যে সময়টায় বাংলা সিনেমা মৃতপ্রায়, সে সময়টায় এক অবতারের মতই রাজীবের আবির্ভাব হয়, গ্রীকদের কাছে ট্রোজানদের নিশ্চিত হার ঠেকাতে যেমন সাহসী একিলিসের আগমন হয় ঠিক তেমনি।
বাংলা সিনেমা হতে যাবতীয় অশ্লীলতা এবং দুর্নীতি দূর করতেই যেন পশ্চিমা বায়ুর মতই রাজীব আসে। সে তার মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের সংমিশ্রণে বাংলা সিনেমার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।
রাজীবের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে শত বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও সে অবশ্যই বাংলা সিনেমার গা হতে সকল দূষিত পদার্থ বের করে দর্শকদেরকে সুন্দর, রুচিশীল এবং নান্দনিক সিনেমা উপহার দিতে পারবে। প্রথমে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন অভিনেতা হিসেবে রুপালি জগতে পদার্পণ করা। ধীরে ধীরে নিজের অভিনয় দক্ষতা কাজে লাগিয়ে রুগ্ন সিনেমা শিল্পকে নবপ্রাণে উজ্জীবিত করে রাজীব প্রমাণ করে দেবে যে মানুষ চাইলে সবই সম্ভব হয়!
একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পাশাপাশি রাজীবের আরেকটি বড় স্বপ্ন হচ্ছে একজন বিশ্বনন্দিত ডিরেক্টর হওয়া। তার স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, মেধা, শ্রম এবং ধৈর্য একদিন তাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাবে এ ব্যাপারে তার মনে কোনও সন্দেহ নেই। তবে শুরুটা যে তাকে শূন্য থেকেই করতে হবে এটা সে বেশ ভালো করেই জানে।
একদিন রাজীব তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পা বাড়ায়; সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। তার এই সিদ্ধান্তের সাথে কেউ সহমত পোষণ করেছে, কেউ করেনি। কিন্তু তার মনে প্রাণে ফ্রষ্টের একটি কথাই বারবার অনুরণিত হতে থাকে- “And miles to go before I sleep.” সে জানে যে তাকে থামলে চলবে না; স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বিরতি নিলেই বিপত্তি।
যাইহোক, ঢাকায় রাজীব আপাতত তার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছে। টিভি এবং পত্র পত্রিকার মাধ্যমে বিএফডিসি সম্পর্কে সে আগেই অনেক কিছু জেনেছে। আজ প্রথম সে সশরীরে সেখানে যাচ্ছে। সে জানে যে কোনওমতে ভেতরে প্রবেশ করতে পারলেই হলো। তারপর কোনও না কোনও পরিচালকের সাথে কথা বলে সে ঠিকই একটা না একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। একপর্যায়ে বিএফডিসির ভেতরে প্রবেশ করে।
সৌভাগ্যবশত, সেখানে বাংলাদেশি সিনেমার সুপারস্টার নায়ক শাকিব খানের সাথে দেখা হয়ে যায়। রাজীব বেশ উত্তেজিত এবং আবেগাপ্লুত হয়ে তাকে বলে,
- আমি আপনার প্রতিটি সিনেমা দেখেছি!
- তাই নাকি? জেনে খুব খুশী হয়েছি! আপনার নামটা জানতে পারি?
- জি, আমার নাম রাজীব হক।
- আর আমার নাম শা...
- সেটা আর বলতে হবে না! আপনাকে সবাই একনামে চেনে!
- হা, হা, হা!
- আপনি আমার প্রিয় নায়ক!
- থ্যাংক ইউ সো মাচ!
- আপনার অভিনয় যে আমার কত ভালো লাগে তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না!
- দর্শকদের ভালো লাগলেই আমার আনন্দ! দর্শক আছে বলেই অভিনেতারাও আছে।
- একেবারে আমার মনের কথাটিই বলেছেন শাকিব সাহেব!
