আনমনে একা বসে জানালার বাইরে স্বচ্ছ নীলাকাশের দিকে তাকিয়ে নীলা ভাবছে, “আগামিকাল সজলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনাটা সফল হবেতো? নাকি সব পণ্ড হবে?”
সজল ও নীলার ৬ বছরের প্রেম। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়াকালীন সময় থেকেই চুটিয়ে প্রেম করছে দুজন। এটা বলাই বাহুল্য যে নীলার পরিবার, বিশেষ করে তার বাবা নিলয় জামান তাদের এই ভালোবাসার সম্পর্ক কখনো মেনে নেননি এবং ভবিষ্যতেও নেবেন না। মূলত সজলের পিতা আহমেদ শিকদার অনেক বছর আগে নীলার বাবাকে এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল বলেই সেই থেকে সজল ও তার পরিবারের প্রতি নিলয় জামানের এতো তীব্র ঘৃণা।
কিন্তু প্রেম, সেতো অন্ধ! সেতো মানে না কোনও বাঁধা; প্রেম পানির মতো, খুঁজে নেয় পথ সতত! শত বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও সজল ও নীলা দুজন দুজনার হাত কভু ছাড়েনি।
গত বেশ কয়েকদিন ধরে নীলার বিয়ের ব্যাপারে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ছেলেই নীলাকে দেখতে এসেছে কিন্তু দেখার পরে তারা কোনও কারণ ছাড়াই ফোনে জানিয়ে দিয়েছে যে সম্ভব নয়।
এতো এতো পরিবারের কাছ থেকে নেতিবাচক উত্তর পাবার পর আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘের মতন নিলয়ের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। নীলার মতন সুন্দরী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। তার গায়ের রংও সাদা কাগজের মতন শুভ্র, শিক্ষিতা। তাকে অপছন্দ করার মতন কারণই তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যাইহোক, এখন নিলয় বেশ ভালো করেই বুঝতে পারেন যে নিশ্চয়ই নীলা ও সজল কোনও না কোনও কারসাজি করে এসব করছে।
একদিন কথায় কথায় প্রচণ্ড রেগে গিয়ে নিলয় নীলাকে বলেন,
- যখন কোনও ছেলে তোকে দেখতে আসে, তখন তুই তার সাথে ছাদে গিয়ে আলাদা কথা বলার সময় নিশ্চয়ই তোর আর সজলের সম্পর্কের কথা বলিস, তারপর ঐ ছেলের পরিবার ফোনে জানিয়ে দেয় যে এ সম্পর্ক সম্ভব নয়। কি, ঠিক বলিনি? এমনটাইতো করে এসেছিস, তাই না? বল?
- না, বাবা। তুমি ভুল বুঝেছো। এমন কিছুই নয়।
- শোন, আমি দুধ খাওয়া শিশু না। আমি সব বুঝি! ঐ ষণ্ডামার্কা সজলের বুদ্ধিতেই তুই এসব করেছিস, এটা আমার বোঝার বাকি নেই আর! তোদের দুজনের নাটক ও অভিনয় অনেক দেখেছি আমি। এবার তোরা আমার নাটক দেখ! আগামি মাসে ইংল্যান্ড থেকে সস্ত্রীক আমার বন্ধু ও তার একমাত্র ছেলে দেশে আসবে। ছেলে উচ্চশিক্ষিত, সেখানে ইঞ্জিনিয়ার। আমি তার সাথেই তোর বিয়ে দেবো!
- প্লিজ বাবা! তুমি আমার সাথে এমন অবিচার করো না! আমি সজলকে ছাড়া বাঁচবো না বাবা!
- চুপ, বেয়াদব কোথাকার! লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে আছে! সজলকে ছাড়া বাঁচবে না!
- প্লিজ বাবা, তোমার দুটো পায়ে পড়ি! আল্লাহ্র দোহাই লাগে!
- আমার কথার আর একটুও নড়চড় হবে না। আমি যেটা বলেছি সেটাই শেষ কথা!
তাইতো আর কোনও উপায় না দেখে সজল ও নীলা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই! আগামিকাল ভোরের ট্রেনে দুজনে রাজশাহীতে সজলের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবে।
সকাল ১১টার দিকে নীলার মা জোবায়দা ইসলাম নীলার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে মেয়ের কক্ষের দিকে এগিয়ে যেতেই লক্ষ্য করেন যে নীলার কক্ষের দরজা খোলা। তিনি “নীলা, এই নীলা” বলে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকেন কিন্তু মেয়েকে কোথাও পাওয়া যায় না। পরে নীলার ফোনে কল দিলে সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। অত্যন্ত শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে জোবায়দা তার স্বামীর কাছে গিয়ে বলেন,
- ওগো শুনছো! আমাদের নীলাকেতো কোথাও দেখছি না!
- কোথাও দেখছি না মানে?
- হ্যাঁ, সে বাসার কোথাও নেই!
- বারান্দায় দেখেছো?
- হ্যাঁ, দেখেছি, সেখানেও নেই!
- হয়তো বাইরে কোথাও গেছে, চলে আসবে।
- সে আমাকে না বলে কখনো বাইরে যায় না। তাছাড়া তার ফোনও বন্ধ। আমার কিন্তু বিষয়টা ঠিক ভালো ঠেকছে না!
- চলোতো তার রুমে গিয়ে দেখি আরেকবার।
- চলো।
নিলয় নীলার কক্ষে গিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর পর নীলার টেবিলের উপর দৃষ্টি পড়ে। সেখানে একটি কাগজ ভাঁজ করে রাখা। কাগজটি হাতে নিয়ে নিলয় পড়া শুরু করেন,
“বাবা-মা, পারলে তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি সজলের সাথে চলে যাচ্ছি। আমরা বিয়ে করবো। পারলে আমাদের জন্য দোয়া করো। আমি জানি তোমরা সবাই আমার বা আমাদের এমন সিদ্ধান্তে বেশ কষ্ট পেয়েছো, কিন্তু এ ছাড়া যে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। তোমরা অনেক অনেক ভালো থেকো।”
তোমাদের অবাধ্য মেয়ে
নীলা