দৃশ্য ১
[জেরিনের বাড়ির ড্রয়িং রুম]
[শায়ান, তার মা নীলা সিদ্দিকা, বাবা রেহমান চৌধুরী বসে আছেন। তারা কনে দেখতে এসেছেন। কনে জেরিন খানমের মা শরিফা ইয়াসমিন এবং বাবা রিদান আহমেদ শায়ানের বাবা মার সাথে কথা বলছেন।]
রিদানঃ রেহমান সাহেব, আমার একটি মাত্র মেয়ে। সেই ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত আদর ও যত্নের সাথেই তাকে মানুষ করেছি। পড়ালেখা যদিও বেশিদূর পর্যন্ত করতে পারেনি, তবুও আচার ব্যবহার, মূল্যবোধ কোনও দিক থেকেই জেরিন পিছিয়ে নেই।
শরিফাঃ [স্বামী রিদানের দিকে তাকিয়ে] জি, একদম ঠিক কথাই বলেছেন। [নীলা এবং রেহমানের দিকে তাকিয়ে] আমার মেয়ে লাখে একটি।
নীলাঃ জি, আপনার মেয়ের ছবি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম যে সে একটি শালীন ও ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে। আসলে আমার ইঞ্জিনিয়ার ছেলের জন্য ঠিক এরকম একটি বউ খুঁজছি।
রেহমানঃ [শরিফা ও রিদানের দিকে তাকিয়ে] জেরিন যেমন আপনাদের মনের মণি, ঠিক তেমনি আমাদের ছেলে শায়ান আমাদের যক্ষের ধন! তার জন্য আমরা সত্যিই গর্ব বোধ করি।
রিদানঃ [শায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলেন] বাবা শায়ান, তোমার কি দেশের বাইরে যাবার কোনও প্ল্যান আছে নাকি?
শায়ানঃ জি, আছে। তবে আপাতত কয়েক বছর দেশেই কাজ করে যেতে চাই। আসলে কখনও বিদেশে গেলেও দেশেই ফিরে আসবো এমনটাই ইচ্ছে।
রেহমানঃ সত্যি কথা বলতে কি আমার ছেলে কিন্তু অত্যন্ত দেশপ্রেমিক। তার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা বিদেশে চিরতরে চলে না গিয়ে বরং সেখান থেকে নতুন নতুন কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসলে আমাদের দেশটাই তরতর করে উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে।
রিদানঃ [শরিফাকে উদ্দেশ্য করে] দেখেছো শরিফা, ছেলের মন মানসিকতা কত বড়!
শরিফাঃ হুম, আপনাদের ছেলের প্রশংসা না করে পারা যায় না। সত্যিই শায়ান একটি আদর্শ ছেলে।
নীলাঃ [মুচকি হাসতে হাসতে শরিফাকে বলেন] তা আপনার লক্ষ্মী মেয়েটাকে আসতে বলুন; আমরা তাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি যে!
শরিফাঃ জি জি অবশ্যই! আমি নিজে গিয়ে তাকে নিয়ে আসছি।
[ভিতর থেকে শরিফা জেরিনকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসেন। জেরিনের হাতে ট্রেতে চা, বিস্কিট ইত্যাদি। ট্রেটি টেবিলে রেখে সে বসে। তার মাথা ওড়নায় ঢাকা। খুব লজ্জা পাচ্ছে সে।]
জেরিনঃ [নীলা ও রেহমানকে উদ্দেশ্য করে] আসসালামু আলাইকুম।
নীলা ও রেহমানঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
নীলাঃ কেমন আছো জেরিন?
জেরিনঃ জি, আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি।
শরিফাঃ [জেরিনকে বলেন] মা, মেহমানদেরকে চা বিস্কিট এগিয়ে দাও।
জেরিনঃ জি, দিচ্ছি মা।
[জেরিন মেহমানদের উদ্দেশে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে আবারো নিজের আসনে বসে।]
নীলাঃ [জেরিনকে বলেন] তুমি কি গান গাইতে পারো জেরিন?
জেরিনঃ জি না, তবে আমি ভালো ছবি আঁকতে পারি।
নীলাঃ বাহ! বেশ ভালো। আমার ছেলে শায়ানও ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করে।
শরিফাঃ তাই নাকি?
নীলাঃ হ্যাঁ!
শরিফাঃ আমার মেয়ে জেরিন ফুল খুব ভালোবাসে। তাইতো তার মনটাও ফুলের মতই নরম। সে ছাদে নিজ হাতে সুন্দর ফুলের বাগান করেছে।
নীলাঃ বাহ! আপনার মেয়েতো দেখছি অনেক গুণী।
শরিফাঃ জেরিন তুমি শায়ানকে তোমার ফুলের বাগান দেখাতে ছাদে নিয়ে যাও।
নীলাঃ হ্যাঁ, মা, শায়ানকে বাগান দেখাতে নিয়ে যাও।
[জেরিন উঠে চলে যায়। শায়ান তাকে অনুসরণ করে যায়।]
দৃশ্য ২
[ছাদের বাগান]
শায়ানঃ বাহ! অপূর্ব এ যে দেখছি নানান রঙের ফুল! যেন স্বর্গের সুঘ্রাণ সবদিকে ছড়িয়ে পড়েছে!
জেরিনঃ জি আপনাকে ধন্যবাদ।
শায়ানঃ আরে না না, আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না। আসলে আমাকে এতো সুন্দর একটি বাগান দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ শুধু আপনারই প্রাপ্য।
জেরিনঃ [মুচকি হেসে] আপনি অনেক গুছিয়ে, অনেক সুন্দর করে কথা বলেন দেখছি!
শায়ানঃ [মুচকি হেসে] আপনার কথা বলার স্টাইলটাও অনেক সুন্দর।
জেরিনঃ উ হু! মোটেও না! আপনি কিন্তু একটু বাড়িয়েই বললেন মনে হয়।
শায়ানঃ না, না, একটুও বাড়িয়ে বলিনি। যা সত্যি তাই বললাম মাত্র।
জেরিনঃ ঐ ফুলটার নাম বলতে পারবেন?
শায়ানঃ আসলে আমি ফুল খুব কমই চিনি। তবে একটু সময় দিন, চেষ্টা করে দেখি নামটি বলতে পারি কি না!
জেরিনঃ ঠিক আছে।
শায়ানঃ [চিন্তামগ্ন হয়ে] ঐটা কি গাঁদা ফুল?
জেরিনঃ [মুখ চেপে হাসতে হাসতে] আরে না, না। গাঁদা ফুলতো হলুদ হয়, ঐ ফুলতো দেখতে সাদা তাই না?
শায়ানঃ ওহ হো! সরি সরি সরি! আমি বলতে পারিনি। আপনিই দয়া করে সেটির নাম বলে দিন।
জেরিনঃ ঐ ফুলের নাম হচ্ছে রজনীগন্ধা।
শায়ানঃ কোন ফুল আপনার সবচেয়ে প্রিয়?
জেরিনঃ টকটকে লাল রক্তজবা। আপনার?
শায়ানঃ আমার প্রিয় ফুল হচ্ছে লাল গোলাপ।
জেরিনঃ বেশ ভালো পছন্দ আপনার।
শায়ানঃ ধন্যবাদ। তবে আপনার আর আমার পছন্দের মধ্যে একটি জায়গায় মিল আছে।
জেরিনঃ মিল? কি রকম?
শায়ানঃ সেই মিলটি হচ্ছে রঙে! আপনার লাল জবা পছন্দ আর আমার পছন্দ হচ্ছে লাল গোলাপ।
জেরিনঃ [একটু অবাক হয়ে] সত্যিইতো! আপনি বেশ বুদ্ধিমান!
শায়ানঃ আপনি এতো সহজেই বুঝে ফেলেছেন আমি বুদ্ধিমান কি না?
জেরিনঃ হ্যাঁ, কেন?
শায়ানঃ তাহলেতো বলতেই হবে যে আপনিও বুদ্ধিমতি!
জেরিনঃ আম বুদ্ধিমতি?
শায়ানঃ হ্যাঁ, আমারতো তাই মনে হয়। কারণ রতনে রতন চেনে তাই না? ভুল বলেছি নাকি?
জেরিনঃ হ্যাঁ, আমারতো মনে হয় আপনি আমাকে খুশি করার জন্য মিছেমিছি বলেছেন। আসলে বাসার সবাই আমাকে বোকা ভাবেতো তাই আপনার মুখে ‘বুদ্ধিমতি’ শব্দটা শুনে একটু কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে আর কি! দাঁড়ান, আপনাকে একটা ফুল দেই।
শায়ানঃ ফুল? কেন?
জেরিনঃ উফ! আপনিতো ভারি গোয়েন্দাদের মত প্রশ্ন করেন!
[শায়ান মুচকি হাসে। জেরিন একটি লাল গোলাপ ছিঁড়ে শায়ানের হাতে দেয়।]
শায়ানঃ Thank you so much!
জেরিনঃ You are most welcome!
শায়ানঃ একটি মেয়ে একটি ছেলেকে বা একটি ছেলে একটি মেয়েকে লাল গোলাপ দেবার মানে কি সেটা জানেন?
জেরিনঃ না, আমি দার্শনিকের মতন সবকিছুতেই এতো মানে খুঁজতে চাই না! আচ্ছা কি মানে আছে বলুন শুনি!?
শায়ানঃ লাল গোলাপ হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক!
[এ কথা শুনে জেরিন লজ্জায় জিহ্বায় কামড় দেয়।]
শায়ানঃ আচ্ছা, আমি কি তোমার নাম্বারটা পেতে পারি?
জেরিনঃ হ্যাঁ, ০১৭১৬৩৮৫৭৬৯।
শায়ানঃ [ফোনে নাম্বারটি সেইভ করে] Thanks a lot.
জেরিনঃ [মুচকি হেসে] Welcome. আচ্ছা, চলুন, এবার নিচে যাওয়া যাক। সবাই নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন।
শায়ানঃ হ্যাঁ, চলুন।
দৃশ্য ৩
[ড্রয়িং রুম]
[জেরিন ও শায়ান ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে সোফায় বসে।]
শরিফাঃ এইতো ওরা এসে পড়েছে।
রেহমানঃ [উঠে দাঁড়িয়ে শরিফা ও রিদানকে বলেন] তাহলে আজ আমরা আসি। আপনাদের সাথে কথা বলে অনেক ভালো লেগেছে।
[সবাই দাঁড়িয়ে।]
রিদানঃ আমাদেরও অনেক ভালো লেগেছে।
শরিফাঃ আপনারা আবার আসবেন।
নীলাঃ জি, ইনশাল্লাহ।
রিদানঃ [রেহমানের সাথে করমর্দন করতে করতে] ভালো থাকবেন, দেখা হবে।
রেহমানঃ জি, আপনারাও ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
রেহমান ও নীলা [একসাথে] আল্লাহ্ হাফেজ।
[নীলা, রেহমান ও শায়ান বিদায় নেন।]
দৃশ্য ৪
[শায়ানের বাড়ি।]
[শায়ানকে ঘরের বাইরে যেতে দেখে নীলা তাকে ডেকে বলে।]
নীলাঃ শায়ান, এই শায়ান!
শায়ানঃ কি মা?
নীলাঃ বলছি একটু শুনে যা।
শায়ানঃ [মায়ের সামনে এসে বলে] কি বলবে বলো?
নীলাঃ কি রে, জেরিনের সাথে কথা বলে কেমন লাগলো বলতো? তাকে তোর পছন্দ হয়েছে তো?
শায়ানঃ [লাজুক হাসি হেসে] হ্যাঁ, মা।
নীলাঃ তাহলে তার মাকে ফোন করে বিয়ের দিন ধার্য করার ব্যাপারে কথা বলি, কি বলিস?
শায়ানঃ যেটা তুমি আর বাবা ভালো মনে করো, তাই করো মা।
নীলাঃ আচ্ছা, ঠিক আছে, তুই যা।
নীলাঃ [ফোনে] আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
শরিফাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। জি, আল্লাহ্র রহমতে ভালো আছো। আপনারা সবাই ভালো আছেনতো?
নীলাঃ জি, সবাই ভালো আছি। আসলে একটি বিষয় জানানোর জন্য ফোনটা করেছি।
শরিফাঃ জি, বলুন, কি বলবেন?
নীলাঃ আপনার মেয়েকে আমাদের সবারই খুব পছন্দ হয়েছে। আমরা আপনাদের সাথে নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চাচ্ছি। আশা করি আপনাদেরও কোনও আপত্তি নেই।
শরিফাঃ আলহামদুলিল্লাহ! আরে না, না, এতে আপত্তি করার কি আছে? এ যে এক বিরাট সুখবর!
নীলাঃ জি, তাহলে এখন বিয়ের তারিখ নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কথাবার্তা বলার জন্যতো আমাদের একদিন বসে আলাপ করার দরকার না কি বলেন?
