৩০৫০ সাল! চারিদিকে শুধু রোবট আর রোবট! বাচ্চা রোবট, যুবক রোবট- সব রকম রোবটের ছড়াছড়ি! মানুষের প্রতিটি ছোট বড় কাজের জন্য সবার ঘরে ঘরে কয়েকটি করে রোবট বিদ্যমান। ‘কাজের লোক’ বলতে যা বোঝায় তা কেবল ঐ জাদুঘরেই শোভা পাচ্ছে!
মোবাইল ফোন এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন মানুষ আরও বেশি উচ্চখক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ল্যাপটপের স্থান দখল করে নিয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানো স্ক্রিন; মানুষ যখন যা করতে চাচ্ছে তাই চোখের পলকে বাতাসে স্বচ্ছভাবে উপস্থিত হচ্ছে। ধরা যাক, কেউ পার্কে বসে আছে, হঠাৎ তার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে যে একটা মুভি দেখবে, সাথে সাথে তার চোখের সামনে বাতাসেই এক বিশাল পর্দার মতন জিনিস আবির্ভূত হয়; লোকটি যে মুভিটি দেখতে চায়, ঠিক সেই মুভিটিই চলতে শুরু করে! সে তার ইচ্ছেমতন বাতাসে ভেসে থাকা পর্দাটিকে ছোট বা বড় আকারের করতে পারবে। তার জন্য তাকে কোনও বাটনে বা রিমোট কন্ট্রোলে চাপ দিতে হবে না। সে শুধু মনেমনে ইচ্ছে পোষণ করলেই হবে; অনেকটা আলাদীনের চেরাগের মতন! আলাদীন যা চাইলো, চেরাগে থাকা জীন তৎক্ষণাৎ তা এনে তার সামনে হাজির করলো!
এখনো আকাশে বিমান উড়ে, তবে ২০২০ সালের মতন অতোটা নয়। এখন যার যার কাছে নিজস্ব উড়ুক্কু যন্ত্র আছে। আকাশে চোখ গেলেই অনেক উড়ন্ত মানুষ দেখা যায় ঠিক যেন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকা পাখির মতন! একদিন আয়ানের প্রেমিকা গল্পিতার মন বেজায় খারাপ। এমতাবস্থায় আয়ান তাকে প্রশ্ন করে,
- কি ব্যাপার? কি হয়েছে?
- কিছু না।
- কিছু না মানে? দেখেইতো বোঝা যাচ্ছে যে তোমার মন ভালো নেই।
- মন একটু খারাপ বৈকি।
- আমার কাছে তোমার মন ভালো করার ঔষধ আছে!
- ঔষধ? কি ঔষধ?
- চলো, ঐ নীল আকাশে উড়ে আসি। কিছুক্ষণ উড়লেই দেখবে মন একেবারে স্বচ্ছ আকাশের মতন ক্লেশমুক্ত হয়ে গেছে! এসো, আমার উড়ুক্কু যন্ত্রে দুজনে একসাথে উড়বো। অনেক রোম্যান্টিক লাগবে!
- ঠিক আছে, চলো।
আকাশে উড়ুক্কু যন্ত্রের প্রচুর ব্যবহারের ফলে রাস্তায় যানজট এখন আর নেই বললেই চলে। জনসংখ্যা এখন আর আগের মতন লাগামহীনভাবে বাড়ছে না। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মানুষ এখন বেশ সচেতন। আয়ান আর গল্পিতা উড়তে উড়তে মেঘের রাজ্যে হারাচ্ছে। গল্পিতা নিচে রাস্তায় চলাচল করতে থাকা মানুষ ও যানবাহনগুলোর দিকে তাকায়, সেগুলোকে এতো ছোট দেখাচ্ছে যেন “গালিভার্স ট্রাভেলস” এর লিলিপুট!
গল্পিতা মনেমনে ভাবে, “প্রযুক্তি আমাদেরকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে, দূরত্ব কমিয়েছে, কিন্তু বিনিময়ে প্রযুক্তি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই ছিনিয়ে নিয়েছে- আবেগ, অনুভুতি, মায়া, ভালোবাসা, সহানুভূতি ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলীগুলো যেন ধীরে ধীরে চোরাবালির অভ্যন্তরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে ২ হাজার বছর পরে হয়তো মানুষ নিজেই বিবেকহীন ও বোধহীন রোবটে পরিণত হবে! হয়তো!?”