এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বদি আলম তিন তিনটে বাল্য বিবাহ করার পর আরও একটি করার পথে! ইতোমধ্যে তার অতি বিশ্বস্ত চ্যালা ঝাক্কাসকে চতুর্থ কনে খোঁজার গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আসলে তার ভালো নাম আক্কাস কিন্তু হিন্দি সিনেমা দেখে কথায় কথায় ‘ঝাক্কাস’ ‘ঝাক্কাস’ করে বলেই লোকজন তাকে ঝাক্কাস বলে ডাকতে শুরু করেন। বদির নিজের বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই হলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক কনের প্রতি তার মোহ এতোটাই বেশী যে তা ভাষায় প্রকাশ করাটা বেশ কষ্টসাধ্য! প্রথমবার বিয়ে করার সময় স্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর; দ্বিতীয়বার ১৪ বছর এবং সবশেষে ১৫ বছর! এলাকার মানুষ খুব ভালো করেই জানেন যে বাল্য বিবাহ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ কিন্তু তা সত্ত্বেও কনের পিতামাতাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে এবং নানান ছলে বলে কৌশলে বদি ঠিকই তার আখের গুছিয়ে নেয়। এলাকার লোকজন গোপনে বদিকে ‘বদের হাড্ডি’ বলে ডাকেন!
[মঞ্চে বদির প্রবেশ। তার পেছনে ঝাক্কাস গোবেচারা ভাব নিয়ে নীরবে হেঁটে আসছে। বদি একটি চেয়ারে বসতে যাবে এমন সময় ঝাক্কাস ঝড়ের গতিতে দৌড়ে গিয়ে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে চেয়ারটি মুছে দেয়। বদি মুচকি হেসে চেয়ারে বসে।]
বদিঃ [পাঞ্জাবীর পকেট থেকে চশমা বের করে পাঞ্জাবীতেই তার গ্লাস পরিস্কার করতে করতে বলে] কিরে ঝাক্কাস, তোরে যে একটা কাম দিসি হেইডার কি অবস্থা?
ঝাক্কাসঃ [মাথা চুলকাতে চুলকাতে] কোন কাম উস্তাদ?
বদিঃ [চশমা পড়ে বিরক্তির সাথে চোখ বড় বড় করে ঝাক্কাসের দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমটিয়ে বলে] কোন কাম? হারামজাদায় কয় কি? তোরে যে কামডা করতে কইছি হেইডা এর মইধ্যেই ভুইলা গেলি!
ঝাক্কাসঃ [নিজের কানের লতি ধরে, তারপর বদির পায়ে পড়ে] উস্তাদ, ভুল হইয়া গেছে! আমারে আফনে মাফ কইরা দেন। অহন মনে পড়ছে! আর ভুল হইবো না উস্তাদ! এক্কেরে আল্লাহ্র কসম কইতাছি!
বদিঃ কোন কাম ক দেহি?
ঝাক্কাসঃ হেই ইস্পেশাল কাম উস্তাদ!
বদিঃ [চশমা খুলে হাতে নিয়ে অতি জোরে ধমক দিয়ে এবং ঝাক্কাসকে লাথি মেরে বলে] হারামজাদা! বদের বদ! কামডা কি হেইডা সোজাসুজি না কইয়া তুই আমারে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া জজ কোর্ট আর হাই কোর্ট দেহাইতাছস!
ঝাক্কাসঃ [কোমরে হাত বুলাতে বুলাতে নিজেকে সামলে নিয়ে] আবারও আপনার পায়ে ধইরা মাফ চাই উস্তাদ! আর কুনো দিনও ঘুরাইয়া উত্তর দিমু না। আফনে যেমনে চান ঠিক হেমনেই উত্তর দিমু!
বদিঃ [চোখ বড় বড় করে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে বলে] হুম! মনে থাকে যেন! নইলে কিন্তু তোরে আমি ফুটবলের মতন পাছায় লাত্থি মাইরা বাইর কইরা দিমু!
ঝাক্কাসঃ [প্রায় কাঁদো কাঁদো ভঙ্গীতে] জে উস্তাদ!