শরিফাঃ জি, তা তো অবশ্যই। আপনারা ফ্রি থাকলে আগামীকালই আমাদের বাসায় চলে আসতে পারেন।
নীলাঃ জি আমরা ফ্রিই আছি। তাহলে কাল সন্ধ্যার পরই আসি।
শরিফাঃ জি, সন্ধ্যার পর আসলেই ভালো হবে।
নীলাঃ তাহলে বাকি কথা দেখা হবার পরেই হচ্ছে। ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
শরিফাঃ ঠিক আছে। আপনারাও ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
দৃশ্য ৫
[শায়ানের ঘর। জেরিনের ঘর। ফোনে শায়ান ও জেরিনের মধ্যে কথা হচ্ছে।]
শায়ানঃ হ্যালো!
জেরিনঃ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, জি কে বলছেন প্লিজ?
শায়ানঃ কি ব্যাপার? আমার কণ্ঠ তুমি চিনতে পারছো না?
জেরিনঃ [বিরক্ত হয়ে] এতো ভণিতা রেখে নিজের পরিচয় দিনতো, তা না হলে আমি লাইন কেটে দিতে বাধ্য হবো।
শায়ানঃ আচ্ছা, আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমি হচ্ছি সেই মানুষ যার সাথে আপনার বিয়ে হতে যাচ্ছে!
জেরিনঃ [লাজুক ভঙ্গীতে] শায়ান!
শায়ানঃ হ্যাঁ, শায়ান! আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার কণ্ঠ চিনতে পারবেন কিন্তু হায়, সে আশায় গুঁড়েবালি!
জেরিনঃ সরি! আসলে আপনার সাথে এই প্রথম ফোনে কথা বলছিতো তাই আপনার কণ্ঠ চিনতে পারিনি। সরি সরি সরি!
শায়ানঃ সরি বললে তো হবে না! তোমাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে! এই যা, আপনার অনুমতি না নিয়েই ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে ফেলেছি! সরি সরি সরি!
জেরিনঃ হা, হা, হা, কি মজা! মনে হচ্ছে যেন ’সরি’ বলার খেলা চলছে! প্রথমে আমি এতোবার সরি বললাম, আর এখন আপনি, ভালোইতো! সমস্যা নেই, আপনি আমাকে ‘তুমি’ বলতেই পারেন।
শায়ানঃ Thanks a lot এই অনুমতি দেবার জন্যে।
জেরিনঃ Welcome. কই বললেন না যে আমাকে কি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?
শায়ানঃ বলবো?
জেরিনঃ হুম, বলেন।
শায়ানঃ সত্যি বলবো?
জেরিনঃ বললামতো! নির্দ্বিধায় বলেন!
শায়ানঃ ফোনে একবার চুমু দিয়ে আমাকে ‘I love you’ বলতে হবে!
জেরিনঃ [লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে] আপনি একটা দুষ্টু!
শায়ানঃ বলো না প্লিজ, একবার বলো! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
জেরিনঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি এ কথা কে বললো?
শায়ানঃ সব কথা বলতে হয় না। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। ‘Love at first sight’ এ কথাটি বিশ্বাস করতাম না। তবে তোমাকে প্রথমবার দেখার পর থেকে সত্যিই আমি প্রেমের সাগরে ভেসে চলেছি। তুমি ছাড়া আমি ডুবে যাবো জেরিন! আমাকে কখনও ডুবতে দিও না! আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমিও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো। কি, আমি ঠিক বুঝেছি না? সত্যি করে বলো?
জেরিনঃ হুম, আপনি কচু বুঝিয়াছেন মশাই!
শায়ানঃ তার মানে তুমি I love you বলবে না, তাই তো?
[জেরিনের মা শরিফা ‘জেরিন জেরিন’ বলে ডাকছেন।]
জেরিনঃ [মায়ের উদ্দেশে] আসছি মা! আম্মু ডাকছেন। এখন রাখি। পরে কথা হবে। বাই।
শায়ানঃ ধেৎ! তোমার মা ডাকার আর সময় পেলেন না! এমন রোম্যান্টিক মুহূর্তটাকে ধ্বংস করে দিলেন। বাই!
দৃশ্য ৬
[সন্ধ্যার পর; জেরিনের বাসার ড্রয়িং রুম।]
[শায়ান, তার মা নীলা সিদ্দিকা, বাবা রেহমান চৌধুরী বসে আছেন। জেরিন খানমের মা শরিফা ইয়াসমিন এবং বাবা রিদান আহমেদ শায়ানের বাবাও আছেন।]
রেহমানঃ [রিদান ও শরিফার উদ্দেশে] বর আর কনে দুজনই দুজনকে পছন্দ করেছে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কিই বা হতে পারে! মিয়া বিবি রাজী তো কেয়া কারেগা কাজি!
