[সীমান্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চায়। এ ব্যাপারে সে এলাকার বড় ভাই অভ্রর সাথে কথা বলছে।]
সীমান্তঃ [পেছন থেকে ডাকে] অভ্র ভাই! এই অভ্র ভাই!
অভ্রঃ আরে, সীমান্ত দেখছি! কেমন আছো?
সীমান্তঃ এইতো ভাই, আছি একরকম। করোনার সময় কি আর ভালো থাকা যায়, বলেন?
অভ্রঃ তা অবশ্য তুমি ঠিকই বলেছো। তোমার মাস্ক কোথায়?
সীমান্তঃ বাসায়।
অভ্রঃ [একটু হেসে] বাসায় মানে? মাস্ক ছাড়া এইভাবে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছ?
সীমান্তঃ টেনশন নিয়েন না। করোনা ফরোনা আমার কচুও করতে পারবে না!
অভ্রঃ কনফিডেন্স ভালো কিন্তু ওভার কনফিডেন্স ভালো না। যদি করোনায় আক্রান্ত হও তখন?
সীমান্তঃ উফরে অভ্রঃ ভাই, তখনকারটা তখন দেখা যাবে। আচ্ছা ভাই, একটা জিনিস জানার ছিল।
অভ্রঃ কি?
সীমান্তঃ আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেবার খুব শখ, ভাই!
অভ্রঃ তুমি কি ড্রাইভিং জানো?
সীমান্তঃ তেমন একটা না। এই মাঝে মাঝে আব্বুর বাইক চালাই।
অভ্রঃ তুমি কি জানো প্রতি বছর দেশে কতো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারায়?
সীমান্তঃ ওরা হয়তো ঠিকমত গাড়ি চালাতে জানে না, তাই দুর্ঘটনা হয়।
অভ্রঃ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অনেক কারণ আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাইভাররা দায়ী থাকে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পথচারী বা অন্যান্য অনেক বিষয়ের কারণেও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে।
সীমান্তঃ আমিতো বাইক চালাতে পারি। আমারতো কোনও সমস্যা হবার কথা না।
অভ্রঃ দেখো সীমান্ত, এতো অস্থির হয়ো না। প্রথমত তুমি এখনো গাড়ি চালাতে দক্ষ নও; দ্বিতীয়ত ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে লিখিত, তারপর ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়- যার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হয়তো টেনেটুনে পাশ করলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা কোনোমতেই পাশ করতে পারবে না।
[পাশেই চায়ের দোকানে বসে থাকা এক লোক মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছে।]
সীমান্তঃ ব্যবহারিক পরীক্ষা মানে?
অভ্রঃ মানে বিভিন্ন রকমভাবে গাড়ি চালিয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। আচ্ছা দাঁড়াও, তোমাকে ইউটিউবে দেখাচ্ছি। [একটা ভিডিও প্লে করে] এই যে দেখো।
সীমান্তঃ [কিছুক্ষণ ভিডিও দেখার পর] ওরে বাবা! এটাতো অনেক কঠিন ব্যাপার!
অভ্রঃ আমি তাহলে এতক্ষণ কি বোঝাচ্ছিলাম তোমাকে? নিজের চোখেই দেখলেতো! এখন বিশ্বাস হয়েছে?
সীমান্তঃ কিন্তু আমার এক বন্ধুতো এসব পরীক্ষা টরীক্ষা না দিয়েই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে। সে তাহলে কিভাবে পেলো?
অভ্রঃ [একটা কল আসে] আচ্ছা সীমান্ত, এখন তাহলে আসি। এসব বিষয়ে পরে কথা হবে। ঠিক আছে। ভালো থাকো।
সীমান্তঃ ওকে ভাইয়া।
[সীমান্ত হেঁটে চলে যাবার সময় ঐ লোকটি তাকে ডাকে। লোকটির নাম কামাল।]
কামালঃ এই ছেলে, শোনো।
সীমান্তঃ আমাকে ডাকছেন?
কামালঃ হ্যাঁ, তোমাকেই ডাকছি।
সীমান্তঃ কিন্তু আমিতো অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না।
কামালঃ আমি মাত্র সাত দিনের মধ্যেই তোমাকে ওরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স এনে দেবো। কোনওরকম পরীক্ষা লাগবে না। একদম গেরান্টেড!