বদিঃ সামনের দুই দিনের মইধ্যে তুই কম বয়সী কচি মাইয়ার খবর আমারে দিবি। মাইয়ার গতরের রং কিন্তু এক্কেরে দুধের লাহান ফর্সা হইতে হইবো। রং ময়লা হইলে কিন্তু তোরে আমি পুস্কুনির পানিতে হারাদিন ধইরা চুবামু!
ঝাক্কাসঃ [কাঁচুমাচু করে নিজের হাত কচলাতে কচলাতে] উস্তাদ, অনুমতি দিলে একখান কথা জিগাইতাম!
বদিঃ [গম্ভীর কণ্ঠে] জিগা!
ঝাক্কাসঃ মাইয়ার গতরের রং ফর্সা হইলেও দেখতে যদি সার্কাসে খেলা দেহাইন্না বাইট্টা মাইনষের মত অয় তাইলে কি চলবো?
বদিঃ [রক্তচক্ষু নিয়ে ঝাক্কাসের দিকে তাকায়; আবারও তাকে মারার জন্য তেড়ে যেতে যেতে] হারামজাদা!
ঝাক্কাসঃ [আতংকিত হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে] খাইছে আমারে!
[বদি ঝাক্কাসকে মারার জন্য তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে। মঞ্চ হতে দুজনেরই প্রস্থান।]
[মঞ্চে এক অল্পবয়সী বালিকার প্রবেশ। তার নাম খুশি আক্তার। খুশি গাছে ঢিল ছুঁড়ে পাকা বড়ই পাড়তে ব্যস্ত। রাস্তা দিয়ে ঝাক্কাস হেঁটে যাবার সময় খুশিকে দেখে নিজেও খুশী হয়ে যায় কারণ খুশির মাঝে সকল গুণাবলী বিদ্যমান যা তার উস্তাদ বদি চান।]
ঝাক্কাসঃ [মুচকি হেসে] ঐ ছেরি, তোর নাম কি?
খুশিঃ [নিজের চুলের বেণী দুলিয়ে এবং হালকা মেজাজ দেখিয়ে] নাম দিয়া কাম কি?
ঝাক্কাসঃ কাম আছে বইলাইতো জিগাইতাছি!
খুশিঃ [মাথা দু পাশে দোলাতে দোলাতে] আমি নাম কমু না!
ঝাক্কাসঃ কি জ্বালা রে বাবা! নাম কইলে কি তোর গা জ্বইলা যাইবোনি রে?
খুশিঃ [অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে] হ!
ঝাক্কাসঃ বেত্তমিস মাইয়া একখান! বেয়াদ্দব!
খুশিঃ [বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং জিহ্বা বের করে] কচু!
ঝাক্কাসঃ [রেগে খুশির দিকে তেড়ে যেতে যেতে] ফাজিলের ফাজিল! খাড়া! দেখাইতাছি তোরে!
[হাসতে হাসতে ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দৌড়াতে থাকে। ঝাক্কাস দাঁড়িয়ে তার দৌড়ানো দেখে। এমন সময় এলাকার জেলে জব্বর মিয়াকে আসতে দেখে ঝাক্কাস তাকে থামায়।]
ঝাক্কাসঃ জব্বর মিয়া! একটু খাড়াও। কথা আছে।
জব্বরঃ [ভ্রূ কুঁচকে] আমার লগে আবার কি কথা কও দেহি?
ঝাক্কাসঃ [খুশিকে দেখিয়ে] ঐ যে দেখতাছো মাইয়াডা দৌড়াইতাছে, তারে কি তুমি চিনোনি মিয়া?
জব্বরঃ [একটু ভালো করে লক্ষ্য করার পর বলে] হ চিনিতো!
ঝাক্কাসঃ [উত্তেজিত হয়ে হাসতে হাসতে] ফটাফট হের নাম ঠিকানা সব কও দেহি!
জব্বরঃ তুমি কিছু মনে না করলে একখান কথা জিগাই?
ঝাক্কাসঃ জিগাও।
জব্বরঃ হেই মাইয়ার খোঁজ খবর লইয়া তুমি কি করবা?
ঝাক্কাসঃ হুনো জব্বর মিয়া, আদার ব্যাপারী হইয়া জাহাজের খবর লইও না বুঝছো! তুমি তোতা পাখির লাহান জলদি কইরা তার নামধাম কও দেহি!