[সবাই হেসে উঠে।]
[চা নাস্তা হাতে জেরিন প্রবেশ করে। সেগুলো পরিবেশন করে সে চলে যায়।]
রিদানঃ [হাসতে হাসতে] আপনি আমার মনের কথাটাই বললেন দেখছি।
নীলাঃ তাহলে এবার বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলা যাক নাকি বলেন?
শরিফাঃ জি, সেটাই ভালো। শুভ কাজে আর দেরী কেন?
রিদানঃ [গম্ভীর হয়ে নীলা, রেহমান ও শায়ানের উদ্দেশে বলেন] তবে আমার একটা প্রস্তাব আছে।
রেহমানঃ প্রস্তাব? মানে ঠিক বুঝলাম না!
নীলাঃ কি প্রস্তাব একটু কি খুলে বলবেন?
রিদানঃ জি বলছি, বিষয়টি হচ্ছে এই যে বিয়ের আগে একটি MOU অর্থাৎ একটি Memorandum of Understanding বা চুক্তিনামা করা হবে।
শায়ানঃ চুক্তিনামা? কিসের চুক্তিনামা?
রিদানঃ চুক্তিনামায় এটা লেখা থাকবে যে বিয়ের আগে যদি কোনও কারণে বরপক্ষ বিয়ে ভেঙে দেন, তবে কনে পক্ষকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর যদি কনে পক্ষ বিয়ে ভাঙে তবে তারা বর পক্ষকে ১ লাখ টাকা দেবে।
রেহমানঃ [গম্ভীর ভঙ্গীতে] রিদান সাহেব, এমন আশ্চর্য কথাতো কোনও কালে শুনিনি! বিয়ের আগে এমন আজব চুক্তিনামার কথা এই প্রথম শুনছি। তাছাড়া চুক্তিনামার বৈষম্য আমাকে আরও অবাক করেছে! বর পক্ষ ক্ষতিপূরণ দেবে ১০ লাখ আর কনে পক্ষ মাত্র ১ লাখ? এটা কোন ধরণের বিচার হলো?
রিদানঃ আমি জানি আপনারা অবাক হচ্ছেন এবং অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমি চাই না যে বিয়ে মোটামুটি পাকাপাকি পর্যায়ে চলে এসেছে, সেটা কোনও কারণে ভেঙে যাক।
রেহমানঃ তার মানে আপনাদের মনে সন্দেহ আছে যে আমরা এই বিয়ে ভেঙে দিতে পারি নাকি?
শরিফাঃ না, আসলে বিষয়টি হচ্ছে এই যে কোনও কারণে বিয়ে ভেঙে গেলে আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। তাই এই ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভেবেছি। তাছাড়া আপনারা এতো চিন্তা করছেন কেন? আপনারাতো আর বিয়ে ভাঙবেন না তাই না?
শায়ানঃ বাবা, আমি এমন চুক্তিনামা মেনে নিতে পারছি না!
রেহমানঃ তুই থামতো!
[রেহমান মনে মনে ভাবছেন যে আসলেই এই চুক্তিনামার কোনও ভিত্তি নেই কারণ আমরা কখনই এই বিয়ে ভাঙবো না।]
রেহমানঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। আমরা চুক্তিনামায় সই করতে রাজী আছি।
রিদানঃ চুক্তিনামা প্রস্তুত করাই আছে। শরিফা, ভেতর থেকে চুক্তিনামা নিয়ে এসোতো।
[শরিফা ভেতরে চলে যান।]
রেহমানঃ এখনতো মার্চ মাস, তাহলে আগামী মে মাসের ১৫ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করলে কেমন হয়?
[ইতোমধ্যে শরিফা চুক্তিনামা হাতে নিয়ে এসে রিদানকে সেটা এগিয়ে দিয়ে সোফায় বসেছেন।]
রিদানঃ জি মন্দ হয় না। [শরিফার উদ্দেশে] রেহমান সাহেব বলছেন যে মে মাসের ১৫ তারিখ বিয়ে হোক, তুমি কি বলো?
শরিফাঃ ঠিক আছে। কোনও সমস্যা নেই।
রিদানঃ [হাসতে হাসতে] তাহলেতো দিন ধার্য হয়েই গেছে! [চুক্তিনামা রেহমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে] রেহমান সাহেব, নিন, এই হচ্ছে চুক্তিনামা। এটা ভালো করে পড়ে দস্তখত করে দিলেই হয়ে যাবে।
[রেহমান কিছুক্ষণ সেই চুক্তিনামা পড়ে সেখানে দস্তখত দেন এবং রিদানকে সেটা ফেরত দেন। সবার মুখে হাসি শুধু শায়ান কেমন যেন একটি চিন্তিত।]
রেহমানঃ তাহলে আজ আসি।
রিদানঃ [হাসতে হাসতে] জি, তার আগে আসুন কোলাকুলি করি! এখনতো আমরা আত্মীয় হতে চলেছি তাই না?
[রেহমান রিদান এবং নীলা শরিফা পরস্পরকে কোলাকুলি করেন। রেহমান, নীলা ও শায়ান বিদায় নেন।]
দৃশ্য ৭
[রাতে রেহমানের বেডরুম]
নীলাঃ [পান বানাতে বানাতে] জেরিন মেয়েটি দেখতে যেমন পরীর মতন সুন্দরী, তেমনি গুণী তাই না?
রেহমানঃ ঠিক বলেছো। মেয়েটিকে আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।
নীলাঃ দুধে আলতা গায়ের রং! আমার শায়ানের সাথে দারুণ মানাবে!
রেহমানঃ হুম, এখন ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।
[এমন সময় চিন্তিত ভঙ্গীতে শায়ান প্রবেশ করে।]
নীলাঃ কিরে বাবা, তুই এতো রাতে, ঘুম আসছে না? কিছু বলবি নাকি?
শায়ানঃ হ্যাঁ মা।
রেহমানঃ কি বলবি বলে ফেল।
শায়ানঃ বাবা, মেয়ে সুন্দর, তার পরিবারও ভালো- সবই ঠিক আছে তবে একটা বিষয় আমার মনে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে!
রেহমানঃ কি?
শায়ানঃ সেটা হচ্ছে সেই আজব চুক্তিনামা!
রেহমানঃ ও বুঝেছি, আমি ভাবলাম আর কি না কি? ওটা নিয়ে তুই এতো দুশ্চিন্তা করিস নাতো।
শায়ানঃ বাবা, তুমি এটাকে এতো সহজ ভাবে নিচ্ছ কিভাবে আমি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না!
নীলাঃ শায়ান, তোর বাবা যখন তোকে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করছে, তখন কেন তুই এটা নিয়ে ভেবে ভেবে নিজের ঘুম নষ্ট করছিস বলতো?
শায়ানঃ কিন্তু মা...
রেহমানঃ [শায়ানের কথা থামিয়ে দিয়ে] শোন শায়ান, ঐ চুক্তিনামার কোনও ভিত্তি নেই। ওটা থাকা না থাকা একই কথা কারণ আমরাতো বিয়ে ভাঙবো না তাই না?
শায়ানঃ কিন্তু বাবা আল্লাহ্ না করুক তারপরও যদি কোনও কারণে বিয়েটা ভেঙে যায় তখন কি হবে?
রেহমানঃ তখন যা হবে দেখা যাবে। এখন যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
[শায়ান বিচলিত হয়ে কক্ষ ত্যাগ করে।]
দৃশ্য ৮
[শায়ান রাতে খাটে শুয়ে ল্যাপটপে ফেইসবুক ব্রাউজ করছে।]
[শায়ানের ইনবক্সে জেরিনের সাথে অন্য একটি ছেলের অন্তরঙ্গ ছবি এবং শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও পাঠানো হয়। যে এ্যাকাউণ্ট থেকে পাঠানো হয় সেটি যে ভুয়া তা সহজেই বোঝা যায় তবে ছবি ও ভিডিও ভুয়া নয়। শায়ান দুশ্চিন্তায় ঘামতে থাকে। সে আতংকে বিছানায় উঠে বসে।
[শায়ানের চোখে জল। শায়ান মনে মনে বলে, “আর মাত্র কয়েকদিন পরই জেরিনের সাথে আমার বিয়ে, আর সেই জেরিন কিনা কার না কার সাথে এমন সম্পর্কে জড়িয়ে আছে! না, না, আমি কোনও মতেই এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না! আমি আজই বাবা মাকে বলে এ বিয়ে ভেঙে দেবো”। শায়ান দৌড়ে তার বাবা মার কক্ষে যায়।]
শায়ানঃ বাবা, মা, আমি জেরিনকে বিয়ে করতে পারবো না!
রেহমানঃ কি আবোলতাবোল বকছিস? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
নীলাঃ দুদিন পর বিয়ে আর তুই বলছিস কি না বিয়ে করবি না!
শায়ানঃ হ্যাঁ, মা, আমি যা বলছি বুঝে শুনেই বলছি!
