছুক্ষণ পর ইমন ফেইসবুকে ব্রাউজ করতে করতে হঠাৎ একটি খবরে চোখ পড়ে। International Short Film Competition এর জন্য Short Film জমা দিতে বলা হচ্ছে। পুরস্কার বিজয়ীকে এক কোটি টাকা দেয়া হবে। আগামিকাল Short Film জমা দেবার শেষ দিন। ঠিক তখন ইমন নায়লার দিকে তাকিয়ে দেখে সে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। ইমন আর দেরী না করে তৎক্ষণাৎ তার তৈরি করা সবচেয়ে ভালো Short Film টা পাঠিয়ে দেন।]
দৃশ্য ৪
[দুই মাস পর। ইমনের বাসা। সন্ধ্যাবেলা।]
[ইমন তার মেইল চেক করার জন্য কম্পিউটারের সামনে বসেন। মেইল খুলতেই তার চক্ষু চড়কগাছ! তিনি অবাক চোখে কয়েক মিনিট সেই মেইলের দিয়ে তাকিয়ে আছেন!]
ইমনঃ নায়লা! নায়লা!
নায়লাঃ উফ! আবারো তোমার ডাকাডাকির পালা শুরু হয়েছে? বলো!
ইমনঃ [উত্তাজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে এবং তোতলাতে তোতলাতে মেইলটি দেখিয়ে হাসতে হাসতে বলেন] এই দেখো কি কাণ্ড ঘটেছে?
নায়লাঃ [মেইলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে ইমনকে জড়িয়ে ধরে হেসে বলেন] OMG! তুমি International Short Film Competition এই পুরস্কারটিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছো! পুরস্কার হিসেবে তোমাকে এক কোটি টাকা দেয়া হবে?
ইমনঃ [ইমনকে জড়িয়ে ধরে হাওয়ায় ঘুরাতে ঘুরাতে বলেন] হ্যাঁ গো ময়না! হ্যাঁ!
নায়লাঃ আচ্ছা, এটা কোনও ধাপ্পাবাজি নয়তো?
ইমনঃ মোটেও না।
নায়লাঃ তুমি ভালোমত খোঁজখবর নিয়েছোতো?
ইমনঃ নিয়েছি জান, নিয়েছি!
নায়লাঃ মেইলে আরও লেখা দেখলাম যে এই মাসেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হবে।
ইমনঃ হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছো।
নায়লাঃ তোমাকে আমেরিকায় গিয়ে পুরস্কার নিতে হবে!
ইমনঃ যেহেতু এটাই নিয়ম, তখনতো সেখানে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই, তাই না?
নায়লাঃ তা ঠিক। তাহলেতো তোমার হাতে আর বেশি দিন সময় নেই! মাত্র নয় দিন আছে। এর মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে।
ইমনঃ ওসব নিয়ে কোনও চিন্তা করো না জান। সব ঠিকমতই হবে। ও, আরেকটা কথা, আমেরিকায় কিন্তু আমি একা যাচ্ছি না। মহারানি সাহেবাও আমার সাথে যাচ্ছে!
নায়লাঃ আমি? আমি সেখানে গিয়ে কি করবো? তুমিই যাও।
ইমনঃ তোমার সামনে আমি পুরস্কার নিলে যে আমার আনন্দ কয়েকশো গুন বেড়ে যাবে জান। প্লিজ না বলো না!
নায়লাঃ আচ্ছা, ঠিকই আছে। আমিও যাবো। এখন খুশিতো?
ইমনঃ [আবারো নায়লাকে জড়িয়ে ধরে হাওয়ায় ঘুরাতে ঘুরাতে বলেন] খুশি! খুশি! খুশি! অনেক খুশি!
দৃশ্য ৫
[বিমানবন্দর। ইমন ও নায়লা আমেরিকা থেকে পুরস্কার নিয়ে ফিরে এসে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষায়। ট্যাক্সিতে করে দুজন বাসায় ফেরার সময়।]
নায়লাঃ [ভালোবেসে ইমনের হাত ধরে কান্নাভরা কণ্ঠে বলেন] আমেরিকায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তুমি পুরস্কার পেয়েছো এটা জেনে আমি যতটা খুশি হয়েছি, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আমার চোখের সামনে তুমি পুরস্কার গ্রহণ করেছো বলে।
ইমনঃ [আবেগে তার চোখে পানি চলে আসে] এসবই তোমার ভালোবাসা ও সমর্থনের ফল জান। তুমি পাশে না থাকলে, আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা না দিলে আমি কিছুই করতে পারতাম না!
