স্বামী ইলিয়াসকে তালাক দেবার পর থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অনেক চাপ দেয়া সত্ত্বেও লিমা দ্বিতীয়বারের মত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক। সে তার একমাত্র ছেলে খালেদকে নিয়েই বাকি জীবনটা পার করে দিতে চায়।
শুধু যে পরিবারের সদস্যরাই লিমাকে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বলে তা নয়, পাশাপাশি তার বান্ধবী এবং পাড়া প্রতিবেশীদের দিক থেকেও তাকে প্রায় সবসময় উপদেশ, প্রস্তাব ইত্যাদি শুনতে হয়।
কিন্তু এভারেস্টের মতন দৃঢ়চেতা লিমা কারো কথাতেই কর্ণপাত করে না। কারণ বিয়ে জিনিসটা তার কাছে একটা বোঝার মতন মনে হয়। সিসিফাসের ঘাড়ে যেমন বিশাল পাথরের টুকরা ছিল, ঠিক তেমনি বিয়ে নামক পাথরের ভার সে আর নিতে চায় না। তার পূর্বের স্বামী খালেদ তেমন কিছু করতো না বললেই চলে। দিন এনে দিন খেয়ে কোনওমতে টেনেটুনে জীবন চলছিল।
লিমার নিজের টুকটাক চাহিদা এবং স্বপ্নপূরণতো হচ্ছিলোই না, পাশাপাশি ছেলের ভবিষ্যৎও অন্ধকার মনে হচ্ছিলো। তাছাড়া কথায় কথায় খালেদের হাতে নির্যাতিত হওয়াটা যেন ছিল ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা!’ এসব কারণ বিবেচনায় রেখেই একদিন লিমা তালাক দিয়ে প্রজাপতির মত স্বাধীন হয়ে যায়।
লিমার একগুয়ে স্বভাব দেখে তার বৃদ্ধা মা মদিনা বানু খানিকটা রেগে গিয়ে তাকে বলে,
- বিয়া না করলে জীবন কাটবো কেমনে?
- মা, আমার জীবন লইয়া তোমাগো কাউরেই চিন্তা করতে অইবো না!
- এমুন কতা কইস না লিমা। মাইনষে কি কইবো?
- আমি মাইনষের খাই না পড়ি? এতো মাইনষের কতা হুনলে কি অইবোনি?
- তোর ছাওয়ালডার ভবিষ্যৎ লইয়া ভাবতে অইবো না ক?
- হেইডা আমি ভাবমু। তোমরা এতো চিন্তা কইরো না। দিনে রাইতে ‘বিয়া কর’ ‘বিয়া কর’ হুনতে হুনতে পাগল অইয়া গেলাম!
- তোরে কিছু কইলেই বোম্বাই মরিচের মত তেজ দেহাস! ঠিক আছে, তোর যা ইচ্ছা তাই কর!
- হ করুম!
লিমা তার এক বান্ধবীর পরামর্শ ও সহযোগিতায় একটি এনজিও থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে। ধীরে ধীরে সে কাপড় সেলাই করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। লিমার সফলতায় এলাকার অন্যান্য অনেক নারীরাও অনুপ্রাণিত হয়ে তাকে অনুসরণ করে এবং এভাবে নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’ প্রবাদটি হয়তো সম্পূর্ণ হবে যদি এভাবে বলা যায়- ‘ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলেই উপায় হয়!’ ইচ্ছা তো অনেকেরই থাকে কিন্তু জীবনে তারাই সফল হয় যারা অবিরত চেষ্টা করে যায়। লিমা তার ইচ্ছা এবং চেষ্টার মাধ্যমে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথ বের করে নিয়েছে।