রেহমানঃ [রেগে ধমক দিয়ে] চুপ কর উন্মাদ কোথাকার! তোর মতিভ্রম হয়েছে দেখছি। সবকিছু ঠিকঠাক আর লাট সাহেব বলছেন কিনা বিয়ে করবেন না! মামার বাড়ির আবদার!
শায়ানঃ বাবা, আমার পক্ষে কোনও ভাবেই এ বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে চলে যেতেও রাজী আছি তবে বিয়ে করার কথা আমাকে বলো না প্লিজ!
রেহমানঃ [নিজের রাগ সামলে নিয়ে] আচ্ছা, তুই যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলি এটার পেছনের যুক্তিটা বলতো শুনি!
শায়ানঃ সেটা আমি এই মুহূর্তে তোমাদেরকে বলতে পারবো না বাবা, তবে এটুকু জেনে রাখো যে আমি ঠাণ্ডা মাথায়, সুস্থ মস্তিস্কেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা আমার এবং পরিবারের জন্য মঙ্গলকর হবে এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
নীলাঃ তুই যদি সবকিছু খুলে না বলিস তাহলে আমরা কি করে বুঝবো বল দেখি?
রেহমানঃ তাছাড়া ভুলে যেয়ো না যে চুক্তিনামায় সই করা হয়েছে! মনে আছেতো সেখানে লেখা ছিল যে আমরা বিয়ে ভাঙলে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে? তুমি ভালো করেই জানো যে এতো টাকা দেবার সাধ্য আমার নেই! যদি আমরা সেই পরিমাণ অর্থ দিতে অপারগ হই তবে কনে পক্ষ নিশ্চয়ই পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে না। নিশ্চয়ই তারা আইনের আশ্রয় নেবে এবং আমাদের সবাইকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে!
নীলাঃ তোর বাবা একদম ঠিক কথাই বলছে শায়ান। মাথা ঠাণ্ডা কর। এভাবে হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজে বিপদে পড়িস না, আমাদেরকেও বিপদে ফেলিস না। তাছাড়া মামলা হলে সমাজের অন্য মানুষেরা জানবে, আমাদের নাক কাটা যাবে। তখন রাস্তাঘাটে মুখ দেখাবো কি করে একবার ভেবে দেখ!
শায়ানঃ মা, আমি বাচ্চা নই! সবই বুঝি। তবে আমি এটাও বুঝি যে জেরিনের সাথে বিয়ে করলে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমি আবারো বলছি আমি কোনোভাবেই এ বিয়ে করতে পারবো না!
[শায়ান কক্ষ ত্যাগ করে।]
রেহমানঃ এ তো দেখছি ভারি বিপদ হলো!
নীলাঃ আচ্ছা, দুশ্চিন্তা করো নাতো। দেখি সকালে আমি তাকে বুঝিয়ে রাজী করাবো।
রেহমানঃ হুম, রাজীতো তাকে হতেই হবে নীলা, এছাড়া যে আর কোনও উপায় নেই!
নীলাঃ অনেক রাত হয়েছে, এবার শুয়ে পড়ো।
[নীলা বাতি নিভিয়ে দেন।]
দৃশ্য ৯
[বিকেলবেলা একটি পার্ক। শায়ান ও জেরিন বেঞ্চিতে বসে আছে।]
শায়ানঃ দেখো জেরিন, আমি তোমার কুকর্ম সম্পর্কে জেনে গেছি। আমাকে আর তুমি ধোঁকা দিতে পারবে না। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
জেরিনঃ কুকীর্তি মানে?
শায়ানঃ মানে প্রেমিকের সাথে তোমার ফষ্টিনষ্টির প্রমাণ আমার কাছে আছে। সম্ভবত তোমার প্রেমিকই সেগুলো আমাকে ফেইসবুকে দিয়েছে!
জেরিনঃ [হো হো করে হেসে উঠে বলে] সেগুলো আর কেউ নয় আমিই তোমাকে পাঠিয়েছি!
শায়ানঃ [অবাক হয়ে] তুমি পাঠিয়েছো? এসবের মানে কি?
জেরিনঃ তুমি কি কচি খোকা নাকি? এখনও এসবের মানে বুঝতে পারছো না?
শায়ানঃ না।
জেরিনঃ মানে হচ্ছে এই যে এসব দেখে তুমি বিয়ে ভেঙে দেবে আর আমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা পাবো! কি বুঝলে?
