রাতেই তাদের কাজ, না, কাজ না বলে কুকাজ বলাই ভালো! রাতেই তারা রক্তচোষা বাদুড়ের মত বের হয় অন্যের সাজানো গোছানো জীবন মুহূর্তে ধ্বংস করতে; একদম ঐ অত্যাচারী রাবণের মত। এককথায় তাদেরকে আমরা ‘ডাকাত’ বলে ডাকি!
ডাকাত সরদার বশির তার সাঙ্গপাঙ্গদের বারবার নির্দেশ দিচ্ছে, বারবার বোঝাচ্ছে যাতে তাদের পরিকল্পনায় সামান্য কোনও ভুলও যাতে সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে না বের হয়! খুব সাবধান করে দিচ্ছে সবাইকে; এককথা যে কতবার বলছে তার কোনও হিসেব নেই। বিশেষ করে দলে নতুন আসা আরিফকে। তাকে নিয়েই বশিরের সবচেয়ে বেশী ভয়। যদি সে কোনও ভুল করে। ডাকাতিতে ভুল করা মানেই মৃত্যু!
যাইহোক, মোট দশজনের দলটি তাদের বন্দুক, রামদা ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত। অনেকদিন ধরে যে বাড়িটি তারা টার্গেট করেছে সেটি বেশ দূরে নয়। বাহাই নদীর তীরে বট গাছের নিচে সেটির অবস্থান। রাত তিনটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকী।
সবাইকে বশির কড়া নির্দেশ দিয়েছে এই বলে যে যদি বাড়ির কেউ চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে তবে সাথে সাথে তাকে রামদা বা ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করতে। গুলি খরচ না করাই ভালো কারণ গভীর রাতে গুলির আওয়াজ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যাবে; তখন পাড়া প্রতিবেশী জেগে গেলে বিপদ আরও বাড়বে!
দশ ডাকাত তাদের মিশন সফল করতে বের হয়েছে। প্রত্যেকের সারা শরীর কালো চাদরে আবৃত। চাদরের নিচেই তারা তাদের ভয়ংকর সকল অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। নির্দিষ্ট বাড়িটির দরজার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করতেই আগে থেকে লুকিয়ে থাকা পুলিশ তাদের সবাইকে ঘিরে ফেলে।
বশিরের অবস্থা হয়েছে ঠিক কোনও অসুস্থ খোঁড়া বাঘের মতন যে না পারছে সামনে যেতে না পারছে পেছনে। যেদিকে তাকায় শুধু পুলিশ আর পুলিশ! ডাকাত সর্দারের আর বুঝতে বাকী নেই যে দলের মধ্যে কোনও ইঁদুরই এই জঘন্য কাজটি করেছে। নিশ্চয়ই কেউ আগে থেকে পুলিশকে জানিয়ে রেখেছে, তা না হলে কেউ কখনই এ ব্যাপারে জানতে পারত না।
বশির মনে মনে দলে আসা নতুন ছোকরা আরিফকেই সন্দেহ করছে। এখন আর সন্দেহ করেই বা কি লাভ? পুলিশের হাতে ধরা তো সবাই পরেই গেছে; এখন বাকী জীবনটা জেলের চার দেয়ালে চিড়িয়াখানার পশুর মতই কাটাতে হবে।
বশিরসহ সব ডাকাতই দুহাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণ করে। কারণ যদি তারা গোলাগুলি করে, তবে একজন ডাকাতও প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না। এক পুলিশ অফিসার গর্বের সাথে বশিরকে বলে,
- বশির! অবশেষে মাছ জালে ধরা পড়েছে!
- স্যার! আপনার দুই পায়ে পড়ি! এবারের জন্য আমাকে ছেড়ে দিন! আমি আর কখনও ডাকাতি করব না।
- ধরা খাবার সাথে সাথে সাধু হয়ে গেছো দেখছি! এবার জেলে গেলে আর যেন জামিনে বের হতে না পারো সেই ব্যবস্থা করা হবে।
- স্যার! কিছু নিয়ে দফারফা করা যায় না? আপনারও লাভ, আমারও লাভ!
- মানে?
- মানে বলছিলাম যে কিছু টাকাকড়ি আপনার বাড়ি পৌঁছে দিলে কি সমাধান হবে না?
বশিরের মুখ থেকে শেষের প্রশ্নটি শুনে অফিসারের মুখ রাগে মিষ্টি কুমড়ার মতন লাল হয়ে যায়! তিনি বশিরের গালে কষে চড় দিয়ে বলেন, “ফাজিলের ফাজিল! তুই আমাকে সবার মত মনে করেছিস নাকি? আমাকে কিনতে চাস ব্যাটা বদমাশ কোথাকার?”
পুলিশের গাড়িতে একে একে সব ডাকাতকে তোলার সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলে উঠে, “যেমন কর্ম তেমন ফল!”