মনুষ্যত্ব! [বাংলা চিত্রনাট্য; Bangla Screenplay/Film Writing]

দৃশ্য ১ 

 

[পার্কের বেঞ্চিতে প্রেমিক প্রেমিকা দুজন বিষণ্ণ হয়ে দুইদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে।]

 

অত্রিঃ [সজলের দিকে ফিরে বিরক্ত হয়ে বলে] সজল! এই সজল!


সজলঃ কি?


অত্রিঃ আমার দিকে তাকাও!


সজলঃ কি বলবে বলো, শুনছি।


অত্রিঃ তুমি আমার দিকে তাকাতে হবে। না, তাকালে বলবো না!


সজলঃ বললে বলো, না বললে নাই! আমি ওতো টাকাতে মাকাতে পারবো না!


অত্রিঃ ঠিক আছে, তাহলে তুমি থাকো, আমি চললাম!

 

[অত্রি চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াতেই সজল তার হাত ধরে টেনে আবার তাকে বেঞ্চিতে বসিয়ে দিয়ে অত্রির সামনেই হাঁটু গেড়ে বসে। অত্রির হাত সজলের হাতে।]

 

সজলঃ [মুচকি হেসে] তুমি সেই ছেলেমানুষই রয়ে গেলে অত্রি! এখনও বড় হলে না! আচ্ছা, কি বলবে বলো?


অত্রিঃ তুমিতো ভালো করেই জানো আমি কি বলতে চাই, তাই না?


সজলঃ হ্যাঁ, জানি। তোমার আমার বিয়ের ব্যাপারে তাইতো?


অত্রিঃ [রেগে সজলের হাত থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে] ঠিক তাই!


সজলঃ [উঠে বেঞ্চিতে অত্রির পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে] দেখো, অত্রি, তুমিতো খুব ভালো করেই জানো যে আমার পরিবারের কেউই আমাদের বিয়েটা মেনে নেবে না। মা-বাবা, ভাই, বোন কেউ না!


অত্রিঃ [রেগে গিয়ে] তাহলে এতোদিন তুমি আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করলে কেন? বলো, জবাব দাও!


সজলঃ তুমি আমার ভালোবাসাকে নাটক বলছো? তার মানে আমি এখন তোমার কাছে একজন অভিনেতা ছাড়া আর কিছুই নই?


অত্রিঃ হ্যাঁ, তুমি একজন অভিনেতাই! আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে এখন তুমি নানান অজুহাত দেখাচ্ছ! বাহ!


সজলঃ প্লিজ অত্রি! আল্লাহর দোহাই লাগে! আমাকে ভুল বোঝো না! তোমাকে ঠকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে থাকলে আমিতো তোমার সাথে সম্পর্কে জড়াতাম না।


অত্রিঃ যদি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়? তোমার ফ্যামিলি বিয়েটা মানবে না তাইতো?


সজলঃ হ্যাঁ, তাই।


অত্রিঃ কিন্তু আমরা বিয়েটা করার পর প্রথমে তোমার মা-বাবা নিশ্চয়ই ভীষণ রাগ করবেন কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকই আমাদেরকে মেনে নেবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।


সজলঃ হয়তো তা হতে পারে! হয়তো বা নয়!


অত্রিঃ আগে থেকে এতো নিগেটিভ চিন্তা না করলেই কি হয় না? যদি তোমার পরিবারে আমার স্থান না হয়, তাহলে কি আমরা অন্য কোথাও নিজেদের সংসার করতে পারবো না, বলো?


সজলঃ তা পারবো অত্রি। কিন্তু আমি ভাবছি যে আমার পরিবারের সবার মনে কষ্ট দিয়ে কি আমরা সত্যিই সুখী হতে পারবো?


অত্রিঃ এতো ভেবো নাতো। সময় সবকিছুকেই ধীরে ধীরে ঠিক করে দেয়। এখন ওঠো, চলো আমার সাথে।  


সজলঃ কোথায়?


অত্রিঃ আহ, চলোই না!

 

[অত্রি সজলের হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে যায়।]

 

দৃশ্য ২

 

[সজলের বাবার বাড়ি। ড্রয়িং রুম। তার বাবা সোহরাব হাসান সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। সজল ও অত্রি একসাথে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে। অত্রির গায়ে শাড়ি পরা, মাথায় ঘোমটা দেয়া। সজল বাবার কাছে গিয়ে তার পায়ে ধরে সালাম করে। তার সাথে সাথে অত্রিও সালাম করে। হঠাৎ সজলের সাথে এভাবে একজন ঘোমটা পরা মেয়েকে দেখে সোহরাব অবাক হয়ে দাঁড়ান।]

 

সজলঃ [অত্রিকে দেখিয়ে বলে] বাবা, তোমার বউমা! অত্রি। আমরা বিয়ে করেছি বাবা! আমাদের আশীর্বাদ করো বাবা!  


সোহরাবঃ [প্রচণ্ড রেগে বলেন] আশীর্বাদ? এক্ষুনি আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা! নাহলে কিন্তু আমি তোদের দুজনকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো!


