অবৈধ সম্পর্ক হচ্ছে পুকুরের সেই পরজীবীর মত যেটি ধীরে ধীরে সমস্ত গাছের পাতা খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। যদি দেয়ালে ফাটল ধরে তবে তা মেরামত করা সহজ, কিন্তু যদি সম্পর্কে ফাটল ধরে তবে তা সহজে জোড়া দেয়া যায় না!
আসিফ এবং অহনার জীবনে সবেমাত্র প্রেমের দোলা লাগতে শুরু করেছে। যদিও আসিফই প্রথমে অহনার প্রেমে পড়ে যায়, কিন্তু সে অতিমাত্রায় অন্তর্মুখী হবার কারণে অহনাকে মুখ ফুটে ‘ভালোবাসি’ বলতে অত্যন্ত দ্বিধা বোধ করতে থাকে।
অন্যদিকে অহনাও আসিফের মনের কথা বুঝতে পারে; তবে সে মনে মনে অপেক্ষা করছিল যে আসিফ এসে তাকে প্রপোজ করবে। কিন্তু তার সেই মনের আশা মনের ভেতরেই সমাধিস্থ হয়ে যায়।
অগত্যা অহনা একদিন নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে আসিফের হাতে একটি লাল গোলাপ দিয়ে বলে,
- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- কি? আমার সাথে মজা করছো তাই না?, আসিফ বেশ অবাক হয়েই বলে।
- মজা করার জিনিসের কি দুনিয়ায় অভাব আছে নাকি? এভাবে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে মজা করতে যাব কেন?
- না, মানে আজকাল মানুষ কত রকমের দুষ্টামি এবং ঠাট্টা যে করে তারতো কোনও হিসেব নেই, তাই বলছিলাম আর কি!
- আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি আসিফ!
মানুষের দেহ পরিবর্তনশীল, কিন্তু তার চেয়েও বেশী পরিবর্তনশীল তার মন! প্রেমে পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে আসিফ বহির্মুখী হতে শুরু করে। সে আগে যেখানে কোনও মেয়ের সাথে কথাই বলতো না, সেখানে এতো সহজে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করে; তাকে দেখে কেউ বলতেই পারবে না যে এই ছেলের সামনে বোমা মারলেও পেট থেকে কোনও কথা বের হবে! অবশ্যই এ সবের কৃতিত্ব শুধুমাত্র একজনের- সেই একজন হচ্ছে অহনা।
অহনার পারিবারিক অবস্থা বেশ সচ্ছল হলেও আসিফের তেমনটি নয়। তার বাবা জহির উদ্দিন একটি মসজিদের ইমাম। নিজে যা সামান্য কিছু উপার্জন করেন তা থেকে আসিফের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তারপরও মাঝে মাঝে ছেলের জন্য কিছু টাকা পাঠান।
আসিফ তার পরিবারের আর্থিক টানাপড়েন উপলব্ধি করতে পারে বলেই নিজে বেশ কয়েকটি বাসায় গিয়ে টিউশনি করায়। এতে তার থাকা, খাওয়া ও হাত খরচের টাকা চলে আসে। মাঝে মাঝে সে ভাবে যে এই টিউশনি যদি না থাকতো, তবে ভার্সিটিতে পড়াটা তার জন্য আকাশকুসুম কল্পনা হয়েই থাকতো।
যাইহোক, দিন যত গড়ায়, আসিফ অনন্যার প্রেমও তত গভীর হয়। ইতোমধ্যে আসিফ সাহস করে অহনার হাতে এবং তুলার মত শুভ্র ও মখমলের মত নরম গালে চুমু খেয়েছে। যদিও তার খুব ইচ্ছা অহনার রক্তজবার মত ঠোঁটে চুমু দেয়ার কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও কেন জানি অহনা অনুমতি দেয়নি।
কয়েকদিন আগে আসিফ একটি নতুন টিউশনি পেয়েছে। ছেলেটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার নাম রবি। মজার বিষয় হচ্ছে এই যে রবিকে পড়ানো শেষ হলে তার মা তাকে ভেতরের রুমে পাঠিয়ে দিয়ে আসিফের সাথে গল্প করা শুরু করে। গল্প অবশ্য একতরফাই হয়; মহিলা রেডিওর মত বলেই যান আর আসিফ কান পেতে শুনতেই থাকে এবং মাঝে মাঝে মহিলার কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মাথা নাড়ায়! যেমন,
- আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটি বিশাল দীঘি আছে। সেই দীঘিতে ছোটবেলায় কত সাঁতার কাটতাম! বুঝেছো?
- জি!
- মাঝে মাঝে ঐ দীঘির পাড়ে বসে মাছ ধরতাম।
- ও!
- মাছ ধরতে ধরতে অনেক বেলা করে বাসায় ফিরলে আম্মু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারার জন্য পিছু নিতেন কিন্তু আমি দৌড়ে লুকিয়ে যেতাম!
- তাই?
- এখনকার বাচ্চারাতো দীঘি কি জিজ্ঞেস করলেই ঠিকমত বলতে পারবে না! তাই না?
- জি!
- আচ্ছা! এই যে আমি বকবক করেই যাচ্ছি তাতে তুমি বোর ফিল করছো নাতো?
- না!
একদিন আসিফ রবিকে তার বাবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; সে উত্তরে বলে যে তার বাবা মারা গেছেন অনেক বছর আগে। কেন জানি আসিফের জানতে ইচ্ছে হয়েছে বলেই এই প্রশ্নটি করে বসেছে।
রবির মা দেখতে বেশ নাদুসনুদুস। বেশ মেরিলিন মনরোর মতই বেশ লাস্যময়ী এবং যৌনাবেদনময়ী। গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা একেবারে গ্রীষ্মের আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের মত। একদিন মহিলা কথা বলা অবস্থায় তার পেটের উপর হতে শাড়ির কিছুটা অংশ সরে যায়। আসিফ সেই সামান্য অংশের দিকে চুম্বকের মত আকৃষ্ট হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত অপলক তাকিয়ে থাকে। মহিলাও আসিফের দৃষ্টি লক্ষ্য করে কিন্তু মসৃণ পেট থেকে সরে যাওয়া শাড়ি ইচ্ছে করেই স্বস্থানে রাখেন না। হয়তো তিনি চান আসিফ তার শারীরিক সৌন্দর্য উপভোগ করুক।
প্রায় প্রতিদিনই আসিফ চলে যাবার সময় হলেই রবির মা এসে গল্প জুড়ে দেন। কথার মাঝখানে ‘আচ্ছা আমি তাহলে আজ আসি’ বলেও কোনও কাজ হয় না। তিনি বসতে বলে আবার গল্প চালিয়ে যেতে থাকেন।
এই মহিলার অদ্ভুত স্বভাব সম্পর্কে অহনাকে জানানো উচিত হলেও আসিফ তা গোপন করে। তার পেছনে একটি কারণ এই যে যদি অহনা জানতে পারে, তাহলে সে হয়তো আসিফকে নিষেধ করবে এই টিউশনি চালিয়ে যাবার জন্য।
শুরুর দিকে ঐ মহিলার অনর্গল কথা বলা একঘেয়েমিপূর্ণ মনে হলেও পরবর্তীতে কেন জানি আসিফের ভালো লাগতে শুরু করে। এখন সে অহনার সাথে ফোনে বেশী কথা না বলে রবির মার সাথেই বেশী কথা বলে। অহনা যখনই আসিফের ফোন ওয়েটিং-এ পায়, তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আসিফ মিথ্যা কথা বলে। ‘বাবা ফোন দিয়েছে’, ‘মার সাথে কথা বললাম’ ইত্যাদি নানান মিথ্যা কথা বলতে থাকে।
পুকুর পারে সিমেন্টে বাঁধানো ঘাটে যেমন ধীরে ধীরে শ্যাওলা ধরে, তেমনি অহনার মনেও ধীরে ধীরে সন্দেহ নামক শ্যাওলা জমতে থাকে। একদিন আসিফের ফোন এভাবে ওয়েটিং-এ পাবার পর অহনা ঐ নাম্বারটি দেখাতে বলে এবং তার সামনেই স্পিকার অন করে ফোন দিতে বলে। কিন্তু আসিফ আর কোনও উপায় না দেখে নিজের দোষ ঢাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকে; সে বলে যে মায়ের সাথে কথা বলেছে। এভাবে মিথ্যার উপর মিথ্যা বলতে থাকে। কথায় আছে একটি মিথ্যা আরও দশটি মিথ্যার জন্ম দেয়। আসিফ মিথ্যার জালে মাছের মত জড়িয়ে পড়েছে। অহনা আসিফের কাছ থেকে তার মায়ের নাম্বার চাইলে সে ধরা খাবার ভয়ে সেটি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অহনারও আর বুঝতে বাকী থাকে না যে আসিফ তাকে ধোঁকা দিচ্ছে; এই আসিফ আর সেই আসিফ নেই!
অহনা আসিফের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক শেষ করে দেয়। ওদিকে আসিফ রবির মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। রবি যখন স্কুলে চলে যায়, তখন ঐ মহিলা ফোন দিয়ে আসিফকে আসতে বলে। আসিফ মহিলার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন।
এ সম্পর্কের শেষ পরিণতি কি তা ঐ মহিলা এবং আসিফ কেউই জানে না। তারা দুজনেই বর্তমান নিয়ে মেতে আছে; ভবিষ্যৎ নামক মরীচিকা নিয়ে কারোই মাথাব্যথা নেই।