সীমান্তঃ কোনও পরীক্ষা লাগবে না? সাত দিনের মধ্যেই?
কামালঃ হ্যাঁ। আমি আরও অনেক মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিয়েছি।
সীমান্তঃ টাকা পয়সা কেমন লাগবে?
কামালঃ টাকা তেমন বেশি না। সব মিলিয়ে ৫ হাজার টাকা দিলেই হবে।
সীমান্তঃ ৫ হাজার! এতো টাকা কেন?
কামালঃ ৫ হাজারতো হাতের ময়লা। অন্যরাতো আরও বেশি নেয়।
সীমান্তঃ কিন্তু আমার কাছেতো এতো টাকা নেই। তাছাড়া আমার আব্বুর কাছে এতো টাকা চাইলে আমাকে মেরেই ফেলবে!
কামালঃ দেখো না কোনোভাবে মেনেজ করতে পারো কিনা। তোমার আব্বুর পকেট থেকে অথবা আম্মুর আলমারি থেকে কিছু টাকা কৌশলে সরিয়ে নিলেইতো হয়ে গেলো!
[দূর থেকে অভ্রর বন্ধু শাওন হেঁটে আসছে। হঠাৎ সে সীমান্তকে কামালের সাথে কথা বলতে দেখে বিরক্ত হয় এবং রাগে ফুঁসতে থাকে। সে জানে যে কামাল এসব অবৈধ কাজ করে। এর আগেও সে বেশ কয়েকবার জেলে গিয়েছিল।]
শাওনঃ [দূর থেকেই নিজের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে রেগে গিয়ে] ঐ কামালের বাচ্চা কামাল, দাঁড়া, তোর হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা হাতে ধরাইয়া দিমু, শালা বাটপার কোথাকার!
[কামাল দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যায়। শাওন কামালের কলার ধরে তুলে। তাকে জুতা দিয়ে মারতে যাবে এমন সময় অভ্র তার হাত ধরে ফেলে।]
অভ্রঃ বন্ধু থাম! করছিস কি? [দুজনকে সরিয়ে দেয়]
শাওনঃ কি করছি জানিস না?
অভ্রঃ আমি জানি যে কামাল তোকে অনেক ঠকিয়েছে, তোর অনেক টাকা সে আত্মসাৎ করেছে, কিন্তু তাই বলে কি তুই আইন নিজের হাতে তুলে নিবি?
শাওনঃ ওদের মতন অমানুষের উচিত শিক্ষা হচ্ছে ধোলাই দেয়া! সীমান্ত, তোমার সাথে এই বাটপারটা কি কথা বলছিল বলতো?
সীমান্তঃ বলছিল যে চুরি করে বা যেভাবে হোক ৫ হাজার টাকা এনে দিলে নাকি আমাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স এনে দিবে।
শাওনঃ [অভ্রকে] দেখ অবস্থা! এখনো কি তুই বলবি যে একে না মেরে ছেড়ে দিতে?
অভ্রঃ কামাল, তোমার অপকর্মের কথা এলাকার সবাই জানে। কতবার যে তুমি জেলে গেছো তার হিসেব নেই! তুমি যদি আবারো জেলের ভাত না খেতে চাও তাহলে এই এলাকার ত্রি সীমানায় যেন তোমাকে আর না দেখি। বাঁচলে সত্যিকারের মানুষের মতন বাঁচো। [ধাক্কা দিয়ে] যাও! [কামাল বিরক্ত হয়ে কলার ঠিক করতে করতে চলে যায়]
শাওনঃ সীমান্ত, তোমার বয়স কম। এভাবে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলা ঠিক না।
অভ্রঃ আমিও কতবার যে তাকে বুঝিয়েছি তার হিসেব নেই! আমরা যা বলি তোমার ভালোর জন্যই বলি।
সীমান্তঃ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, সীমান্ত এবং অভ্র ভাইয়া।
অভ্রঃ গুড! তাহলে এখন বাধ্য ছেলের মতন সোজা বাসায় চলে যাও।
[সীমান্ত বাসার উদ্দেশে দৌড় দেয়। শাওন ও অভ্র কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে দেখে।]
অভ্রঃ চল বন্ধু, চা খাই।
শাওনঃ হ্যাঁ, চল।
[সমাপ্ত]