নায়লাঃ ধেৎ! কি যে বলো না? তুমি তোমার যোগ্যতায় এসব অর্জন করেছো। আমিতো কিছুই করিনি!
ইমনঃ আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না ময়না। আমার জীবনে তোমার উপস্থিতি যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না!
নায়লাঃ [ইমনের গাল আদর করে টিপে বলেন] হয়েছে হয়েছে! আমার প্রশংসা অনেক হয়েছে! এবার থামোতো! আচ্ছা, এই যে পুরস্কার হিসেবে এতো টাকা পেলে, এই টাকা দিয়ে কি করবে কিছু ভেবেছো?
ইমনঃ না, সেভাবে এখনো কিছু ভাবিনি। দেখি, হয়তো তোমাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে বেড়াতে যাবো, তোমাকে হিরার গহনা কিনে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি!
নায়লাঃ না, এসব আমার চাই না! তুমি জানো গহনাগাঁটি, বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদির প্রতি আমার কখনো লোভ ছিল না, এখনো নেই।
ইমনঃ তা জানি, তবে আমারওতো মাঝে মাঝে মনে হয় তোমাকে কিছু দামি গিফট কিনে দেই। সেটা কি অন্যায়? বিয়ের পর থেকে তোমার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। দামি উপহার দূরে থাক, একটি দামি শাড়িও কিনে দিতে পারিনি আমি!
নায়লাঃ এসব ভেবে মন খারাপ করো না তো! আমি বললামতো এসব আমার চাই না।
ইমনঃ তাহলে তুমি কি চাও আমাকে খুলে বলোতো?
নায়লাঃ আমি শুধুই তোমার ভালোবাসা চাই।
ইমনঃ আর কিছুই চাও না?
নায়লাঃ না। যেহেতু এখন তোমার হাতে টাকা এসেছে, তখন একটা জিনিস চাইতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ইমনঃ [আগ্রহের সাথে নায়লার দিকে তাকিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বলেন] কি বলো না?
নায়লাঃ আমি চাই তুমি ঐ টাকা দিয়ে এমন একটি সিনেমা বানাও যেটা অস্কার জিতবে!
ইমনঃ ঠিক আছে। তুমি যা চাও তাই হবে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো তোমার এই স্বপ্ন পূরণ করতে। জানি না আমি সফল হবো কিনা, কিন্তু চেষ্টা করতেতো আর দোষ নেই।
নায়লাঃ আমি জানি তুমি সফল হবেই! তোমাকে সফল হতেই হবে!
[বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি দাঁড়ায়। ইমন ও নায়লা বাসায় প্রবেশ করেন।]
দৃশ্য ৬
[নদীর তীরের গ্রাম। সিনেমার সেটে।]
[ইমন পরিচালিত ‘আমার স্বপ্ন’ সিনেমার শেষ দৃশ্যের শুটিং চলছে।
জাহানারাঃ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়া একমাত্র ছেলে বিপ্লবের লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করে বলছেন] ওরে বিপ্লব রে! আমারে ছাইড়া কেন গেলি রে? ইয়া আল্লাহ! আমি অহন কি করুম? আমার পোলারে না নিয়া কেন যে আমার পরাণডা নিলা না আল্লাহ!
ইমনঃ কাট!
জাহানারাঃ ইমন ভাই, ঠিক আছেতো? নাকি আরেকটি টেইক নিবেন?
ইমনঃ না, না এক্সিলেণ্ট হয়েছে। অসাধারণ!
জাহানারাঃ Thank you so much!
ইমনঃ You are most welcome!
বিপ্লবঃ ভাই, আমার লাশ হয়ে পড়ে থাকাটা ঠিক ছিলতো? লাশের মতই লেগেছেতো?
ইমনঃ [মুচকি হেসে বিপ্লবের পিঠে চাপড় দিয়ে বলেন] সাবাশ! অনেক ভালো হয়েছে!
বিপ্লবঃ Thank you ভাই।
ইমনঃ Welcome. আজকের জন্য প্যাক আপ!
