সততা! [অণু গল্প: Bangla Flash Fiction]

রমরমা দুর্নীতির এই যুগে ‘সততা’ যেন অস্পৃশ্য কিছু! এই শব্দটি শুনলে এখন অনেকেরই মনে কেমন যেন একপ্রকার হাসির উদ্রেক হয়। সরকারি এক ব্যাংকের ম্যানেজার জিলানী ইসলাম তার এই সুদীর্ঘ কর্মজীবনে কখনোই অসদুপায় অবলম্বন করেননি। তার এই পাহাড়ের মতন সুউচ্চ ন্যায়পরায়ণতা এবং লৌহের মতন দৃঢ় সততা অনেকেরই চক্ষুশূল হয়েছে এ কথাটি বলাই বাহুল্য।

     

ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেক গ্রাহকের অন্যায় আবদারের কাছে কখনো মাথানত করেননি বলেই তাকে কতোবার যে মৌখিকভাবে তিরস্কৃত হতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! সৎ মানুষের শত্রু অনেক। জিলানী সাহেবেরও শত্রুর অভাব নেই। একদিন এক গ্রাহক ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ৪০ লাখ টাকার ঋণ নেবার চেষ্টা করলেও জিলানী সাহেবের কাছে তিনি ধরা পড়েন। ধরা পড়ার পর তিনি জিলানী সাহেবকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বলেন,


- জিলানী সাহেব, এই ঋণ আমার অত্যন্ত প্রয়োজন। আমি আপনাকে ২ লাখ টাকা দেবো, আপনি দয়া করে ঋণ পাবার বিষয়ে আমাকে একটু সহযোগিতা করুন।


- আপনার আস্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি! আপনি আমাকে ঘুষ দিতে চাচ্ছেন?


- না, না, না, ঘুষ না, ইয়ে, মানে একটু উপহার আরকি!


- শুনুন, আপনার মতন মানুষ আমার এই দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক দেখেছি। কোনটা ঘুষ আর কোনটা উপহার এটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। আপনার এই ভুয়া কাগজপত্রের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে আপনি ১ টাকাও ঋণ পাবেন না। আপনি এখন আসতে পারেন।


- একটু কি বিবেচনা করা যায় না?


- এ ব্যাপারে আর একটি কথাও নয়।


পরে ঐ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ না পাবার প্রতিশোধ হিসেবে নানান স্থানে জিলানী সাহেবের নামে কুৎসা রটনা করেছেন। জিলানী সাহেবের আত্মীয়স্বজনরা সর্বদা তাকে বেশ সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কারণ দিনদিন যে হারে তার শত্রুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা অবশ্যই আশংকাজনক। তিনি অবশ্য সবার এহেন আশংকাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বলেন, “বল বীর- চির উন্নত মম শির! চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির!”

View kingofwords's Full Portfolio