শায়ানঃ ছি, জেরিন, ছি! তোমাকে আমি যেদিন দেখি, সেদিন থেকেই ভালোবেসে ফেলি। তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্নের জাল বুনেছি আমি, আর তুমি কিনা এক আঘাতে আমার সকল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলে? মানুষ অর্থের লোভে এতোটা নীচে নামতে পারে এ ব্যাপারে আমার ধারণাই ছিল না! আজই আমি তোমার ধোঁকাবাজি সম্পর্কে তোমার বাবা মাকে জানাবো।
জেরিনঃ [আবারো পাগলের মত হেসে উঠে বলে] যাও, যাকে খুশি বলো, কোনও লাভ নেই বুঝলে! আমার বাবা মাও আমার প্ল্যানের অংশীদার! তাছাড়া তুমিই প্রথম নও, এভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই আমাদের পেশা! যাইহোক, তুমি আগামীকালের মধ্যেই ১০ লাখ টাকা দিয়ে চুপচাপ কেটে পড়ো, তা না হলে কিন্তু আমি মামলা করতে বাধ্য হবো। তখন বুঝবে ঠ্যালা- কত ধানে কত চাল?
শায়ানঃ জেরিন, প্লিজ এমনটি করো না! আমাদের এতো টাকা দেবার সাধ্য নেই! প্লিজ আমাদের সাথে এমন অবিচার করো না, প্লিজ! আমার জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলো না প্লিজ!
জেরিনঃ দেখো, তোমার এসব ফালতু কথা শোনার মত ধৈর্য বা সময় কোনওটাই নেই আমার! আমি এক কথার মানুষ! গেলাম!
[জেরিন চলে যায়। শায়ান একা সেখানে বসে জেরিনের চলে যাওয়া দেখছে।]
দৃশ্য ১০
[পরদিন দুপুরবেলা। জেরিনের বাড়ি। বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি।]
[ওসি সাহেব জেরিন, তার মা ও বাবাকে ধরে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাচ্ছেন। থানার সামনে এসে গাড়ি থামে। সবাই নেমে পড়েন। ওসি সাহেব তার নিজের কক্ষে গিয়ে বসেন। জেরিন, রিদান ও শরিফাকে ওসি সাহেবের সামনে আনা হয়। ওসি সাহেবের ফোন পেয়ে শায়ান, রেহমান ও নীলাও একটু পরে ঐ কক্ষে আসেন।]
ওসি সাহেবঃ [সবার উদ্দেশে] শায়ান আমাকে চুক্তিনামার বিষয়ে অবগত করেছে। জেরিনের কিছু আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও দেখিয়েছে। পাশাপাশি জেরিনের সাথে হওয়া কথাবার্তা তার মোবাইলে রেকর্ড করে আমাকে শুনিয়েছে। এ সবকিছু বিবেচনা করার পর বুঝতে আর বাকি থাকে না যে জেরিন ও তার বাবা মা শুধুমাত্র কিছু টাকার লোভে পড়ে দিনের পর দিন বিয়ে আর চুক্তিনামার ফাঁদে ফেলে অসহায় মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছিলো। [শায়ানের মা বাবার উদ্দেশে] আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না! আপনারা শিক্ষিত হয়েও কি করে এমন এক অদ্ভুত চুক্তিনামায় সই করতে পারলেন? ছেলের বুদ্ধিমত্তার ফলেই আজ আপনারা এতো বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেলেন! [জেরিন, রিদান ও শরিফাকে উদ্দেশ্য করে] আর তোমরা কালপ্রিটরা ভালো করে শুনে রাখো- তোমাদের যাতে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হয়, আমি ঠিক সেই ব্যবস্থাই করবো!
রেহমানঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ওসি সাহেব। আপনি আমাদের বাঁচালেন!
ওসি সাহেবঃ তবে ভবিষ্যতে আর কখনও এমন ধোঁকাবাজদের খপ্পরে পড়বেন না। সবসময় সতর্ক থাকবেন।
রেহমানঃ জি, ওসি সাহেব, অবশ্যই! এমন ভুল আর কখনই হবে না!
ওসি সাহেবঃ [শায়ান, রেহমান ও নীলার উদ্দেশে] আপনারা তাহলে আসুন।
[শায়ান, রেহমান ও নীলা থানা ত্যাগ করেন।]
ওসি সাহেবঃ [জেরিন, রিদান ও শরিফাকে দেখিয়ে কনস্টেবলকে আদেশ দেন] ওদেরকে হাজতে ভরো!
[জেরিন, রিদান ও শরিফা অসহায় হয়ে হাজতের রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চোখেমুখে অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে!]
[সমাপ্ত]