অহেতুক ভয়? [Bangla Story]

          প্রতি শুক্রবার রাতে অভয় চাতক পাখীর মতন অপেক্ষায় থাকে যে কখন ভূত এফ এম শুরু হবে! রাত বারোটার আগ থেকেই সে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুয়ে থাকে। মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া সত্যিকার ভৌতিক ঘটনার আলোকেই রেডিওর এই অনুষ্ঠান। যদিও অভয়ের বয়স পঁয়ত্রিশ বছর, তবুও তার কাছে ভূত এফ এম-এর আকর্ষণ চুম্বকের মতই তীব্র!

 

        এমন কোনও শুক্রবার নেই যে অভয় ভূত এফ এম শোনেনি! শোনার আগে অবশ্য তার কক্ষটিকে সবদিক থেকে উপযোগী করে তুলে সে। যেমন- মশার কামড়ে তার গল্প শোনায় ব্যাঘাত ঘটবে বলে মশারী টানানো, ভৌতিক আবহ তৈরি করার জন্য ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়া ইত্যাদি।

 

        যাইহোক, অভয় রেডিওতে বলা মানুষের প্রতিটি ভৌতিক অভিজ্ঞতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে। সে যে ভয় পায় না তেমন নয়, গল্পগুলো তার মনে এমনভাবে প্রভাব ফেলে যেমন করে মাটিকে কুয়াশা এক আবরণে ঢেকে দেয়। অর্থাৎ অভয়ের মস্তিষ্কে এক ধরণের অদৃশ্য ভয়ের প্রলেপ পড়ে।

 

        তবে রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে এই যে যতবার অভয় ভূতের গল্প শোনার পর বাথরুমে গিয়েছে, ততবার তার কানে এক অদ্ভুত শব্দ বেজেছে! সে ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবে না যে সেই শব্দটি কি রকম, তবে এটি যে সত্যি সেটি তার মন জানে! এ্যা প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া-য় মিসেস মুর যেমন মারাবার গুহার ভেতরে প্রবেশ করার পর বউম নামক অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পান অনেকটা সেরকম!

 

        অভয় নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করেও সেই আজব আওয়াজের উৎস খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য কোনো দিন সে এই আওয়াজ শুনতে পায় না; শুধুমাত্র শুক্রবার রাতে ভূত এফ এম শোনার পর বাথরুমে গেলেই এটা হয়! এ বিষয়ে একদিন সে তার মা জ্যোৎস্নাকে বলে,

 

- মা, আমি যতবার ভূত এফ এম শুনে বাথরুমে যাই, ততবার এক অদ্ভুত রকমের আওয়াজ শুনি!

- মানে? কি ধরণের আওয়াজ?

- সেটা আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না মা!

- তুই কি রকম আওয়াজ শুনিস তা আমাকে বলতে পারছিস না, এটা কেমন কথা? যেহেতু তুই নিজেই শুনেছিস, তাই তোরইতো সেটি সম্পর্কে ভালো জানার কথা, তাই না?

- হ্যাঁ মা, তুমি ঠিকই বলেছো, তবে আমি কেন জানি ব্যাখ্যা করে বলতে পারছি না!

- আচ্ছা, ঠিক আছে, বলতে হবে না। এতো চিন্তা করিস নাতো! এটা হয়তো তোর মনের ভুল; তাছাড়া যদি মনে করিস যে এটা থেকে মুক্তি পাচ্ছিস না, তাহলে আমার মতে তুই ভূত এফ এম শোনা বন্ধ করে দিয়ে দেখতে পারিস। এক শুক্রবারে ভূত এফ এম না শুনে বাথরুমে গিয়ে দেখ কি হয়?

- হ্যাঁ, মা, তুমি একদম ঠিক কথাই বলেছো! তাহলে বোঝা যাবে যে আসল ঘটনাটা কি?

 

        নাগরদোলার মতন আবারও সপ্তাহ ঘুরে শুক্রবার আসে। ভূত এফ এম-এর প্রতি অভয়ের আকর্ষণ নেশার মত তীব্র হলেও সে আজ শুনবে না বলেই মনস্থির করে। নিজের প্রতি করা তার সংকল্প সে রাখে। রাত দেড়টার দিকে সে বাথরুমে যায় এবং দরজা বন্ধ করতে না করতেই সেই অদ্ভুত আওয়াজ তার কানে আসে! সে দুই হাতে সজোরে তার কান বন্ধ করে রাখার পরও সেই আওয়াজ যেন তার মাংসল কবজি ভেদ করে কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে!

 

        পরদিন সকালে অভয়ের মা অনেক ডাকাডাকির পরও তাকে তার কক্ষে না পেয়ে বাথরুমের দরজায় জোরে জোরে টোকা দিয়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু ভেতর থেকে অভয়ের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি তার স্বামী জাবেদকে ডেকে আনেন। আতঙ্কিত জাবেদও অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেন কিন্তু অভয়ের কোনও আওয়াজ পান না।

 

        পরিশেষে দরজা ভেঙে বাথরুমের ভেতরে যেতেই অভয়ের পিতামাতা যা দেখেন তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না! তাদের আদরের ছেলের মাথা কমোডের ভেতরে এবং পা উপরের দিকে!

View kingofwords's Full Portfolio
tags:
bishu's picture

Hope you are safe Bondhu

... the cyclone Ruanu.... it brought 3 days rain to Kolkata also....


©bishu 

 

KingofWords's picture

Yes

Yes my esteemed friend! I am hale and hearty! Thank you so much for the concern. Take care! :)