সজলঃ বাবা, তোমার মনে দয়া, মায়া, মানবতা বলতে কিচ্ছু নেই?

 

সোহরাবঃ চুপ বেয়াদব! এখন তোর কাছ থেকে কি আমাকে মানবতার শিক্ষা নিতে হবে নাকি? 

 

[সোহরাবের চিৎকার শুনে তার স্ত্রী আমিনা রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন।]

 

আমিনাঃ [সোহরাবের কাছে এসে বলেন] কি গো! এতো জোরে চিৎকার দিচ্ছ কেন? কি হয়েছে?


সোহরাবঃ হওয়ার কি আর কিছু বাকি আছে? দেখো, তোমার ছেলে একটা পতিতাকে বিয়ে করে ঘরে এনেছে। সে আমাকে বলে কিনা বউ এনেছে! হেহ! বউ! বউ না, আসলে সে আমাদের ঘরে পাপ এনেছে, পাপ!


আমিনাঃ [হাউমাউ করে কেঁদে সজলের কাছে গিয়ে বলেন] এটা তুই কি করলি সজল? কি করলি? তোকে আমরা এতো করে বুঝানোর পরও তুই এই কাজটা করতে পারলি? তুই কি একবারও আমাদের মান সম্মানের কথা ভাবলি না, বাবা? সমাজে আমরা মুখ দেখাবো কি করে বল?

 

[আমিনা কাঁদতে কাঁদতে সোফায় বসে আঁচলে মুখ ঢেকে নেন।]

 

সজলঃ বাবা, মা, আমি জানতাম যে তোমরা কেউই আমাদের বিয়েটা মেনে নেবে না। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হয়েছিল যে বিয়ের বিষয়টা তোমাদেরকে জানানো প্রয়োজন, তাই তোমাদের কাছে আসা।


সোহরাবঃ [আমিনার দিকে তাকিয়ে রেগে বলেন] আমিনা, এই কুলাঙ্গারটাকে এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হতে বলো! নাহলে আমি যে কি থেকে কি করে বসবো তার ঠিক নেই!


সজলঃ তুমি এতো উত্তেজিত হয়ো না বাবা। আমি চলে যাচ্ছি। তবে যাবার আগে একটি কথা না বলে পারছি না। অত্রি বেশ ভালো পরিবারের মেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে ৬ মাস আগে তার কুচক্রী মামা তাকে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে তাকে পতিতালয়ের এক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতেতো অত্রির কোনও দোষ নেই, তাই না? সেতো কোনও অন্যায় করেনি, বরং সে অন্যায়ের শিকার হয়েছে! অত্রির আসল পরিচয়, তার সাথে সম্পর্কে জড়ানো থেকে শুরু করে তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে পর্যন্ত সবকিছুই আমি তোমাদেরকে জানিয়েছি। আমিতো চাইলে মিথ্যা বলে, তোমাদের কাছে অত্রির পরিচয় লুকিয়ে বিয়ে করতে পারতাম, তাই না? কিন্তু আমি সেটা করিনি। [কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে] যাইহোক, আমার আর কিছুই বলার নেই! তোমরা ভালো থেকো। আর যদি পারো, আমাদের জন্য দোয়া করো।

 

[সজল ও অত্রি সোহরাবের পায়ে ধরে সালাম করতে গেলে তিনি সরে দাঁড়ান। তারপর তারা সোফায় বসে থাকা আমিনার পায়ে সালাম করে। ঘর থেকে বের হবার আগে সজল একটু থমকে দাঁড়ায়। তার চোখে জল। ঠিক তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে রবিঠাকুরের যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে গানটি বেজে উঠে।* সজল শেষবারের মতন ড্রইং রুমের চারপাশটা ভালো করে দেখে নেয়। তারপর অশ্রু মুছতে মুছতে অত্রিকে নিয়ে বের হয়ে যায়।]

 

দৃশ্য ৩

  

[ব্যাকগ্রাউন্ডে দ্যা চেইনস্মোকার্সের ডোন্ট লেট মি ডাউন গান বেজে উঠে।* বাসার নীচে। গেইটের বাইরে। সজল অত্রির দিকে তাকায়। অত্রি সজলের দিকে তাকায়। তারা দুজনেই মুচকি হাসে। সজল তার বাম হাতটা অত্রির দিকে বাড়িয়ে দেয়। অত্রি সজলের হাত ধরে।]

 

সজলঃ চলো!


অত্রিঃ হ্যাঁ, চলো!

 

[সজল ও অত্রি দুজনেই হাত ধরাধরি করে সামনে এগিয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে দ্যা চেইনস্মোকার্সের ডোন্ট লেট মি ডাউন গান বাজতে থাকে।]

 

 

* যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে:  https://tinyurl.com/yc655zvm

 

* The Chainsmokers – ‘Don't Let Me Down’ (Illenium Remix): https://tinyurl.com/jqatgm3

 

 

[সমাপ্ত]

View kingofwords's Full Portfolio