জব্বরঃ হের নাম খুশি আক্তার। বয়স ১৫ বা ১৬ হইবো। পড়াহুনা করে না।
ঝাক্কাসঃ তার বাপ?
জব্বরঃ বাপের নাম ফেনু আলি। রিক্সা চালায়। তার বউয়ের নাম আসমানি বানু, মাইনষের ঘরে কাম করে।
ঝাক্কাসঃ খুশির ভাই বেরাদার কয়জন?
জব্বরঃ ভাই বেরাদার আর নাই। হেই একলা। মাইয়াডা ফেনু আর আসমানির কলিজার টুকরা!
ঝাক্কাসঃ [খুশিতে হাসতে হাসতে] ঠিক আছে জব্বর মিয়া। আর কিছু কইতে হইবো না। ভালো থাইকো। গেলাম।
[মঞ্চ হতে ঝাক্কাসের প্রস্থান। ঝাক্কাস দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। জব্বর তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে চোখ মেলে বলে, “নিস্পাপ মাইয়াডারে শকুনের হাত থাইকা বাঁচাইও মাবুদ! তারপর মঞ্চ হতে জব্বারের প্রস্থান।]
বদিঃ [পুকুর পাড়ে ওযু করে ফিরে আসার সময় মুচকি হাসতে থাকা ঝাক্কাসকে দেখে] কিরে ঝাক্কাস! মনে রঙিন ঘুড্ডি উড়তাছে নাকি?
ঝাক্কাসঃ কেন উস্তাদ?
বদিঃ [হাঁটতে হাঁটতে রুমাল দিয়ে ভেজা হাত গলা মুছতে মুছতে] তোরে দেইখা মনে হইতাছে আইজ তোর মনডা এক্কেরে ফুরফুরা!
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ! আফনে এক্কেরে ঠিক ধরছেন!
বদিঃ [দাঁড়িয়ে ঝাক্কাসের দিকে তাকিয়ে] কি খবর ফটাফট কইয়া ফালা! নামাজ পড়তে হইবো।
ঝাক্কাসঃ উস্তাদ! একখান জব্বর মাইয়া দেখছি!
বদিঃ এতো দিনে একখান কামের কাম করছস মনে হইতাছে!
ঝাক্কাসঃ উস্তাদ, আফনে যেইরাম কইছেন এক্কেরে সেইরাম!
বদিঃ [মুচকি হেসে] মাইয়ার নাম কি?
ঝাক্কাসঃ খুশি।
বদিঃ বাহ! খুব মিঠা নাম দেহি! এক্কেরে গুঁড়ের লাহান!
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ! যেমন মিঠা নাম, তেমন মিঠা মাইয়া!
বদিঃ গায়ের রং ঠিক আছেতো?
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ! এক্কেরে দুধের লাহান সাদা!
বদিঃ বাড়াইয়া কইস না কইলাম। পরে যদি তোর কথার কগে না মিলে তাইলে কিন্তু তোরে আমি উল্টা কইরা বটগাছে ঝুলাইয়া দিমু!
ঝাক্কাসঃ বিশ্বাস করেন উস্তাদ, আমি হাছা কইতাছি! আফনে একবার দেখলেই বুইঝা যাইবেন!
বদিঃ লম্বা কেমুন?
ঝাক্কাসঃ লম্বায় কম না আবার বেশীও না উস্তাদ!
বদিঃ [চিন্তাশীল ভঙ্গীতে দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে] হুম! মাইয়াডা কচিতো?
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ! ঝাক্কাস! এক্কেরে কচি ডাবের লাহান কচি!
বদিঃ [খুশিতে হাসতে হাসতে পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একটি নোট বের করে] সাব্বাস ব্যাটা! এই নে পাঁচশো টাকা। চা বিস্কুট খাইস!
ঝাক্কাসঃ [পুলকিত হয়ে গর্বিত বোধ করে নোটটি হাতে নিয়ে] উস্তাদ, আফনে একবার নিজ চক্ষে দেইখা লইলে ভালা হইতো মনে অয়!
বদিঃ না, না, আমার আর দেহা লাগবো না। তোর বিস্তারিত হুইনা বুইঝা গেছি। মাইয়াডা জব্বর মাইয়াই হইবো!
