[অরণ্যপূর গ্রামের অনেক গ্রামবাসীগণ মঞ্চে প্রবেশ করেন। তারা শতবর্ষী বটগাছের নীচে বসে অধীর আগ্রহে বক্তার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। বক্তা মঞ্চে প্রবেশ করেছেন। ইতোমধ্যে আরও অনেক মানুষ এসে বটের ছায়ায় বসে লোকটির বক্তব্য শোনার জন্য এগিয়ে আসছেন। এতোটা ভিড় দেখে গ্রামের ১২ বছরের দুই বন্ধু নয়ন এবং দয়া কিছুক্ষণের জন্য বটগাছের নিকটে এসে দাঁড়ায়।]
বক্তাঃ ভাইসব, গাছের কোনও বিকল্প নেই! গাছের মতন এতো ভালো এবং বিশ্বস্ত বন্ধু আর হতে পারে না। গাছ আছে বলেই আমরা মানুষরা এখনও নিঃশ্বাস নিতে পারছি। একটু কল্পনা করে দেখুনতো- গাছ না থাকলে আমরা কোথা থেকে অক্সিজেন পেতাম? বলেন আপনারা?
[বসে থাকা গ্রামবাসীরা একসাথে বলেন- “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা আপনার সাথে একমত!”]
নয়নঃ লোকটা কে রে? আগেতো কোনোদিন দেখিনি!
দয়াঃ কে জানে, আমি চিনবো কি করে? আমিওতো তাকে আগে কখনো দেখিনি!
নয়নঃ আচ্ছা, ছেলেধরা টেলেধরা নয়তো?
দয়াঃ না, চেহারা, পোশাক দেখে আর কথাবার্তা শুনেতো ছেলেধরা বলে মনে হচ্ছে না।
নয়নঃ লোকটা গাছের উপকার নিয়ে কি যেন বলেই যাচ্ছে!
দয়াঃ হুম! তার কথা শুনে ভালো লোক বলেই মনে হচ্ছে আমার।
নয়নঃ আজকাল মানুষ চেনা খুব কঠিন বন্ধু! সুন্দর ব্যবহারের আড়ালে অনেকেরই ভয়ানক চেহারা লুকিয়ে থাকে, তাই না?
দয়াঃ তোর কথার সাথে আমি শতভাগ একমত। আসলেই মানুষকে আজকাল সহজে বিশ্বাস করা যায় না।
নয়নঃ লোকটির কথা কি আরেকটু শুনবি, নাকি মাঠের দিকে যাবি?
দয়াঃ না, আর শুনে কাজ নেই! চল মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলি।
নয়নঃ ঠিক আছে, চল।
[মাঠের দিকে হেঁটে যাবার সময় নয়ন রাস্তার পাশে থাকা একটি গাঁদা ফুলের গাছ উপড়ে হাতে নিয়ে আবার দূরে ছুঁড়ে মারে। এই কাজটা করতে দেখে দয়া বেশ বিরক্ত হয়ে বলে।]
দয়াঃ আচ্ছা, নয়ন! এই নয়ন!
নয়নঃ [হাঁটতে হাঁটতে দয়ার দিকে না তাকিয়ে বলে] কি?
দয়াঃ দাঁড়া!
নয়নঃ [দাঁড়িয়ে দয়ার দিকে তাকিয়ে বলে] বল।
দয়াঃ তুই যে এইমাত্র এই কাজটা করলি, এটা কি ঠিক করলি?
নয়নঃ কোন কাজটা বন্ধু?
দয়াঃ এই যে তুই খামাখা ঐ সুন্দর গাঁদা ফুলের গাছটাকে মেরে ফেললি! এটা কি তোর উচিত হয়েছে বল?
নয়নঃ [মশকরার ছলে হেসে দয়ার পিঠ চাপড়ে বলে] ওরে আমার বৃক্ষপ্রেমিক রে! তুইতো দেখছি ঐ বটগাছের নীচে বক্তব্য দেয়া লোকটার মতন কথা বলছিস!
দয়াঃ ঐ লোকটা কি খারাপ কিছু বলছেন নাকি? যা সত্যি তাইতো বলছেন! গাছ ছাড়া কি আসলেই মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর কোনও অস্তিত্ব থাকতো!
নয়নঃ [মশকরা করে বলে] ওরে বাবা রে! আমাদের দয়া দেখছি অনেক বড় পণ্ডিত হয়ে গেছে!
[দয়া বিরক্ত মুখে ছুঁড়ে ফেলা গাঁদা গাছটার দিকে হেঁটে যেতে থাকে। সেটা দেখে নয়ন বেশ অবাক হয়ে বলে।]
নয়নঃ [দয়াকে পেছন থেকে ডাকতে থাকে] আরে! দয়া! এই দয়া! কোথায় যাচ্ছিস? দাঁড়া! আরে শোন না আমার কথা!
দয়াঃ তোর কোনও কথাই শোনার আগ্রহ নেই আমার!
নয়নঃ তাহলে আমি কিন্তু তোকে একা ফেলেই মাঠে চলে যাবো, বলে দিচ্ছি!
দয়াঃ যা, তোর যা ইচ্ছে তাই কর!
নয়নঃ কি মুশকিল রে বাবা! তুই কি আমার সাথে রাগ করলি নাকি?
[দয়া সেই ছুঁড়ে ফেলা গাঁদা ফুলের গাছটি হাতে নেবার সাথে সাথেই নয়ন অবাক হয়ে বলে।]
নয়নঃ আরে! তুই ঐ ফেলে দেয়া গাঁদা ফুলের গাছটা নিয়ে কি করবি?
দয়াঃ [রাস্তার পাশে যেখানে গাঁদা ফুলের গাছটা ছিল সেদিকে ফিরতে ফিরতে বলে] কাজ আছে!
নয়নঃ কি কাজ সেটা কি বলা যায় না?
দয়াঃ কি কাজ সেটা এখনি নিজ চোখে দেখতে পারবি!
[দয়া উপড়ে ফেলা গাঁদা গাছটাকে যথাস্থানে লাগিয়ে দেবার চেষ্টা করতে থাকে। সেটা দেখে নয়ন চেঁচিয়ে বলে।]
নয়নঃ আরে, আরে, আরে! করছিস কি?
দয়াঃ দেখতে পাচ্ছিস না আমি কি করছি!
নয়নঃ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি?
দয়াঃ পাগল আমি না, তুই পাগল হয়ে গেছিস! কথা নেই বার্তা নেই হাঁটতে হাঁটতে চোখে গাঁদা ফুলের গাছ পড়লো, আর অমনি তুই সেটাকে উপড়ে দূরে ছুঁড়ে মারলি! আসলে তোর মধ্যে মানবতা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এসবের বিন্দুমাত্র নেই! যদি থাকতো, তাহলে তুই কখনই এমন নিষ্ঠুর কাজ কখনোই করতি না!
নয়নঃ [নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে বলে] আসলে তুই ঠিকই বলেছিস রে! আমি কাজটা মোটেও ঠিক করিনি! সত্যি আমি অনুতপ্ত রে বন্ধু! তুই আমাকে ক্ষমা করে বন্ধু!
দয়াঃ [গাছটাকে মাটিতে পুঁততে পুঁততে বলে] আচ্ছা, ঠিক আছে, এখন এসব কথা থাক।
নয়নঃ [গাছের গোঁড়ায় মাটি দিতে দিতে বলে] সত্যি বন্ধু, আজ তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছিস!
দয়াঃ যা, কাছে কোথাও থেকে একটু পানি নিয়ে আয়তো!
নয়নঃ ঠিক আছে, যাচ্ছি।
[দুয়েক মিনিট পর নয়ন খেয়ে ফেলে দেওয়া ডাবের অর্ধেক অংশের মধ্যে পানি নিয়ে ফিরে আসে।]
নয়নঃ এই নে, পানি এনেছি।
দয়াঃ [পানিটা নিয়ে গাছের গোঁড়ায় দিতে দিতে বলে] আশা করি গাছটা আবার আগের মতই বেঁচে উঠবে! আবার আগের মতই চারপাশ সুরভীতে ভরে দেবে! আবার সে তার সৌন্দর্য ছড়াবে!
নয়নঃ হ্যাঁ, যেন তাই হয় বন্ধু!
দয়াঃ এমনটাই হবে দেখিস! [নয়নের কাঁধে হাত রেখে বলে] চল তাহলে মাঠে যাই।
নয়নঃ হ্যাঁ, চল!
[দুই বন্ধু দ্রুত পায়ে মাঠের দিকে হেঁটে যেতে থাকে।]
[হাঁটতে হাঁটতে নয়ন ও দয়া মঞ্চ ত্যাগ করে।]
[সমাপ্ত]