5 February 2014

 

আজ ফজরের নামাজে যেতে একটু দেরী হয়ে গেলো। মাসজিদে মুনকে সাথে নিয়ে গিয়ে দেখি জামাত শেষ হয়ে গেছে। আমরা পরে বারান্দায় জামাত করে নিলাম। মাশওয়ারা এর পরে মনে পড়লো যে আজকে হাল্কারও মাশওয়ারা আছে। গেলাম বায়তুল এহতেরাম মাসজিদে। বিশ্ব ইস্তেমা এর উপরে কিছু আলোচনা হল। এরপরে ৭:৪৫ এর দিকে আমাদের তারা দাওয়াত দিলো সকালের নাস্তা খাবার জন্য। দতলায় গিয়ে দেখি বিরিয়ানি! এই সাধ সকালে অন্তত বিরিয়ানি আসা করি নাই! আমরা খেয়ে বিদায় নিলাম।

 

বাসায় এসে দেখি নাইমা তখনও শুয়ে আছে। উত্তপ্ত অবস্থা। আমি শুতে গেলেই বলল, আমি যেন বেশী করে ঘুমাই। কাজ তো কিছু আর করা লাগবে না! আসলেই উত্তপ্ত অবস্থা। কালকের সেই ভাব-ভালোবাসা আপাতত বাটি চালান দিয়েও পাওয়া গেলো না। দুপুরের পর থেকে অবশ্য নাইমার মুড ভালই দেখলাম। দুপুরে রাসেল ভাই ফোন করে বললেন, TUV-SUD এর জন্য অন্য একটা brochure বানাতে হবে। নাইমা এটা শুনেও উত্তপ্ত হয়ে গেলো। ও বলল, আমাকে দিয়ে ফ্রি ফ্রি brochure বানায়ে নিচ্ছে অথচ ট্রেনিং এর তারিখ দিচ্ছে না। বললাম দিবে! চিন্তা কর না। রাসেন ভাই অবশ্য এটাও জানালো যে, ETP নিয়ে আমার বানান brochure টা অফিসে পাঠানো হয়েছে এবং ওটার উপরে কোর্স মডিউল ঠিক করা হচ্ছে। এদিকে আরো কিছু job application কাজ করতে হচ্ছে। সি ভি আপডেট করা সহ বেশ কিছু কাজ pending হয়ে আছে। মশা আমাকে এত বেশী করে কামড়ায় যে ধীর স্থির হয়ে আমি কোন কাজই ঠিকমত করে উঠতে পারি না। ভীষণ অসহ্য অবস্থা।

 

রাতে এশার নামাজ পড়তে যাবার আগে নাইমার সাথে কিছু তর্কাতর্কি হয়ে গেলো আর কিছু মজাও হল। নাইমা আমার লেখা ডায়রী পড়তে আগ্রহী। আমার তেমন আপত্তি নাই। কিন্তু ওর ডায়রী আমাকে পড়তে দিবে না। এই ব্যাপারে ভীষণ আপত্তি। যাই হোক, ও পড়া শুরু করলো আর যথারীতি আমার খাবার দাবারের অংশগুলা নিয়ে বাঁশ দেয়া শুরু করলো। এরপরে আমি মনে হয় খাল কেটে কুমির আনলাম। আমি বললাম, দেখ তোমার নাম তুমি ঈ দিয়ে লিখ কিন্তু আমি লিখেছি ই দিয়ে। এই শুনে নাইমা বলল, সে আমার লেখা আর পড়বে না, কারণ আমার লেখা ‘নাইমা’ টা নাকি ও না। এটা নাকি অন্য কেউ! (এই জাতীয় কথা আমাকে মাঝে মাঝেই শুনতে হয়!) আমি ওকে বললাম, আমার কাছে তুমি নাইমা’ই। নাঈমা না! সে নাকি আমার লেখা আর পড়বেই না। কিন্তু আমি জানি ঠিকই পড়বে। এক সময় খাটে বসে, বললাম, ‘নতুন বৌ এর মত করে আমার দিকে তাকাও তো!’ উত্তর দিল, ‘বুইড়া বেটার ঢং ভালো লাগে না’। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক! আমি বললাম, ঠিক আছে, প্রথমবার আমাকে দেখতে গিয়ে যেমন ভয় ভয় করে তাকায়ছিলে ঐভাবে তাকাও! এবারো খেপে গেলো! ও নাকি আমার দিকে মোটেও ভয় ভয় করে তাকায় নাই। আমাকে বলল, প্রথমবার আমি যেভাবে ওকে দেখেছিলাম ওইভাবে আমাকে তাকাতে। আমি হাসির চোটে কিছুই পারলাম না। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব না। এরপর নাইমাও হাসলো ওর সেই বিখ্যাত কোটি টাকার হাসি। নাইমা আকাকে আরো জানালো আমার লেখা নাকি খুবই formal way তে লেখা হচ্ছে। আর ও নিজে লিখছে informal way তে। আমি নাকি সাহিত্য করছি! আমি বললাম, চলুক না। যেভাবে চলছে চলুক। যা লিখলাম তা যদি কেউ নাই বা পড়ে তাহলে পরিণতিতে লিখে আর লাভ কি। পরে, নামাজে যাবার আগে বিদায় নিতে গেলাম (আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে), নাইমা বলল, ‘সরো! সরো আমার কাছ থেকে’। আমি পেয়ে গেলাম খোচা দেবার সুযোগ। বললাম, pregnant হবার পর থেকে তুমি আমাকে কোন কথাটা সবচাইতে বেশী বলছ সেটা কি জান? সেটা বুঝতে পেতে নাইমা আবার তার সেই কোটি টাকার হাসি দিল।

 

এশার নামাজে তালিমের পরে বিশ্ব ইস্তেমার উপরে মুজাকার হল। সবাই একটু একটু করে বলল। আমি মুহিতকে আগেই বলে রেখে ছিলাম। বেচারা তখনও বাসায় যাবার সুযোগ পায় নাই। ভার্সিটি থেকে এসেই দুইটা টিউশনি করছে পরপর এশার নামাজের আগ পর্যন্ত। আমি ওকে ফোনে বললাম আমাকদের মুজাকারার কথা। এশার নামাজ মুহিত আমাদের সাথে পড়ে এবং আমাদের মুজাকারা তে অংশ নেয়। আমি বললাম সবার শেষে। আমি আমার লেখার প্যাড নিয়ে গেছিলাম। ওখান থেকে শুধু বৃহস্পতিবার এর বয়ানগুলার কিছু কিছু অংশ বলার সুযোগ পেলাম। এরপরে বাসায় এসে আব্বু, আম্মু নাইমা আর আমি একসাথে ভাত খাই। আমি খাই ভাত আর মশা খায় আমাকে! কালকে সকাল ৮টা তে কোচিং এ ক্লাস নিতে যেতে হবে। এদিকে রাসেল ভাই আমাকে documents গুলা মেইল করেন নাই। কি করব বুঝতে পারছি না।


View shawon1982's Full Portfolio