১৯৫২ সাল। খোলা আকাশ যেমন হঠাৎ দুধের মত শুভ্র মেঘে ঢেকে যায়, ঠিক তেমনি অকস্মাৎ খোলা রাস্তায় মিছিলের আবির্ভাব হয়! শত শত তরুণ তরুণীরা বজ্রের মত আওয়াজ তুলে বলছে, “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই!”
সেই রাস্তার পাশেই ফেলে রাখা সিমেন্টের তৈরি বিশাল পাইপের ভেতরে স্বাধীন এবং তার মা জুলেখার বসবাস। স্বাধীন একজন টোকাই। এতগুলো মানুষের মুখে সে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই!” বলতে শুনে তার মাকে অসীম কৌতূহলী চোখে প্রশ্ন করে,
- আইচ্ছা মা, “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই!” মানে কি?
- কে জানে?
দুয়েক মিনিট পরেই পাকিস্তানী সৈন্যরা নির্মমভাবে মিছিলকে উদ্দেশ্য করে অনবরত বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ করতে থাকে। চোখের পলকেই অনেকগুলো তাজা প্রাণ লাশে পরিণত হয়। সেই পাইপের ভেতর থেকে স্বাধীন এবং জুলেখা বিস্ফোরিতপ্রায় চোখে এই হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হয়।
মা এবং ছেলে এতো ভয় জীবনে আর কখনও পায়নি। আতংকে স্বাধীন দুমড়ে মুচড়ে ফেলা কাগজের মত হয়ে গেছে। সে রক্তাক্ত লাশগুলোর দিকে তাকাতে চাইলে জুলেখা তার মুখ অন্য দিকে সরিয়ে দেয়। এমন বীভৎস কাণ্ড না দেখাটাই সমীচীন। অনেকক্ষণ পরে স্বাধীন তার মাকে আবারও প্রশ্ন করে,
- মা, কি এমন চাইলো যে মানুষগুলারে এইরাম গরুর মত মাইরা ফালাইলো?
- কে জানে?
প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেই স্থানে আর কোনও লাশ নেই, নেই রক্তের কোনও ছিটেফোঁটা। সবকিছু এমনভাবে পরিস্কার করা হয়েছে যেন কিছুই হয়নি! কিন্তু স্বাধীন এবং জুলেখার মনে গাঁথা সেই ভয়ংকর দৃশ্য কি কেউ কভু মুছে ফেলতে পারবে?