দৃশ্য ৭
[ইমনের শোবার ঘর।]
[‘আমার স্বপ্ন’ সিনেমা রিলিজ হয়েছে। দেশ বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইমন ও নায়লা সিনেমাটিকে ঘিরে পত্র পত্রিকায় লেখা প্রশংসাসূচক প্রতিবেদন পড়ছেন।]
নায়লাঃ সাবাশ! চারিদিকে শুধু ডিরেক্টর ইমনের জয়জয়কার! সাবাশ!
ইমনঃ Thank you so much!
নায়লাঃ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে যে এবার অস্কার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে তোমার ছবিটাই প্রতিনিধিত্ব করবে! তুমি দেখে নিও!
ইমনঃ আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করি তোমার কথাটি যেন সত্যি হয়! এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
[এক মাস পর পত্রিকায় বড় করে খবর বেরিয়েছে যে ইমন পরিচালিত ‘আমার স্বপ্ন’ সিনেমাটি অস্কার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবে।]
নায়লাঃ [পত্রিকা হাতে উল্লসিত হয়ে ইমনের ঘরে প্রবেশ করে বলেন] এই যে ডিরেক্টর সাহেব! খবরটি পড়ুন!
ইমনঃ কিসের খবর?
নায়লাঃ আহা! পড়েই দেখো না!
[ইমন খবরটি পড়ে। উত্তেজনায় তার শরীরের রোম দাঁড়িয়ে যায়! আনন্দে ভালোবেসে নায়লাকে জড়িয়ে ধরেন।]
ইমনঃ এটাতো অসাধারণ খবর নায়লা!
নায়লাঃ কি? আমি বলেছিলাম না তোমার ছবি অস্কারে যাবে?
ইমনঃ হুম্, এখন দেখা যাক পৃথিবীর বিখ্যাত সব সিনেমাকে পেছনে ফেলে আমার তৈরি সিনেমা অস্কার জেতে কিনা!
নায়লাঃ নিশ্চয়ই জিতবে! তুমি দেখে নিও!
ইমনঃ [নায়লাকে জড়িয়ে ধরে বলেন] আরও একটিবার তোমার কথা যেন সত্যি হয় জান!
দৃশ্য ৮
[ইমনের ঘর। ছাদ।]
[অস্কার প্রতিযোগিতার ফলাফল ইন্টারনেটসহ সকল মাধ্যমেই এসেছে। এবার ইমন পরিচালিত ‘আমার স্বপ্ন’ সিনেমাটি অস্কার পুরস্কার অর্জন করেছে।]
[নায়লা এখনো খবরটি পায়নি। তিনি ছাদে ভেজা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন। পেছন থেকে নীরবে ইমন এসে উপস্থিত।]
ইমনঃ ভাউ!
নায়লাঃ [ভয়ে কেঁপে উঠে বলেন] উফ বাবা! যা ভয় পেয়েছি! মাঝে মাঝে তুমি একেবারে বাচ্চা হয়ে যাও! এভাবে কি কেউ ভয় দেখায়? এখনো ভয়ে আমার বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে!
ইমনঃ এখন যে খবরটা শোনাবো, সেটা শুনে তোমার বুকের ধড়ফড়ানি আরও কয়েক হাজার গুণ বেড়ে যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই!
নায়লাঃ কি খবর শুনি!
ইমনঃ আগে তোমার চোখ বন্ধ করো!
নায়লাঃ চোখ বন্ধ করবো? কেন?
ইমনঃ আছে, চোখ বন্ধ করোই না!
নায়লাঃ [চোখ বন্ধ করে বলেন’] আচ্ছা বাবা, এই নাও চোখ বন্ধ করলাম! এখন যা বলার বলে ফেলোতো আমার অনেক কাজ জমে আছে যে!
ইমনঃ [নায়লার কানের কাছে এসে বলেন] তোমার স্বামী অস্কার জিতেছে!
নায়লাঃ [চোখ বড় বড় করে বলেন] বলো কি?
ইমনঃ [ইমনের চোখে আনন্দ অশ্রু] সত্যি জান!
নায়লাঃ আমার সাথে মশকরা করছো নাতো?
ইমনঃ না জান! সত্যি বলছি! এই যে পত্রিকায় ছেপেছে, পড়ে দেখো!
[নায়লার চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়! আনন্দে ও উত্তেজনায় তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হচ্ছে না। সে ইমনকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ইমনের চোখেও সুখের কান্না। ঠিক সেই সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হয়। ইমন ও নিলয়ের সাথে আকাশও আজ খুশির বন্যায় মেতেছে যেন!]
সমাপ্ত