- আপনি কি এখানে শুটিং দেখতে এসেছেন নাকি?
- জি না, আসলে আমার স্বপ্ন হচ্ছে সিনেমায় অভিনয় করা।
- বাহ, ভালো তো! তা আপনার কি ফিল্ম লাইনের কারো সাথে পরিচয় আছে?
- জি না, তবে আপনি যদি আমাকে একটু হেল্প করেন, তাহলে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
- বলুন, আমি কিভাবে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি?
- আপনি অনেক জনপ্রিয় এবং বড় মাপের অভিনেতা। অনেক বছর ধরে আপনি সাফল্যের সাথে অভিনয় করে যাচ্ছেন। আপনার অনেক জানাশোনা মানুষ সিনেমার লাইনে আছে। আপনি যদি অনুগ্রহ করে কোনও ডিরেক্টর কিংবা প্রডিউসারের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতেন, তাহলে খুব ভালো হতো!
- আচ্ছা, আমাকে আবার শুটিং-এ যেতে হবে। আপনি তাড়াতাড়ি একটি নাম্বার সেইভ করুন। ০১৯৩৭৬৫৯৭৬৮।
- জি সেইভ করেছি। এটা কার নাম্বার?
- এটা একজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম্বার। তার নাম শরিফ আহমেদ। তাকে ফোন দিয়ে আমার কথা বলবেন। বলবেন যে আমার কাছ থেকেই নাম্বারটি পেয়েছেন। তারপর তার সাথে একদিন দেখা করে সামনাসামনি আলাপ করলে আপনার সুবিধা হবে।
- থ্যাংক ইউ সো মাচ! আসলে আপনি একজন ফেরেশতা! আপনি যে আমার কত বড় উপকার করেছেন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না! আসলেই আপনি একজন মহান অভিনেতা। আল্লাহ্ আপনাকে আরও অনেক সাফল্য দিক এই কামনাই করি!
- ঠিক আছে রাজীব সাহেব। এবার আমাকে শুটিং-এ যেতে হবে। ভালো থাকবেন। আর সিনেমা লাইনে থাকলে কোনও না কোনও দিন আবারও দেখা হবে।
- জি, আপনিও ভালো থাকবেন।
অতঃপর রাজীব পরিচালক শরিফ আহমেদকে ফোন করে। একদিন দেখাও হয়। শরিফ রাজীবকে প্রথম দেখার পর নিজ থেকেই তার পরবর্তী সিনেমায় প্রধান নায়কের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন।
প্রথম ছবিতেই রাজীব সুপারস্টার হয়ে যায়! দেশে বিদেশে তার খ্যাতি দাবানলের মতন ছড়িয়ে পড়ে! সে তার স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় আরও বেশী করে আত্মবিশ্বাসের ছটা ছড়াতে থাকে। পৃথিবীতে অনেক মানুষ সফল হতে চায় কিন্তু সফলতা অর্জনের জন্য যেটুকু শ্রম এবং সময় দেয়া উচিত সেটুকু দেবার ক্ষেত্রে তাদের রাজ্যের অলসতা! তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সফলতা এবং ব্যর্থতার মাঝখানে সূক্ষ্ম পার্থক্য তৈরি করে যে জিনিসটি তা হচ্ছে ‘চেষ্টা’।
রাজীব সেই সব অলস মানুষদের দলের কেউ নয়; সে সম্রাট নেপোলিয়নের মতই তার জীবনটা সুন্দর পরিকল্পনায় সাজানো। জীবনটা তার কাছে দড়ির উপর হেঁটে যাবার মত; এখানে সামনে যাওয়াটাই মুখ্য; সামান্য একটু ভুলেই ডানে কিংবা পড়ে গিয়ে সকল স্বপ্ন অকালেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। রাজীবের জীবনে এক একটি সফলতার রঙিন পালক জমা হচ্ছে; সে তার আরাধ্য স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রায় কাছাকাছি...!