শিরোনামটা দেখে অনেকেই বলতে পারেন, এইটা একটা লেখার বিষয় হল? মরা বিড়াল তো পথে ঘাটে দেখা যায়। এটাকে ব্লগে লেখার কি হল? কিন্তু আমি বলব এই ঘটনা আমার মনে গেঁথে আছে। অনেক কিছুই তো ভুলে গেলাম কিন্তু এই ঘটনাটা ঠিকই মনের অগোচরে রয়ে গিয়েছে। ভুলতে পারিনি। তাই মনে হল লিখি। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ঠিক কত বছর আগের সেটা আমার মনে নাই। যতদূর মনে পড়ে তখন আমি সম্ভবত কলেজে পড়ি।
একদিন আসরের আজানের পরে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম বাসা থেকে নেমে। আমাদের বাসার সামনে একটা কাচা বাজার আছে। বাজাদের পাশের রাস্তা দিয়ে মসজিদে যেতে হয়। বাজাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় নজর পড়লো একটা সাদা রঙের বিড়ালের উপরে। বিড়ালটার কোমর থেকে সম্পূর্ণ ভাঙ্গা ছিল। অর্থাৎ পিছনের দুই পা পিঠের উপর থেকে শরীরের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। শুধুমাত্র মাটির উপরে পড়ে ছিল। হয়ত কেউ বিড়ালটাকে মেরে তার কোমর এইভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে। প্রচন্ড খারাপ লাগলো বিড়ালটাকে দেখে। বিড়ালটা না খেতে পেরে দূর্বল হয়ে গেছে। মাটিতে ঘষটে ঘষটে চলতে চলতে পিছনের দুই পায়ে দগদগে ঘা হয়ে গেছে। বিড়ালটা দূর্বল আওয়াজে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কেউ নজর দিচ্ছে না। রাস্তা পার হয়ে ঐপাশে যেতে চাইছিল। কে জানে হয়ত ওইপাশে ওর ছানারা কোথাও রয়ে গেছে। মায়ের মন! হোক না সেটা বিড়াল। বিড়ালটা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল কিন্তু রিক্সা এত বেশি যাচ্ছিল যে রাস্তা পার হতে পারছিল না। আমার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। আমি বিড়ালটাকে হাতে করে তুলে নিয়ে রাস্তার ওপাশে নিয়ে গেলাম। এরপরে চলে গেলাম মসজিদে।
নামাজের মধ্যেও মনটা ভারী হয়ে গেল। চোখ দিয়ে পানি এসে যাচ্ছিলো বার বার। নামাজ শেষে মনপ্রাণ দিয়ে আল্লহ পাকের কাছে দোয়া করলাম যে, এই বিড়ালটাকে দেখার কেউ নাই। না খেয়ে এমনিতেও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। মরে যাবে তাও কেউ ওকে দেখবে না। আল্লহ তুমি সব কিছু সৃষ্টি করেছ। তুমিই মৃত্যুদাতা। তুমি বিড়ালটাকে আর কষ্ট দিও না। ওকে তুমি নিয়ে যাও।
মাসজিদ থেকে বের হয়ে এলাম। বাজারের কাছে রাস্তার উলটা দিকে বিড়ালটাকে দেখতে চাইলাম কোথায় আছে। দেখলাম, আল্লহ পাক আমার দোয়া শুনেছেন। আমি যেখানে রেখে এসেছিলাম ওখানে থেকে মাত্র কয়েক কদম দূরে বিড়ালটা মরে পড়ে আছে। হোক না একটা রাস্তার বিড়াল কিন্তু মন থেকে এই করুণ মৃত্যুর স্মৃতি আমি ভুলতে পারি নাই।