এতিম [Bangla Story]

       বারো বছরের জাফর এতিমখানার ভয়ানক পরিবেশ থেকে কোনওমতে বের হয়ে এসে যেন নতুন এক বিশাল জেলখানায় পড়েছে, যেটির নাম পৃথিবী! ঠিক সেই চার্লস ডিকেন্সের অসাধারণ সৃষ্টি অলিভার টুইস্ট-এর এতিম অলিভারের মতন।

 

        এতিমখানায় প্রথম যেদিন তার আপন বাবা রেখে গিয়েছিল, তখন জাফরের মনে হয়েছিল এটা নিশ্চয়ই কোনও বোর্ডিং স্কুল ধরণের কিছু হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সেই ভ্রান্ত ধারণা কেটে যেতে থাকে, ঠিক যেমন আকাশ হতে মেঘ সরে যায় তেমন।

 

        খাওয়া দাওয়ার মান নিয়ে কিছু বলাই বাহুল্য! তার উপর এতিমখানার দায়িত্বে যারা, তাদের চরম বাজে ব্যবহার এবং অমানুষিক নির্যাতনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। একবার প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগার কারণে জাফর এতিমখানার পরিচালক জসিমের কাছে গিয়ে বলে,

 

- স্যার, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে! আমাকে কিছু খেতে দিন!


- জি স্যার! আপনার জন্যইতো খাবার নিয়ে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম! আপনি যে কোথায় ছিলেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না! বাঁদরের বাদর কোথাকার! এই নে কষে একটা চড় খা!

 

        জীবনে এই প্রথম জাফর এতো জোরে চড় খেয়েছে। চড় খাবার ফলে তার ডান গাল ফুলে গেছে যেমন করে কারো আক্কেল দাঁত ফেলে দেবার পর ফুলে যায় তেমন! সে জানে না তার দোষ কি? সে বুঝতে পারছে না যে সামান্য একটু খাবার খুঁজে সে কি এমন পাপ করেছে?

 

        যাইহোক, জাফর এখন উড়ন্ত পাখীর মতই মুক্ত। সে সেই এতিমখানা নামক নরক থেকে অনেক অনেক দূরে। যদিও সে একটি তেঁতো বাস্তবতা দূরে ঠেলে সামনে এসেছে, কিন্তু তার সামনে যে আকাশের চেয়েও বিশাল রুঢ় বাস্তবতা অপেক্ষা করে আছে!

 

        জাফর জানে না কোথায় যাবে, কি করবে, কিভাবে নিজের ক্ষুধা নিবারণ করবে। কিন্তু কথায় আছে যে রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে! একদিন অভুক্ত এবং জরাজীর্ণ জাফরকে সমুদ্রের তীরে গোমড়া মুখে বসা অবস্থায় কাঁদতে দেখে একজন বিদেশি পর্যটক তার কাছে এসে বলে,

 

- Who are you?


- হু?


- What is your name?


- হু?


- Why are you crying?


- হু?

 

            সেই পর্যটকের নাম জন; সে আমেরিকান নাগরিক। তার সাথে তার স্ত্রী লিসাও আছে। তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এখনও নিঃসন্তান। ক্রন্দনরত জাফরকে দেখে তাদের খুব মায়া হয়। তারা তাকে দত্তক নিতে চায়। সেই মুহূর্তে তাদের পাশ দিয়ে একজন কোস্টগার্ডকে হেঁটে যেতে দেখে জন জাফরকে দত্তক নেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে,

 

- Excuse me!


- Yes please!


- Could you please help me?


- How could I help you?  


- Well, this poor child has been crying for a long time!


- Ok.


- I have asked him some questions but he could not reply!


- May be he does not know English.


- My wife and I would like to adopt him if he is an orphan.


- That sounds great! But, let me talk to him about his family background first.


- Sure, go ahead!

 

             কোস্টগার্ড জাফরের দিকে ফিরে তার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে মুচকি হাসতে হাসতে বলে,

 

- কি রে, তোর নাম কি?


- তোর বাসা কোথায়?


- বাসা নাই।


- কোথায় থাকিস?


- একটা এতিমখানায় থাকতাম, পালিয়ে এসেছি!


- কবে পালিয়ে এসেছিস?


- আজ।


- এই যে বিদেশি ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলাকে দেখছিস, তারা তোকে দত্তক নিতে চায়।


- দত্তক মানে?


- মানে তাদের কোনও সন্তান নেই। তোকে দেখে তাদের মনে স্নেহ জন্মেছে। তাই তারা তোকে তাদের সাথে তাদের দেশে নিয়ে যেতে চায়।


- কোন দেশ?


- আমেরিকা! বিরাট দেশ! তুই অনেক আরামে থাকবি সেখানে গেলে! যাবি নাকি?


- হ্যাঁ যাবো!


- আচ্ছা! তার আগে আমাকে তোর ঐ এতিমখানার ঠিকানা বলতে পারবি?


- হ্যাঁ পারবো!


- বেশ ভালো!

 

        জাফর কোস্টগার্ডকে ঐ এতিমখানার ঠিকানা বলে দেয়। কোস্টগার্ড জন এবং লিসাকে সেই ঠিকানা চিনিয়ে দেয়। যেহেতু জাফর এতিমখানা থেকে পালিয়েছে, সেহেতু তাকে দত্তক হিসেবে নিতে হলে সেই এতিমখানার অনুমতি সাপেক্ষে এবং সকল নিয়মকানুন মেনেই নিতে হবে।

 

        সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পর জন এবং লিসা জাফরকে নিয়ে বিমানে চড়ে। জাফর এতদিন শুধু আকাশে বিশাল চিলের মতন বিমান উড়তে দেখেছে, কখনও বিমানে চড়ার কথা দূরে থাক, স্বচক্ষে বিমান দেখার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি! আজ সেই জাফর বিমানে তার বাবা জন এবং মা লিসার সাথে বসে আছে। সে জানালার বাইরে তাকিয়ে শাপলা ফুলের মতন সাদা মেঘ দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে! 

 

এতিমখানায় থাকার সময় বহুবার সে আকাশ, মেঘ, বিমান ইত্যাদি এঁকেছে; আজ সে মেঘের উপরে ভাসছে! ভাবতেই আনন্দে জাফরের চোখের কোণে দুফোঁটা জল জমে!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: