ইচ্ছা! [Bangla Story]

        সাত বছর বয়সী জামিলার সাধ হয়েছে যে সে কচুর লতি দিয়ে ভাত খাবে; সাথে থাকবে কাঁচা মরিচ আর ধোঁয়া ওঠা গরম ডাল! দরিদ্র মা কইতরিকে এ কথা জানাতেই তার চোখে পানি চলে আসে।

 

        এতটুকু আহ্লাদী একটা মেয়ে তার, অথচ সামান্য সাধটুকু পূরণ করার সামর্থ্য নেই কইতরির। তবুও মেয়ে যখন খেতে চেয়েছে, মা তাকে কোনোভাবেই নিরাশ করতে চায় না। ঘরে যে পরিমাণ চাল আছে তা কোনওমতে একজন খেতে পারবে; কইতরি মনে মনে ঠিক করে যে জামিলার পেট ভরলেই তার পেট ভরবে; ডাল আছে একমুঠো। কাঁচা টবে লাগানো গাছ থেকে কাঁচা মরিচের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। কিন্তু আসল সমস্যা হচ্ছে কচুর লতি নিয়ে।

 

        কচুর লতি কিনে আনার পয়সা কইতরির কাছে নেই। নদীর পারের স্যাঁতসেঁতে ডোবায় অবশ্য কিছু কচু গাছ আছে; সেখানে গেলে নিশ্চয়ই কিছু লতি ছিঁড়ে আনা যাবে। কিন্তু কইতরির পায়ের ব্যথাটা হঠাৎ এতটা বেড়ে গেছে যে এতটা দূরে হেঁটে গিয়ে লতি সংগ্রহ করে আনা সম্ভব নয়। তবুও জামিলার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনওমতে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়।

 

        জামিলার বয়স কম হলেও অনেক কিছুই বুঝে। যেমন সে জানে যে তার মা কয়েকদিন ধরে বাতের ব্যথায় সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে। এমতাবস্থায় মা হেঁটে হেঁটে এতো দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসলে অনেক কষ্ট হবে। তাছাড়া এতে করে ব্যথাটা আরও বাড়তে পারে। তাই জামিলা বুদ্ধি করে মাকে বলে,

 

- আমি গিয়া লতি যোগাড় কইরা আনি মা?

 

- শখ কত! তোমারে লতি আনতে অইব না!

 

- ক্যান, আমি গেলে কি আমারে ভূতে ধইরা লইয়া যাইবনি?

 

- ভূতে না নিলেও সময়ডা খুব খারাপ। সাবধানে চলা লাগে বুজছস?

 

- কি জানি! তোমার এইসব বড় বড় কতা আমি বুজি না, বুজতে চাইও না!

 

নদীর ধারের সেই স্থানটি জামিলার খুবই চেনা। প্রায়ই বান্ধবীদের সাথে সেখানে গোল্লাছুট ও কুতকুত খেলতে যায় সে। কইতরি অনেক বারণ করা সত্ত্বেও জামিলা একগুঁয়ে ষাঁড়ের মত দেয় এক দৌড়!  

 

সে যখন ঘরের বাইরে পা ফেলে তখন বাজে ২ টা বেজে একত্রিশ মিনিট। এদিকে মেয়ের ফিরে আসার অপেক্ষা করতে করতে কইতরির চোখের পাতা ঘন কুয়াশার চাদরের মত ভারী হয়ে আসে; সে ঘুমিয়ে পড়েছে! হঠাৎ আসরের আজান কানে আসলে কইতরি লাফ দিয়ে উঠে! সে জামিলা জামিলা বলে এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু কোনও উত্তর ফিরে আসে না। এ যেন কোমায় শয্যাশায়ী রোগীর সাথে কথা বলার মত! আত্মীয়রা তার দিকে তাকিয়ে কথা বলেই যায়, কিন্তু গাছের গুঁড়ির মত পড়ে থাকা দেহ হতে কোনও আওয়াজ আসে না!

 

এদিকে বিকেল গড়িয়ে রাত নামে। কইতরির মনে সাগরের ঝড়ের মত উত্তাল হাওয়া বইছে। সে কোনওমতে নিজের দেহটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে উঠোনে দাঁড়ায় এবং আকাশপানে চায়। কেন জানি তার মনে হয় যে অন্য দিনের তুলনায় আজকে আকাশের তারারা অনেক বেশী উজ্জ্বল! কিন্তু সে আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করে যে চাঁদটি ঘন মেঘের আড়ালে রয়ে গেছে। মানুষ ঘরে পর্দা দিয়ে যেমন সূর্যের প্রখর রশ্মিকে ঘরে প্রবেশ করতে বিরত রাখে, ঠিক তেমনি আকাশের মেঘপুঞ্জও কোনও এক রহস্যময় কারণে চাঁদকে তার আলো ছড়াতে দিচ্ছে না!


      সেই আড়ালে থাকা চাঁদের কথা ভাবতে ভাবতে জামিলার কথা মনে পড়ে। তখন মায়ের মনে যে কি কষ্টের হিম বাতাস বয়ে যায় তা বর্ণনা করার ভাষা কারোই নেই, থাকতে পারে না! তার চাঁদের টুকরা জামিলাও যে আকাশের চাঁদের মতই এখনও আড়ালেই আছে! সে যে কখন বাসায় ফিরবে...?

View kingofwords's Full Portfolio
tags: