রাজীব অনেকক্ষণ ধরে ইন্টারনেটে একটি ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ খুঁজে বেড়াচ্ছে। শব্দটি হচ্ছে- Synchronicity! অবশেষে শব্দটির অর্থ পেয়েছে- এককালবর্তীকরণ! উইকিপিডিয়ার মতে, “Synchronicity (German: Synchronizität) is a concept, first introduced by analytical psychologist Carl Jung, which holds that events are "meaningful coincidences" if they occur with no causal relationship yet seem to be meaningfully related.” আবার অন্য একটি ওয়েবসাইট অনুসারে Synchronicity মানে হচ্ছে- “You think of someone for the first time in years, and run into them a few hours later.”
এই উপরোক্ত ইংরেজি লাইনগুলোর সারমর্ম হচ্ছে এই যে Synchronicity বলতে বোঝায় যে কেউ কারো সম্পর্কে কিছু ভাবছে আর সাথে সাথে সে সামনে এসে উপস্থিত অথবা সে ফোনে কল করেছে! অনেকে এটাকে Coincidence বা কাকতালীয় ঘটনা বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে রাজীবের মনে হয় যে Synchronicity শব্দটির যথাযথ অর্থ হচ্ছে, এককালবর্তীকরণ!
যাইহোক, রাজীবের জীবনে এই Synchronicity বা এককালবর্তীকরণ এতোবার ঘটেছে বা এখনো ঘটে চলেছে যে সেগুলোর তালিকা করে শেষ করা যাবে না! উদাহরণস্বরূপ, গতকাল রাজীব খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা জানার জন্য রিদান নামক একজনের ফোন নাম্বার খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। রাজীবের ফোনে সেই ছেলেটির নাম্বার ছিল না। হঠাৎ তার মনে পড়লো যে রিদানের একজন ক্লাসমেইটের নাম্বার তার ফোনে আছে। রাজীব তৎক্ষণাৎ ফোন করে বললেন,
- হ্যালো, আজমল বলছেন?
- জি। কে বলছেন প্লিজ?
- আমি রাজীব। বেশ কয়েকদিন আগে আপনার সাথে ভার্সিটিতে কথা হয়েছিল, মনে পড়ছে?
- রাজিব...রাজীব...ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে! কেমন আছেন আপনি?
- এইতো আছি। আপনিও ভালোই আছেন আশা করি।
- জি, ভালো আছি। দয়া করে বলুনতো আমি কি করে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
- আসলে রিদানের নাম্বারটা আমার বড্ড প্রয়োজন। যেহেতু সে আপনার ক্লাসমেইট, তাই আমার মনে হলো যে আপনার কাছে তার নাম্বারটা থাকতে পারে, তাই আপনাকে কল করলাম।
- বুঝতে পেরেছি। তার নাম্বারটা আমার কাছেও নেই। তবে আমি অন্য কারো কাছ থেকে জোগাড় করার চেষ্টা করে দেখছি।
- প্লিজ! নাম্বারটা পেলে আমার খুব উপকার হবে। একটু কষ্ট করে দেখেন যদি পাওয়া যায়! আপনাকে একটু বিরক্ত করছি আরকি!
- আরে না, না, কি যে বলেন না? এখানে বিরক্ত করার কিছুই নেই। আমি নাম্বারটা জোগাড় করতে পারলেই আপনাকে কল দেবো, ঠিক আছে?
- ঠিক আছে। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
- আপনিও ভালো থাকবেন।
ফোনের লাইন কাটার সাথে সাথেই রাজীবের মনে পড়ে যে রিদানতো তার ফেইসবুক ফ্রেন্ড! তৎক্ষণাৎ সে অনলাইনে গিয়ে সার্চবক্সে “রিদান” টাইপ করতে যাবে, ঠিক এমন সময় রিদান নিজেই রাজীবের টাইমলাইনে থাকা একটি পোস্টে ‘লাইক’ দেয়, যার ফলে রিদানের নামটি নোটিফিকেশনে ভেসে উঠে!
রাজীবের চোখেমুখে বিস্ময়ের রেখা, ঠিক যেন থ্রিডি মুভিতে ডাইনোসর দেখে অবাক হওয়া দর্শকের মতন! সে ভাবে, এটা কি করে সম্ভব? যার কথা ভাবছি, যার কাছ থেকে একটি জরুরী তথ্য জানার জন্য এভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, সে নিজেই সামনে এসে হাজির! তখন রাজীবের জীবনে ঘটে যাওয়া এমন আরও অগুনতি ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। তিনি মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করেন, “এটা কি কোনও ব্যাধি, নাকি স্রষ্টাপ্রদত্ত কোনও বিশেষ উপহার? কে জানে?”