জোবায়দা খুবই রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়া একটি মেয়ে। তার বাবা বেলাল ইসলাম বাড়ির পাশের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। ছোটবেলা থেকেই একমাত্র মেয়েটিকে ইসলামী ধ্যান ধারণার দ্বারা বড় করে তুলেছেন।
জোবায়দার মা শায়লা ইসলাম সবসময় নিজের মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। যেন কোনও প্রকার বাজে কিছু জোবায়দাকে স্পর্শ করতে না পারে। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে মেয়ে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানেই মানুষরূপী কিছু হায়েনা তার পিছু নেবেই! তাই তিনি কখনও জোবায়দাকে একা কোথাও বের হতে দেন না। তিনি নিজে মেয়েকে কলেজে দিয়ে আসেন এবং তিনিই নিয়ে আসেন।
জোবায়দা অবশ্য মায়ের এই যাওয়া আসাটা মোটেও ভালোভাবে নেয় না। তার রীতিমত বিব্রত লাগে; মনে হয় যেন সে এখনও শিশু, পথ হারিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে! তাছাড়া জোবায়দার সহপাঠীরাও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। একদিন সে তার মাকে বলেই বসে,
- আচ্ছা মা, আমি কি এখনও বাচ্চা আছি?
- হঠাৎ এ কথা কেন বলছিস?
- কেন বলছি তুমি বুঝতে পারছ না?
- না, খুলে বল।
- এই যে প্রতিদিন তুমি আমার সাথে ছায়ার মত যাও আর আসো এসব আমার মোটেও ভাল্লাগে না!
- ভাল্লাগে না বললেই হবে? পাড়ায় কত বখাটে ছেলেরা মোড়ের কাছে বসে আড্ডা দেয়, মেয়েদের দেখলে অশ্লীল মন্তব্য করে তা কি তুই দেখিস না?
- কিন্তু আমাকেতো কখনও করেনি।
- করেনি বলে যে করবে না তার নিশ্চয়তা কি?
- তুমি একটু বেশীই চিন্তা করছ মা, আমার সহপাঠীদের মধ্যে সবাই একা একাই কলেজে যায়। একমাত্র আমিই আমার মায়ের সাথে যাই, এটা কি গর্ব করার মতন কোনও বিষয় হলো?
- দেখ, এটা তোর বাবার নির্দেশ। আমি চাইলেও অমান্য করতে পারবো না। তোর যদি এতোই আপত্তি থাকে তাহলে তুই তোর বাবার সাথে কথা বল। আমার এখানে কিচ্ছুই করার নেই!
- বাবার সাথে আমি এ বিষয়ে কথা বলবো? হাসালে মা!
- কেন, সমস্যা কি?
- না মা, আমি পারবো না। বরং তুমিই একটু বলে দেখো না প্লীজ!
- আচ্ছা ঠিক আছে, কথা দিতে পারছি না তবে আমি চেষ্টা করে দেখবো।
- থ্যাংক ইউ সো মাচ মা!
শায়লা বেলালের সাথে কথা বলেন। বেলাল রাজি হন ঠিকই তবে একটি কঠিন শর্ত আরোপ করে দেন। শর্তটি হচ্ছে এই যে এখন থেকে জোবায়দাকে বোরখা পড়ে ঘরের বাইরে যেতে হবে।
জোবায়দা মায়ের মুখ থেকে এই শর্তটি শুনে শুরুতে খুব বিষাদগ্রস্ত হলেও পরে একা ঘরের বাইরে যাবার স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে বাধ্য সন্তানের মত তা মেনে নেয়। মায়ের সাথে গিয়ে মার্কেট থেকে কয়েক জোড়া বোরখা কিনে আনা হয়।
বোরখা পড়ে মনে মনে খুব একটা আনন্দিত হতে না পারলেও মুক্ত পাখীর মতন স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারার চিন্তা তার সমগ্র চেতনাকে গাছের পাতার মতন নাড়া দিচ্ছে! প্রথম কয়েকদিন বোরখা পড়ে বের হতে একটু অস্বস্তি হলেও পরে সেই অস্বস্তি কেটে যায়।
একদিন জোবায়দা কলেজে গিয়ে সময়মত ফিরে না আসলে বেলাল এবং শায়লা পাগলের মতন এদিক ওদিক খোঁজখবর নিতে থাকেন। আত্মীয়স্বজন কেউ বলেন যে অপহরণজনিত ঘটনা হয়তোবা, কেউ বলেন যে হয়তো কোনও প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে, কেউ কেউ আবার সন্দেহ করছে যে জোবায়দা আত্মহত্যা করেনিতো!
বেলাল এবং শায়লা তাদের কলিজার টুকরা জোবায়দাকে হারিয়ে নরকের আগুনে পুড়ছে এমনটি মনে হতে থাকে। শেষপর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে আইনের আশ্রয় নেয়া হয়। থানার ওসি সাহেব জোবায়দার ছবি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে বেলাল এবং শায়লাকে আশ্বস্ত করেন যে অতিসত্বর জোবায়দাকে খুঁজে বের করা হবে। অনন্ত প্রতীক্ষার শুরু...