ঝাক্কাসঃ আর কুনো কাম থাকলে কন উস্তাদ, আমি কইরা দিমু!
বদিঃ তুই এক কাজ কর, যেই কাজি আমার আগের তিন বিয়া পড়াইছে, হেরে খবর দে।
ঝাক্কাসঃ আইচ্ছা উস্তাদ। আমি অহনই যাইতাছি।
বদিঃ যা।
[ঝাক্কাসের প্রস্থান। বদি স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করে মুচকি হাসতে হাসতে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে।]
[কাজির ছেলে জাবের ইসলামকে সঙ্গে করে ঝাক্কাস মঞ্চে প্রবেশ করে।]
ঝাক্কাসঃ [বদির দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে] উস্তাদ! উস্তাদ!
বদিঃ [দরজা খুলে] কিরে ব্যাটা, আইয়া পড়ছস?
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ।
বদিঃ [এদিক ওদিক তাকিয়ে] তয় কাজি সাহেবরেতো দেখতাছি না? এই লোক কেডা?
ঝাক্কাসঃ [জাবেরকে দেখিয়ে] ইনি কাজি সাহেবের বড় পোলা।
জাবেরঃ আসসালামু আলাইকুম।
বদিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি নাম আপনার?
জাবেরঃ জে, আমার নাম জাবের ইসলাম।
বদিঃ আফনের আব্বাজান কি বেমার নাকি?
জাবেরঃ জে, আব্বার শরীলডা ভালা না। তার গিরায় গিরায় বেদনা আর বেদনা। হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। ডাক্তার কইছে বিছনা থাইকা না উঠবার লাইজ্ঞা।
ঝাক্কাসঃ চিন্তা কইরেন না উস্তাদ। জাবের সাহেবও বিয়া পড়াইতে পারেন।
বদিঃ হাছানি জাবের সাহেব?
জাবেরঃ হ, আক্কাস ঠিকই কইছে।
বদিঃ তইলে আক্কাস আফনারে হক্কল জিনিস বুঝাইয়া কইয়া দিবো। কি করতে হইবো, কি না করতে হইবো বেবাক জিনিস! ঠিক আছে।
জাবেরঃ জে আইচ্ছা!
বদিঃ আসসালামু আলাইকুম।
জাবেরঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
[মঞ্চ হতে বদির প্রস্থান। ঝাক্কাস কানে কানে জাবেরকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে। তারপর দুজনই হাসতে হাসতে মঞ্চ হতে প্রস্থান করে।]
[বিয়া রে বিয়া! উস্তাদের বিয়া! স্লোগান দিতে দিতে হাস্যজ্জল ঝাক্কাস মঞ্চে প্রবেশ করে। তার পেছনে আরও কিছু উৎসাহী লোকজন ঝাক্কাসের সাথে তাল মিলিয়ে বিয়া রে বিয়া! উস্তাদের বিয়া! বলতে থাকে।]
[মুখে রুমাল রেখে মোটামুটি লাজুক ভঙ্গীতে বদির আগমন। মঞ্চে তার জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে। ঝাক্কাসসহ তার সমর্থক এবং বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরে। কনে খুশিকে নিয়ে তার মা বাবার আগমন। কাজি জাবের এক কোণে দাঁড়িয়ে দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে মুচকি হাসে।]
জাবেরঃ [বর ও কনের কাছে এসে বলে] পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে বিয়ার কামকাজ শুরু করি তাইলে।
[ঠিক সেই মুহূর্তে তিনজন পুলিশ মঞ্চে এসে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে থানার ওসি জনাব সময় হাসানও আছেন।]
সময়ঃ এ বিয়ে হবে না!
বদিঃ [আতংকিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে] কেন হইবো না ওসি সাব?
সময়ঃ কেন হবে না তাও কি আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে? আপনি কি বাচ্চা নাকি? এখনও সেরেলাক খান?
বদিঃ আমি ঠিক বুঝতে পারতাছি না ওসি সাব!
সময়ঃ এখনও কনের বিয়ের বয়সই হয়নি! এটাকে ‘বাল্য বিবাহ’ বলে। আইনত এ ধরণের বিয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে বা যারা এ ধরণের বিয়েতে সমর্থন দেয়, তাদের সবাইকেই শাস্তি পেতে হয়। তোমাকে লালঘরে যেতেই হবে বদি! যেমন কর্ম তেমন ফল!
[চোর ধরা পড়লে যেমন ভঙ্গি করে ঠিক তেমন করে দুশ্চিন্তায় এদিক ওদিক তাকিয়ে বদি আচমকা দৌড় দেয়। ওসি সাহেবের সাথে থাকা দুজন অফিসারও তার পিছু নেন। দৌড়াতে দৌড়াতে বদি পুকুরে গিয়ে পড়ে। সাঁতরে তীরে এলে অফিসাররা তাকে গ্রেপ্তার করেন। সম্পূর্ণ ভিজে যাওয়া বদিকে ধরে মঞ্চে আনা হয়। তার কোমর শক্ত এবং মোটা দড়ি দিয়ে বাধা।]
সময়ঃ [জাবেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন] আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জাবের সাহেব।
জাবেরঃ আমিতো তেমন কিছুই করিনি। আসলে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। যখনই জানতে পারলাম যে আরও একটি বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এর একটা বিহিত করবই করবো। আমার বাবা যে অন্যায় পথে হেঁটেছেন, আমি সেই পথে যাইনি এবং কখনও যাবোও না।
সময়ঃ আপনি সময়মত আমাদেরকে সবকিছু অবগত করেছেন বলেই একটি অপরাধ থামানো গেছে। সমাজের সকল মানুষ যদি আপনার মত চিন্তা করতো, তাহলে কতোই না ভালো হতো!
বদিঃ [ঝাক্কাসকে ইশারায় বলে] দেখছসনি অবস্থাডা! জাবের হালায় কেমনে আমারে মাইনকা চিপায় ফালাইয়া দিলো!
ঝাক্কাসঃ হ উস্তাদ, সইর্ষের মইধ্যেই ভূত দেখতাছি! এই চিপা কঠিন চিপা উস্তাদ!
[পুলিশরা বদিকে নিয়ে প্রস্থান করতে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন সময় মহানন্দে বদির তিন স্ত্রী মঞ্চে আসে।]
১ম স্ত্রীঃ সাব! দয়া কইরা একটু খাড়ান!
সময়ঃ [ঘুরে তাকিয়ে কাছে এসে বলে] আপনার পরিচয়?
১ম স্ত্রীঃ আমি বদির পর্থম বউ।
সময়ঃ আপনি কি কিছু বলতে চান?
১ম স্ত্রীঃ জে। আমার একখান অনুরোধ আছে সাব।
সময়ঃ কি অনুরোধ?
১ম স্ত্রীঃ [ঝাক্কাসকে দেখিয়ে] আফনে বদির লগে ঐ ঝাক্কাসরেও ধইরা লইয়া যান। হে আস্ত একখান শয়তান! হারামজাদা!
২য় স্ত্রীঃ হ সাব! বদি যা কয়, হে ঠিক হেইডাই করে। হেরেও ধরেন!
৩য় স্ত্রীঃ হ হ, হেরা দুইজনে একদম ঠিক কথাডাই কইছে সাব! খাডাইসডারে জলদি বান্ধেন!
[ঝাক্কাস দৌড়ে পালাতে উদ্যত হলে অফিসার তার কলার চেপে ধরে। সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। উপস্থিত নিরীহ গ্রামবাসীরা খুশিতে এবং কৃতজ্ঞতায় হাততালি দিতে দিতে হাসতে থাকে। এতোদিন বদির অত্যাচারে কেউ মুখ খুলেনি। এখন সবার মনে সাহস জন্ম নিয়েছে। পুলিশ বদি এবং ঝাক্কাসকে নিয়ে প্রস্থান করার সময় গ্রামের কয়েকজন শিক্ষিত যুবক স্লোগান দিতে দিতে মঞ্চ হতে প্রস্থান করে- “বদির গালে, জুতা মারো তালে তালে!”, “ঝাক্কাসের চামড়া, তুলে নেবো আমরা!, বাল্য বিবাহ, বন্ধ করো, করতে হবে!”, “বাল্য বিয়ের ফাঁদে, পড়লে সবাই কাঁদে”, “বাল্য বিবাহ, করবো না আর কেহ!”]
সমাপ্ত