কথন-১ (ফড়িং শৈশব আর শৃঙ্খল ভালবাসা)

প্রতিটি লেখাই যখন আমাদের আশপাশের প্রতিটি মানুষেরর মতই স্বতন্ত্র, তাই আমি কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করতে চাই আমার এই লেখায়। আমি বিশ্বাস করি আমার এই লেখার মধ্যে আছে আমার মনের মুক্তি। সেই মুক্তি প্রয়াসে লেখনিতে ফিরে ফিরে আসি। যেখানেই থাকি না কেন, মন পড়ে থাকে লেখার মধ্যে। মাঝে মাঝে তো এমন হয় যে, একা একা রাস্তা দিয়ে পথ চলতে গেলেও কত কথা মনে আসে, ভাবি সেগুলো বাসায় গিয়ে লিখে ফেলবো। এরপর বাসায় আসার পরে হয়ত বেমালুম সব ভুলে যাই। কিছুই আর মনে থাকে না। পরে যখন মনে পড়ে তখন আর আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। পরে পস্তায়ে কি লাভ? তাই ভাবলাম লিখে রাখি কিছু কিছু কথা। লেখার মধ্যেই মিশিয়ে দিলাম না হয় নিজেকে। আমি জানি কারও কারও হয়ত ভাল লাগবে না আমার এই লেখা। আবার কেউ কেউ হয়ত পছন্দ করবে। আমার ভালবাসা আর শুভেচ্ছা সকলের জন্যই রইলো।

 

লেখার শিরোনামে রয়েছে ‘ফড়িং শৈশব’ কথাটা। শৈশবের এক টুকরো স্মৃতি বা ভাঙ্গা কাঁচের মত একটা টুকরো দিয়েই না হয় শুরু করি আমার এই লেখা। সেই নব্বই এর দশকের শুরুর দিকের কথা। শ্যামলী আদাবরে থাকতাম। তখন আদাবর এলাকা এত জনবহুল হয়ে ওঠেনি। এখন যেখানে মনসুরাবাদ আবাসিক এলাকা বলে চিহ্নিত হয়েছে, সে যায়গায় তখন ডোবার মতই বেশী ছিল। মানুষের কেনা প্লটও ছিল কত। কেউ কেউ তাদের কেনা প্লটগুলো ছোট ছোট ইটের গাঁথুনির দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলো। কদাচিৎ আমরা বড়দের সাথে সেখানে ঘুরতে বা কিছুটা সময় কাটানোর জন্য যেতামতাও সেই যাওয়াটা যে আমাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে করা হত এমনটা নয়। আমাদের শৈশবে, আমাদের ইচ্ছার কথা প্রাধান্য দেয়ার কথা আমাদের অভিভাবক শ্রেণী খুব একটা মাথায় আনতে পারতেন না। বড়দের যদি ইচ্ছা হতো যে, অমুক দিন বিকালে উনারা এওটু “রিক্রিয়েশন” বা প্রমোদের জন্য বা হয়ত একটু রুচি বদলের জন্য ঘুরতে যাবেন, তখন আমাদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া হত। আমরাও বাইরে বের হবার খুশিতে লাফাতে থাকতাম। গায়ে কি জামা পরবো, সেটা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হতো না। কতক্ষণে ঘর থেকে বের হব সেই চিন্তায় বিভোর থাকতাম। ডানা থাকলে হয়তো ফড়িঙের মতই উড়তে থাকতাম খুশিতে। নাওয়া খাওয়া সব শিকেয় উঠতো। ঘড়ি দেখতে পারি আর না পারি, “কখন বের হবা?” এই প্রশ্ন করে করে বাসার সবাইকে জেরবার করে দিতাম। একটু বাইরে বের হতে পারা মানেই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। নিজেকে একটু মুক্তির আস্বাদন দেয়া। অবশ্য তখন মনের মুক্তি কি তা বোঝার বয়স ছিল কই?

 

তখন সেই বয়সের দোষ দিয়েই বা লাভ কি? এখন জীবনের প্রায় অর্ধেকের শেষ করে এসে (গড় আয়ু ৭০ কল্পনা করে), এখনও কি বুঝতে পেরেছি মনের মুক্তি আসলে কি জিনিস? কখনও হয়তো বোঝার মত কিছু প্রহসন করি। আমার পরক্ষণেই নিজের চিন্তা এবং কিছুর প্রশ্নের অন্তরালে আটকা পড়ে যাই। উত্তর আর পাই না। মুক্তি চাওয়া যায়, কিন্তু পাওয়া যায় কিনা সেটা ভেবে দেখার দরকার আছে। আমরা কেউই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন চাই না কিন্তু তথাপি আমাদের উপরে নানা ধরণের দায়িত্বের শৃঙ্খল এসেই পড়ে। বস্তুত আমরা সামাজিক জীব বলেই আমাদের উপরে এগুলো ন্যস্ত হয়। অনেক সময় আমরা দায়িত্ব নিতে নিতে ভুলেই যাই, কিছুটা মুক্তির হয়তো দরকার আমারও ছিল। একসময় আমাদের হাঁসফাঁস লাগতে থাকে দায়িত্বের ভারে। আমরা ভুলেই যাই, আমি নিজেও একটা সত্ত্বা ছিলাম। শুধু অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই আমার কাজ ছিল না। আমার নিজের জন্য হলেও কিছুটা নিজের সময় বের করা উচিত ছিল। চাহিদা শুধু দেহেরই থাকে না। কিছু চাহিদা তো আত্মারও থাকে। আমরা ভুলেই যাই, কিসে আমাদের মনের খোরাক ছিল। আর তখনই আমরা আমাদের কে হারিয়ে ফেলি।

 

যা বলছিলাম। বিলের ধারে বা ডোবাগুলোর ধারে মনের সুখে ঘুরতে যেতাম। হয়ত ঘন্টা এক কি দেড় ঘন্টার জন্য। ঐটুকুই ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। অকারণে এদিক ওদিক ছুটে ছুটে যেতাম। বরফ পানি বা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতাম। বড়রা হয়তো তখন কারো প্লটে বসে বাদাম কিনে খাচ্ছে আর গল্প করছে। আমরাও ছুটাছুটি করতে করতে তাদের সামনে হাত পেতে দিচ্ছি দুই একটা বাদামের আসায়। উনারাও খোসাগুলো ভেঙ্গে তা থেকে দুই একটা বাদাম দিয়ে দিচ্ছেন আমাদের হাতে। ক’টা বাদামের দানা হাতে এলো সেটা দেখার সময় নেই। মুখে পুরে দিয়েই আমার ছুট! পাছে যদি আবার খেলার সময় কমে যায়।

 

ঝোপঝাড় তো কতই থাকতো। ডোবার আশপাশের কিনারা জুড়ে থাকতো কত লজ্জাবতী গাছ। ওগুলোর প্রতি থাকতো আমার অনেক আকর্ষণ। যত লজ্জাবতী গাছ দেখতাম, হাত দিয়ে, পা দিয়ে, যেভাবেই হোক একটু ছুঁয়ে দিতাম। দেখতাম পাতাগুলোর নুইয়ে পড়া। এখনও হাটার পথে লজ্জাবতী গাছ দেখলে সেটাই করি। শৈশবের অভ্যাসটা রয়ে গেছে। বিকাল বেলায় আরও যে আকর্ষণীয় জিনিসটা আমাকে টানতো তা হল, নানা রঙের ফড়িঙের উড়াউড়ি! কালো, কমলা, ডোরাকাটা, লাল, সবুজ কত রকমের ফড়িঙ যে উড়ে বেড়াতো! আমাদের জন্য ওরা শান্তি পেত কই? তক্কে তক্কে থাকতাম যেই ওরা পাতার উপরে বসবে অমনি গিয়ে ধরবো ওদের ডানা। এটা ছিল আমাদের জন্য একটা খেলা। ধরে দেখতাম। আবার হয়ত কিছুক্ষণ পরে উড়িয়ে দিতাম। সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ থাকতো লাল ফড়িঙের উপরে। আমার তখনকার বিচার বুদ্ধি মতে, লাল ফড়িঙ হচ্ছে সবচেয়ে চালাক ফড়িঙ আর ওদের ধরা সবচেয়ে কঠিন। এজন্য লাল রঙের ফড়িঙের প্রতি বেশী আকর্ষণ কাজ করতো। একটা লাল ফড়িঙ ধরতে পারা ছিল তখন আমাদের কাছে এক রাজ্য জয়ের আনন্দ। আর আমাদের এই আনন্দের আতিশয্যে কত ফড়িঙের প্রাণ শেষ করে দিয়েছে তা আজ মনেও নেই। আমাদের হেলা ফেলায় আমরা বুঝিনি। মনটা ফড়িঙের মত চঞ্চল হলেও, আমাদের চাঞ্চল্য যে ওদের জন্য জীবননাশী নিষ্ঠুরতা হয়ে যাচ্ছে সেটা বোঝার মত বয়স ছিল কোথায়?

 

সন্ধ্যায় যখন সূর্য ডুবে যেত, আকাশে লাল রং থাকতে থাকতেই শুরু হয়ে যেত বাড়িতে ফেরার তোড়জোড়। শেষ বেলায় ধরা দুই একটা ফড়িঙ হয়ত হাতে করে নিয়ে আসতাম বাসার দিকে। ওদের চারটা ডানাই আমাদের দুই আঙ্গুলের মধ্যে ধরা থাকতো। অসহায় হয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া ওরা কিইবা করতে পারতো ফড়িঙগুলো? বাসায় এসে যে কাজটা করতাম সেটা হয়তো সর্বোচ্চ নিষ্ঠুরতাই বলা যায়। ওদের লেজে সুতা বেঁধে দিয় সুতার এক প্রান্ত ধরে রাখতাম। অসহায় পতঙ্গগুলো হয়ত জীবনের শেষ শক্তিটুকু সঞ্চয় করে অন্তিম বাসনায় উড়ে যাবার চেষ্টা করতো। হয়তো পারতোও কিছুটা। কিন্তু কতক্ষণ? সুতার ফাঁস যে ওদের শরীরে আষ্টেপৃষ্টে বসে গেছে। সেই সুতার গিট না ওরা ছুটাতে পারবে আর না ওরা সেখান থেকে বেঁচে বেরিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ উড়ে আমাদের শেষ বেলার কিছুটা আনন্দ দিয়ে ওরা ওদের জীবন নিঃশেষ করে দিয়ে মরে যেত। চোখের সামনেই উচ্ছ্বল এক একটা ফড়িঙের মৃত্যু হত। তাতে কি আমাদের মনে একটুও দাগ কাটতো? মরা ফড়িংটা ধরে বারান্দা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতাম। কোথা থেকে কোথায় মিশে যেত সেই মরা ফড়িঙ!

 

শৈশব থেকে বড় হলাম একটু একটু করে। আমাদের ফড়িঙ শৈশব ও শেষ হয়ে গেল কবে কখন, টেরও পেলাম না। ক্রমশ বড় থেকে বড় হতে হতে একসময় গুটি ছিদ্র করে বেরিয়ে আসা প্রজাপতির মত আমরাও লেখাপড়ার বলয় ছিদ্র করে বেরিয়ে এলাম কাজের জগতে। কাজের জগত না বলে এটাকে অস্তিত্ত্ব রক্ষার জগত বলাই মনে হয় ভাল হবে। আমরা মনে করতাম, লেখাপড়ার শৃঙ্খল সবচেয়ে কষ্টের শৃঙ্খল। এই লেখাপড়া শেষ হয়ে গেলেই মিলবে কাঙ্খিত মুক্তি। এইতো আর কয়টা দিন! তখন দিন গুনতাম, কবে শেষ হবে এই লেখাপড়ার যন্ত্রণা। হ্যাঁ তখন তো লেখাপড়াকে যন্ত্রণাই মনে হতো। এখন আর মনে হয় না। এখন মনে হয় সেই লেখাপড়া করার দিনগুলোই ভাল ছিল। নিজের স্ববিরোধী কথায় আমি নিজেই আটকা পড়ে যাই। শৈশবের ধ্যান ধারনার সাথে বর্তমান বাস্তবতার দ্বন্দ্ব স্বতঃসিদ্ধ। তখন সেই লেখাপড়ার দিনগুলোতে আমাদের শুধু পরীক্ষার ফলাফল আর নাম্বার নিয়ে জবাবদিহিতা করতে হতো।

 

আর এখন? কত কত যে জবাবদিহিতার শৃঙ্খল পায়ে লেগে গেছে! কোনটা থেকেই মুক্তি নেই। একটার পর একটা চলেই আসছে। একটা পূরণ করতে না করতেই শুর হয়ে যায় নতুন দায়িত্বের মাত্রা। সামাজিক জীব হিসেবেও অনেক কিছুই করতে হয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সমাজ থেকে তো আমরা হাত ধুয়ে উঠে যেতে পারি না সামাজিক জীব হিসেবে! এগুলো সবই খুব সহজ সূত্র। আরও সহজ সূত্র হচ্ছে মানুষের উপরে একের পর এক দায়িত্ব আরোপ করে দিতে থাকা। এতে তার নাভিশ্বাস উঠে গেলেও কিছুই করার নাই। আমাদের সমাজ দায়িত্ব তো দিতে থাকে, দায়িত্বের জন্য জবাবদিহিতাও করে। কিন্তু বিনিময়ে মুক্তি? সেই বেলায় মনে হয় সমাজ নৈঃশব্দ্যের পুন্যবান অঙ্গীকার নিয়ে বসে থাকে।

 

আরেক রকমের শৃঙ্খল কিন্তু আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেটা হতে পারে কখনও মায়ার আর কখনও হতে পারে হয়ত এক পাক্ষিক এবং কষ্টের। সেটা হল ভালবাসার শৃঙ্খল। ভালবাসা আমাদের মধ্যে নানা রকমের মায়ার বন্ধন তৈরী করে। ভালবাসা থেকে আমাদের আশেপাশের সম্পর্কগুলো তৈরী হয়। সেই ভালবাসার ছেদ পড়লে সম্পর্কগুলো নষ্ট হতে থাকে এক এক করে। যেখানে ভালবাসা থাকে না, সেখানে সম্পর্কও থাকতে পারে না। ভালবাসাহীন সম্পর্কগুলো “ফর্মাল রিলেশন” বা “অফিসিয়াল রিলেশন” ছাড়া আর কিছুই না। সেখানে হয়ত দায়িত্ববোধ মিশ্রিত কিছু ভয় কাজ করে। অথবা সেখানে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে চলতে বাধ্য থাকে সবাই। কিন্তু আমি যে ভালবাসার কথা বলছি তা আমাদের আটপৌরে জীবনের সাথে জড়িত সহজ সরল ভালবাসাগুলো। এই ভালবাসা আমাদের মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে রাখে।

 

ভালবাসার অনেক মাত্রা থাকে। একেক রকম ভালবাসার গভীরতাও এক এক রকম হয়ে থাকে। আবার দুই পক্ষের সমঝোতা না হলে, এই ভালবাসাই এক পাক্ষিক হয়ে যায়। এই এক পাক্ষিক ভালবাসা থেকে জন্ম নিয়ে থাকে কিছু অভিমান, কষ্ট এবং না পাওয়ার এক অমোঘ বেদনা। তবুও আমরা ভালবাসি। নানা রকম করেই আমরা ভালবাসি। সবাই নিজেদের মত করে ভালবাসে। কিন্তু আমি যেভাবে ভালবাসি, আমার পক্ষে উচিত নয় এই আশা করা যে, আমাকেও সে ঠিক তেমন করেই ভালবাসবে। হয়ত আমার এই আশা কখনও পূরণ হবেই না। মানুষের সব আশা কি পূরণ হয়? আশা যখন পূরণ হয় না, কিছু অপূর্ণতা যেখানে থেকেই যায়, সেখানে ভালবাসা দুই পক্ষ থেকেই একদম সমানে সমান হবে, সেটা আশা করা নিতান্তই অসমীচীন। এই আশা যত বাড়তে থাকে কষ্টের পাল্লাও বাড়তে থাকে।

 

আমার মনে যে জিনিসটা উঁকি দেয়, তা হল, এমনভাবে ভালবাসা উচিত যেন, আমার ভালবাসা কারও পায়ের বেড়ী না হয়ে যায়। ভালবাসা যেন কারও শ্বাসরুদ্ধ ভাবের জন্ম না দেয়। ভালবাসাও হওয়া উচিত মুক্ত আকাশে ওড়া ফড়িঙের মত। ফড়িঙের লেজে সুতা বেঁধে দিলে যেমন তার মৃত্যু অবধারিত, ঠিক তেমনি, ভালবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাশার পাল্লা যদি অসামঞ্জস্যভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে প্রত্যাশার দুর্বিসহ চাপে ভালবাসারও মৃত্যু হতে থাকে। অসহায় ফড়িঙ মারা যেতে যত সময় নেয়, ভালবাসার মৃত্যু হয় তার অনেক কম সময়ে। এজন্য নিজের জীবন থেকে আমি যে উপলব্ধি নিয়েছি তা হল, যে ভালবাসা একপাক্ষিক রুপ নেয়, সে ভালবাসার মানুষকে এমনভাবে ভালবাসা উচিত, যেন সেটা পায়ের বেড়ী না হয়ে যায়। এমন ক্ষেত্রে ভালবাসার মানুষটাকে ছাড় দিয়ে, দূর থেকে ভালবাসতে পারাই বেশী আনন্দের। কেউ যদি বুঝেই নেয়, তার ভালবাসাটা এক পাক্ষিক, তাহলে সেটাকে বেড়ী পরিয়ে না দেয়াই উচিত। ভালবাসার মানুষটা মুক্ত হয়ে আনন্দ নিয়ে ঘুরছে ফিরছে, সেটা দেখেও আনন্দ নেয়া উচিত বৈকি? নয়ত আর ভালবাসার মুক্তি কোথায়?   

 

মাঝে মাঝে মনে হয়, শৈশবে মেরে ফেলা সেই ফড়িঙ গুলোর অভিশাপ লাগলো না তো? উচ্ছ্বল ভাবে মুক্ত আকাশে উড়তে থাকা কতগুলো ফড়িঙের লেজে সুতা বেঁধে কষ্ট দিয়েছি, ওদের মৃত্যুর কারণ হয়েছি। কিছু না বলতে পেরে বোবা নিরীহ পতঙ্গগুলো মরে গেছে। মরার আগে আমাকে অভিশাপ দিয়ে গিয়েছিল কি? ওদের অভিশাপে কি আমি এখনও মুক্তি খুঁজে বেড়াই? কখনো গুনে শেষ করতে পারলাম না আমার পায়ে আর কতগুলো শৃঙ্খল লাগবে। কিছু ফড়িঙের মৃত্যুর সাথে সাথে ফড়িঙ শৈশবেরও সমাপ্তি ঘটে গেছে জীবন থেকে। শুরু হয়েছে অব্যক্ত অবগুন্ঠিত এক নতুন অধ্যায়ের। যে অধ্যায়ে মনের ভেতরে প্রশ্নের উদয় হয় ঠিকই কিন্তু উত্তর দেয়ার কেউ থাকে না। আমি যখন প্রশ্ন করতে থাকি, সমাজ তখন ডুবে থাকে এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্যের অন্তরালে।

Author's Notes/Comments: 

৪ এপ্রিল ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio