জীবনানন্দ দাশের “রূপসী বাংলা”: ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ [Bangla Essay]

জীবনানন্দ দাশেররূপসী বাংলা গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালের আগস্ট মাসে কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে। প্রাথমিকভাবে এই গ্রন্থের কবিতাগুলোর কোনও শিরোনাম ছিল নাপ্রচলিত মতে, কাব্যগ্রন্থটির নামকরণ এবং উৎসর্গ কবির ভাই অশোকানন্দের করা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে কাব্যগ্রন্থটির প্রতিটি কবিতার শিরোনাম প্রথম পঙ্ক্তির প্রথমাংশ থেকে নেয়া হয়েছে

   

জীবনানন্দ দাশকে ভালোবেসে ডাকা হয়- রূপসী বাংলার কবি”, “শুদ্ধতম কবি, কিংবা নির্জনতার কবি তাঁর রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের ৬১টি কবিতা যেন সুজলা সুফলা বাংলাদেশেরই প্রতিবিম্ব। তাঁর কাছে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। এতো মায়া এবং মমতা দিয়ে লেখা কবিতাগুলো পাঠকদের হৃদয় মন আচ্ছন্ন করে রেখেছে যুগের পর যুগ। আর কেউ কি এতো সুন্দর করে বলতে পারবে?   

 

তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব;

দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;

 

বাংলার রূপ ও সৌন্দর্য কবিকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করেছে যেমন করে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। বাংলার বুকে যে অপার রূপের খনি, তার কাছে পুরো দুনিয়ার সৌন্দর্য যেন কবির কাছে নস্যি!       

 
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আরঃ অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে

 

একজন দক্ষ চিত্রশিল্পীর মতন জীবনানন্দ দাশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নদী, পাখি, ঘাস, ফুল ইত্যাদি চিত্রিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন যে জীবনানন্দ দাশের কবিতা চিত্ররূপময় তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহীরা তাঁকে যথার্থইরূপসী বাংলার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার মোহ তাঁকে চুম্বকের মতন আকর্ষিত করেছে নিরবধি।

 

কবিতায় উপমা প্রয়োগে জীবননান্দের দক্ষতা অপরিসীম যেমন তিনি বলেছেন- বাঘিনীর গর্জনের মতো অন্ধকার, শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা নেমে আসা, ধানের গন্ধের মতো লক্ষ্মী পেঁচা ইত্যাদিতে উপমার অনন্য ব্যবহারের পাশাপাশি স্পর্শ, দর্শন, ঘ্রাণ, শ্রবণ প্রমুখ ইন্দ্রিয়ের প্রয়োগ লক্ষণীয় এককথায় এসব শব্দ আমাদেরকে ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য এবং ইন্দ্রিয়াতীত অনুভূতির সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়। 

 

পরিশেষে এটাই বলতে হয় যে বাংলার রূপ-প্রকৃতিতে জীবনানন্দ দাশের কবিসত্ত্বা কতটা মিলেমিশে একাকার হয়েছে তা তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলোর দিকে আলোকপাত করলেই বোঝা যায়। বাংলার প্রকৃতি, শান্ত নদী, মাঠ-ঘাট ইত্যাদিতে কবির কল্পনার অবাধ বিচরণের ফলস্বরূপ পাঠকগণ নান্দনিক এবং অসাধারণ বৈশিষ্টমণ্ডিত সব কবিতা উপহার পেয়েছেন। শহরের চাকচিক্যপূর্ণ পরিবেশের চেয়ে গ্রামবাংলার চিরসবুজ প্রকৃতিই তাঁর কাছে অধিকতর মূল্যবান ছিল। তাই তিনি বারবার গ্রামে ফিরে যাবার তাগিদ বোধ করেছেনঃ  

 

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়

View kingofwords's Full Portfolio
tags: