[মাসুম নামক ছেলেকে গাছে বেঁধে গরুর মতন পেটাচ্ছে জলিল নামক একজন। পাশে ঘটনার ভিডিও করছে তার বন্ধু সুজন। ঘটনা দেখে এগিয়ে আসে বিবেক।]
বিবেকঃ আরে, তুমি ছেলেটিকে এভাবে মারছো কেন?
জলিলঃ মারলে আপনের কি? আপনারেতো আর মারতেছি না, নাকি?
সুজনঃ এ্যা! মাতবর আইছে!
জলিলঃ আরে ঐ সুজন।
সুজনঃ কি?
জলিলঃ খুব সন্দর কইরা ভিডু করবি কইলাম! নাইলে কিন্তু তোর খবর আছে! এইডা কিন্তু ভাইরাল হইতে হইবো? বুঝছস?
সুজনঃ হ ভাই, করতাছি। নো টেনশান!
জলিলঃ এইবার শালার মাথায় মারমু। [লাঠি উচিয়ে] ইয়া...!
বিবেকঃ [জলিলের হাতে থাকা লাঠি ধরে] থামো! থামো বলছি!
জলিলঃ [টেনে লাঠি সরিয়ে নিয়ে] ঐ মিয়া, হেরে মারলে আফনের কি সমস্যা? হে কি আফনের বইন জামাই লাগে?
বিবেকঃ মুখ সামলে কথা বলো! এসব বাজে কথা একদম বলবে না!
জলিলঃ একশবার বলমু! হে কি আফনের বইন জামাই লাগে?
বিবেকঃ [রেগে গিয়ে জলিলের কলার ধরে] বেয়াদপ কোথাকার! [ঠাস করে কয়েকটা চড় মেরে দেয় জলিলের গালে] [সুজনকে বলে] তোর বন্ধু থাপ্পড় খাবার দৃশ্যটা খুব ভালো করে ভিডিওটা কর!] [সুজন বাধ্য শিশুর মতন ক্যামেরা বিবেক এবং জলিলের দিকে তাক করে]
জলিলঃ কাজটা কিন্তু ভালো করলেন না। আফনে খামোখা কোনও কিছু না জাইনাই এইখানে নাক গলাইতাছেন!
সুজনঃ হ, জলিল ভাই ঠিকই কইছে। এই পোলাডা জলিল ভাইয়ের মুরগী চুরি করছে। হেইল্লাইজ্ঞা আমরা তারে মাইরা তক্তা বানাইতাছি!
মাসুমঃ [কাঁদতে কাঁদতে] বিশ্বাস করেন, আমি চোর না! আমি চুরি করি নাই!
বিবেকঃ তোমাদের কি বিবেক বলে কিছুই নেই?
জলিলঃ আরেও হের কতা বিশ্বাস কইরেন না! হে একটা আস্ত মিত্থুক!
সুজনঃ হ, আস্ত মিত্থুক! [মাসুম আরও জোরে কাঁদতে থাকে। ক্যামেরা আবারো মাসুমের দিকে তাক করে]
বিবেকঃ সে যে তোমার মুরগী চুরি করেছে, তার কি কোনও প্রমাণ আছে?
জলিলঃ অবশ্যই আছে!
সুজনঃ হ, হ, আছে।
মাসুমঃ [কাঁদতে কাঁদতে] একদম মিছা কতা! আল্লাহ্র দুহাই লাগে। বিশ্বাস করেন, আমি চোর না। আমারে বাসায় যাইতে দেন।
[বিবেক এগিয়ে গিয়ে মাসুমকে বন্ধনমুক্ত করতে চেষ্টা করেন]
জলিলঃ [এগিয়ে গিয়ে থামাতে চেষ্টা করে] আফনে কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতাছেন!
সুজনঃ হ, বেশি একদম!
বিবেকঃ [জলিলের হাত দ্রুত সরিয়ে দিয়ে] মনে হয় থাপ্পড়গুলো হজম হয়ে গেছে! আরও কয়েকটা দেবো নাকি? [চড় দিতে হাত তুলে, জলিল দ্রুত সরতে গিয়ে সুজনের উপর পড়ে যায়। দুজনই মাটিতে গড়াগড়ি খায়। নিজেদের সামলে দাঁড়ায়]
বিবেকঃ [মাসুমকে বন্ধনমুক্ত করে তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে] কেঁদো না। যাও বাড়ি যাও। যাবার সময় কিছু ঔষধ কিনে নিও।
মাসুমঃ [কান্না মুছতে মুছতে] আল্লাহ্ আফনের অনেক ভালা করুক! অনেক ভালা করুক! [মাসুম হেঁটে যায়। যাবার সময় জলিল ও সুজনের দিকে তাকায়। সুজন আবারো মাসুমের দিকে ক্যামেরা তাক করে। সে তাদের দিকে তাকিয়ে] থু!
জলিলঃ চোরেরে শিক্ষা দিলে আফনের পবলেমডা কি?
সুজনঃ হ, কি পবলেম?
বিবেকঃ প্রথমত, সে যে চোর, তার কোনও প্রমাণ তোমাদের কাছে নেই।
জলিলঃ আফনেরে কইছি না, আছে।
সুজনঃ হ। আছেতো!
বিবেকঃ তাহলে প্রমাণ দেখাও!
জলিলঃ আফনেরে দেখামু কেন, আফনে কেডা?
সুজনঃ হ, কেডা আফনে?
বিবেকঃ [মুচকি হেসে] প্রমাণ যে তোমাদের কাছে নেই, সেটা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। তাছাড়া প্রমাণ থাকলেও এভাবে একজন মানুষকে গাছের সাথে বেঁধে মারার কোনও অধিকার নেই তোমাদের। দেশে আইনকানুনতো আছে, নাকি? আর কখনো যদি এভাবে অন্যায়ভাবে কারো উপর নির্যাতন করতে দেখি, তবে কিন্তু তোমাদের নামে আমি মামলা করবো। তখন বুঝবে কতো ধানে কতো চাল। [সুজনের দিকে তাকিয়ে] ঐ বেটা, জলিলের চামচা, এখনই ঐ ভিডিওটা ডিলিট কর।
সুজনঃ [বাধ্য ছেলের মতন ডিলিট করে] হ, ডিলিট মাইরা দিছি!
জলিলঃ [রেগে] হালা ছাগলের ছাগল! তুই একটা আস্ত বলদ!
সুজনঃ হ, বলদ, বলদ!
বিবেকঃ [যে লাঠি দিয়ে মাসুমকে প্রহার করা হয়েছিল, সেটা হাতে নিয়ে জলিল ও সুজনের দিকে মারার ভঙ্গিতে এসে] যাও ভাগো!
[জলিল ও সুজন দৌড়ে চলে যায়।]
[সমাপ্ত]